সরকারি গুচ্ছ গ্রামই যেন একমাত্র ভরসা ওদের…

0
253

বিশ্বনাথ দাস: পৃথিবীতে অবস্থানরত সকল জীবের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। একটি মানুষের মধ্যে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বুঝার ক্ষমতা রয়েছে। মানুষই পারে তার মেধার বিকাশ ঘটিয়ে নিজেকে সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে। যা অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। কেউ কেউ কঠোর পরিশ্রম করে গাছ তলা থেকে চলে যাচ্ছে পাঁচ তালায়। আবার কেউ গাছ তলা থেকে চলে যাচ্ছে শিকড়ে। সমাজে বসবাস রত এখনও যারা নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেনি। সংসারের অভাব অনটন কাটিয়ে উঠতে পারেনি। থাকার মত একটা বসতবাড়িও গড়ে তুলতে পারেনি। এমন সব হতদরিদ্র মানুষদের জন্যই সরকার চালু করেছেন আশ্রয়ণ প্রকল্প।
১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পাশর্^বর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হওয়ার ফলে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তদানীন্তন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ এলাকা পরিদর্শনে যান। সেখানে মানুষের দুঃখ, দুুর্দশা দেখে তিনি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এবং সকল গৃহহীন পরিবার সমূহকে পুনর্বাসনের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। তারই পরি প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে চারঘাট উপজেলার হলদাগাছী (গুচ্ছগ্রাম) এলাকায় পূনর্বাসন প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে ২৪০ টি আধা পাকা টিন সেডের ঘর উঠানো হয়েছে। সেগুলোর এখন সুফল পাচ্ছেন সমাজের গরীব-দুঃখী, গৃহহীন মানুষগুলো। যাদের মাথা গুজার কোনা ঠাঁই ছিল না ইতোপূর্বে। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে তারা এখন মাথা গোজার মত স্থায়ী একটা ঘর পেয়েছে।
হলিদাগাছী গ্রামের রফিক আলী বলছিলেন, তিনবেলা ঠিক মতো আহার না জুটলেও শান্তিতে রাত্রি যাপন করতে পারছেন এখন তারা। এখন আর শীতের ঠান্ডা হাওয়ায় কাঁপতে হয়না তাদের। নিজের বাড়িতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারছেন তারা। রফিক আলীর মত জয়নাল আবেদীনও জানান তার অব্যক্ত মনের কথা। তিনি বলেন আমার নিজস্ব কোনো জমি ছিল না। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মাত্র আধা শতক জমিতে একটি ঘর রয়েছে আমার। সে ঘরের মধ্যে বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকা খুব কষ্টকর ছিল। অন্য আরেক জায়গায় গিয়ে জমি কিনে বাড়ি করার মত সামর্থও ছিল না। অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে সংসার চলে আমার। যা উপার্জন হয় তাতে কোনো রকম দিন চলে যায়। ছেলে মেয়েদেরও ঠিকমত পড়াশোনার খরচ চালাতে পারি না। কখনো ঘরের মেঝেতে কখনো আবার বাহিরে বারান্দায় শুয়ে থেকে দিন কাটাতে হতো। তবে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর পাওয়ায় বর্তমানে নিরাপদে বসবাস করতে পারছি। এখন আর আগের মত কষ্ট সহ্য করতে হয় না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে একজায়গায় থাকতে পারছি। তাছাড়া অর্থনৈতিক ভাবেও উন্নতি হয়েছে আমার। মহল্লায় এখন একটি মুদিখানার দোকানও রয়েছে আমার। এখন ছেলেকে ঠিক ভাবে পড়াশোনা করাতে পারছি। নিজের কাছেও খুব ভালো লাগছে।
শুধু জয়নাল আবেদীন নন তাঁর মত অনেকেই এখন সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারছেন। উজ¦ল আলী, দিলরুবা বেগম, সোহাগী বেগমরা হত দরিদ্র গৃহহীন মানুষ ছিলেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর পেয়ে এখন নিরাপদে বসবাস করছে তারা সবাই। শুধু তাই নয় ঘরের আশেপাশে ফাঁকা জায়গা গুলোতে বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষ করে তারা টাকা উর্পাজন করতে পারছে। সেই টাকা দিয়ে তারা ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছে। নিজেদের চাহিদাগুলো মিটাতে সক্ষম হচ্ছে।
শুধু ঘর নির্মাণই নয় সেই সাথে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুবিধাভোগী প্রত্যেক পরিবার থেকে অন্তত দু’জন সদস্যকে ৭ দিনের উপার্জনমূলক কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, নার্সারী, হস্তশিল্প, সেলাই, পোশাক শিল্প বা দর্জির কাজের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত সুবিধাভোগিরা আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন। যেসব ভিক্ষুক এই প্রকল্পের সহায়তা পেয়েছেন তারা এখন নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে নিজেদের সম্মানজনক পেশায় প্রতিষ্ঠিত করছেন। তাইতো অসহায় মানুষজনও এখন খুঁজে পেয়েছে তাদের একটি আশ্রয় একটি ঠিকানা। একই সাথে সরকারের এই প্রকল্পটি জ্যামিতিক হারে সাড়াও ফেলেছে সবার মাঝে। এগিয়ে যাক আশ্রয়ণ প্রকল্প। এগিয়ে যাক সমাজের অসহায় মানুষগুলোও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here