সাংবাদিকরা তো খবরের পেছনে ছুটবেইঃ হাইকোর্ট

0
491
জেলা জজকে স্ট্যান্ড রিলিজ কেন অবৈধ নয়ঃ হাইকোর্ট

খবর৭১ঃ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের আগেই গণমাধ্যমে কীভাবে প্রকাশ পেলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি তানভীরের মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানিতে বুধবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ প্রশ্ন উত্থাপন করেন।

আদালতে তানভীরের আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

একাত্তর দফা পেছানোর পর ৭২তম তারিখে সোমবার সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের পক্ষ থেকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তবে এই হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। ডিএনএ নমুনার মাধ্যমে তদন্ত যেভাবে এগিয়ে চলেছে, সোমবার সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে র‌্যাব তা তুলে ধরেছে।

এর আগে ২০১৫ সালের জুনে আদালতে দেওয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনে র‌্যাব জানিয়েছিল, ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামত যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পাঠিয়ে ফরেনসিক ও রাসায়নিক পরীক্ষায় দু’জন অজ্ঞাত পুরুষের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ বৃত্তান্ত পাওয়া গেছে।

বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাগর-রুনি হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপনের পর আদালত বলেন, ‘এ রিপোর্ট মিডিয়ায় কীভাবে গেল? হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, বা তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে এ রিপোর্ট ছুটেছে। কোর্টে উপস্থাপনের আগেই এভাবে মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশ পেলে জনমনে এক ধরনের পারসেপশন (ধারণা) তৈরি হয়।’

জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার বলেন, ‘আমিও সাংবাদিক ছিলাম— আমি কাউকে কোনও রিপোর্ট দেইনি। যে কারণে আমার সাংবাদিক বন্ধুরা আমাকে দেখতে পারেন না।’

তখন আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাজই হলো খবরের পেছনে ছোটা। তারা খবর সংগ্রহ করতে ছুটবেই। আমরা তো সাংবাদিকদের কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না।’ এসময় অমিত তালুকদার বলেন, ‘এভাবে রিপোর্ট প্রকাশ আদালত অবমাননার শামিল।’

জবাবে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকরা রিপোর্ট পেলেই ছাপাবে, এটাই স্বাভাবিক। যদি ওই রিপোর্টের সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনের মিল না থাকে, তখন তাদের (সাংবাদিকদের) দোষারোপ বা ধরার সুযোগ থাকে। রিপোর্ট আদালতে দাখিলের আগেই যে সাংবাদিকদের হাতে গেছে, এজন্য দোষ তো কাউকে না কাউকে স্বীকার করতেই হবে।’

এদিন আসামি তানভীর রহমানের রিট আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতে শুনানির এখতিয়ার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ প্রশ্ন তোলায় এ রিট আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

আদালত বলেছেন, ‘যেহেতু এই মামলার শুনানির এখতিয়ার নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ প্রশ্ন উপস্থাপন করেছে, তাই আমার এই মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়ার আদেশ দিচ্ছি।’

গত বছরের ১৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ৪ মার্চ বা তার আগে এ মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা এবং অপরাধের সঙ্গে তানভীরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রতিবেদন হলফনামাসহ দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এদিকে ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারের পর জামিনে থাকা মো. তানভীর রহমান তার বিরুদ্ধে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার র‌্যাব মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। পরদিন সকালে সেখান থেকে পুলিশ তাদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে। ওই দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন।

কিন্তু তারপর দীর্ঘ আট বছর পেরোলেও নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সেই তিমিরেই রয়েছে। খুনিরা রয়েছে অধরা। যদিও পাল্টেছে মামলার তদন্ত সংস্থা। হত্যার মোটিভ কিংবা খুনিদের আদৌ গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে কিনা, সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের বছরের ২৬ এপ্রিল হত্যার ৭৫ দিন পর কবর থেকে লাশ তুলে ভিসেরা পরীক্ষা করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টের মাধ্যমে র‌্যাব শনাক্ত করতে চেয়েছিল, সাগর-রুনিকে হত্যার আগে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কিনা। তবে লাশ পচন ধরায় সে প্রতিবেদনে এমন আলামত পাওয়া যায়নি। থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) তদন্তের ব্যর্থতার পর আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে র‌্যাব বনানী থানার একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুণ, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। এ ছাড়া ওই মামলায় বিভিন্ন সময়ে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও দারোয়ান এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যায় ব্যবহূত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগর-রুনির পরনের কাপড় ও সাগরের হাত-পা বাঁধা কাপড় ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। হত্যায় সন্দেহভাজন কয়েক ব্যক্তির ডিএনএ নমুনাও বিদেশি ল্যাবে পাঠানো হয়। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন তদন্ত সংস্থার হাতে এসেছে। তবে তা দিয়ে আসামি শনাক্তের জন্য কার্যকর ক্লু মেলেনি। আদালতে জমা দেওয়া প্রতিটি প্রতিবেদনে শুধু ‘গুরুত্বসহ তদন্ত চলছে’ বলেই উল্লেখ করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here