খবর ৭১ঃতৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য ৬ হাজার ৩৬০ টাকা সর্বনিম্ন মজুরি কাঠামো নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোমবার ন্যূনতম মজুরি কমিশনের তৃতীয় বৈঠকে যোগ দিয়ে মালিকদের পক্ষে এ প্রস্তাব দেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন ‘বিজিএমইএ’ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান।
বিজিএমইএ’র প্রস্তাবিত এই মজুরি কাঠামো বর্তমান সর্বনিম্ন মজুরি থেকে ১ হাজার ৬০ টাকা বেশি। অপরদিকে একই দিনে শ্রমিক সংগঠনগুলোর মনোনীত প্রতিনিধি শামসুন্নাহার ভূঁইয়াও ন্যূনতম মজুরি কমিশনের কাছে শ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার ২০ টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন। এটা বর্তমান সর্বনিম্ন মজুরি থেকে ৬ হাজার ৭২০ টাকা বেশি।
ন্যূনতম মজুরি কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলামের কাছে ভিন্ন ভিন্নভাবে এই প্রস্তাব রেখে উভয়পক্ষের প্রতিনিধিই দাবি করে বলেন, শ্রমিকদের জীবনযাপন ব্যয়, মান, উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ্য ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক বিষয় বিবেচনা করে নতুন এ মজুরি কাঠামো নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মজুরি কাঠামোর প্রস্তাব গ্রহণ উপলক্ষে ন্যূনতম মজুরি কমিশনের আয়োজিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।
এতে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের অস্থায়ী দুই প্রতিনিধি ছাড়াও মালিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি এমপ্লায়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিক পক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, নিরপেক্ষ প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন উপস্থি’ত ছিলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কমিশন কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, ১৪ জানুয়ারি তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে ন্যূনতম মজুরি কমিশন গঠন করে সরকার।
নিয়ম অনুযায়ী কমিশন গঠন হওয়ার পর তৃতীয় বৈঠকের মধ্যে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মনোনীতি প্রতিনিধিদের মজুরি প্রস্তাব দেয়া বাধ্যতামূলক। এ প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করেই নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে কমিশনের পরবর্তী অগ্রবর্তীমূলক কার্যক্রম শুরু হয়।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার এক মাস পর ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। সে অনুযায়ী এন্ট্রি লেভেলে একজন শ্রমিক নিম্নতম ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। এর অতিরিক্ত বছরে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন শ্রমিকরা।
এদিকে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মনোনীতি প্রতিনিধিদের প্রস্তাব পেয়ে মজুরি কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই প্রস্তাবনা বিবেচনা করে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো প্রকাশ করা হবে। তবে এর জন্য ফ্যাক্টরি ভিজিটসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের কাছ থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রস্তাব দিয়ে ব্রিফিংয়ে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মজুরি বোর্ডের তৃতীয় সভার মধ্যে মজুরির প্রস্তাব জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। এই সময়সীমার মধ্যেই প্রস্তাব জমা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়েই মজুরি প্রস্তাব করেছেন তারা। শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, পোশাক খাত এবং দেশের সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে ১২ হাজার ২০ টাকা ন্যূনতম মুজরি প্রস্তাব করেছেন তারা।
আর কমিশনে মনোনীতি শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ও শ্রমিক নেত্রী শামছুন্নাহার ভূঁইয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রস্তাবে মূল মজুরি ৭ হাজার ৫০ টাকার কথা বলেছেন তারা। তিনি বলেন, অনেক সংগঠন ন্যূনতম মজুরি হিসেবে ১৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছেন। কেউ কেউ ১৮ হাজার টাকার কথাও বলেছেন।
তবে তিনি চান না এমন কোনো মজুরি নির্ধারণ করা হোক, যাতে মালিকদের সক্ষমতার বাইরে চলে যায়। কারণ সব কারখানার সক্ষমতা সমান নয়। মাত্র ৩০ শতাংশ কারখানা বড়, এসব কারখানা বেশি মজুরি দিতে সক্ষম। বাকিগুলো মাঝারি ও ছোট।
অস্বাভাবিক মজুরি নির্ধারণ করা হলে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে নতুন করে শ্রমিক বেকার হবে। এমনিতেই কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। সেজন্য আমরা চাই না কোনো অনভিজ্ঞ লোক চাকরিহারা হোক। বেকারত্বের সংখ্যা দেশে বৃদ্ধি পাক।
সার্বিক দিক বিবেচনা করেই কমিশনের কাছে ১২ হাজার ২০ টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, মজুরি কমিশন আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে।
তিনি কমিশনে মালিক পক্ষের দেয়া প্রস্তাব প্রসঙ্গে বলেন, তারা (বিজিএমইএ) যে মজুরি প্রস্তাব করেছে, তা দিয়ে কোনোভাবেই একজন শ্রমিক স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে পারে না।
আমরা আশা করি, একজন শ্রমিকের জীবনধারণের খরচ, ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ, খাদ্য ও পুষ্টি সব বিষয় বিবেচনা করে আমাদের প্রস্তাব মেনে নেয়া হবে।