সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারনায় মুখোরিত নওগাঁ-৬ আসন

0
197

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের গণসংযোগ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারনায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে এ আসনের জনপদ। মোটর সাইকেল শো-ডাউন, সভা সমাবেশ, গণসংযোগ, পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে প্রত্যন্ত গ্রামের অভিমানী ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে কুশলাদি বিনিময়, অসুস্থদের সাথে সাক্ষাৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে এই আসনে রাজনীতিতে ততই নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। এ দুটি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন মোট ভোটার ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৭ জন।

এক সময় বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত এ আসন ২০০৮ সালে ভোট যুদ্ধে, দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। জেএমবি’র অপতৎপরতা দমনের পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়নের দাবি করে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। আর আসনটি ফিরে পেতে নতুন আমেজে ভোটারদের কাছে যাচ্ছে বিএনপি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এ আসনটি দখলে রাখে বিএনপি।

এই আসনে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অপর দিকে বিএনপির ২ জন। এছাড়াও জাতীয় পার্টি ও অন্য কোন দল থেকে কোন প্রার্থী অংশ গ্রহণ করবে কি না তা এখনো দেওয়া যায়নি।

এ নির্বাচনী এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে গণসংযোগ করছেন, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম, রাণীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো: আনোয়ার হোসেন হেলাল, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নওশের আলী, নওগাঁ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ওমর ফারুক সুমন, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র উপদেষ্টা, রাণীনগর উপজেলার ৫নং বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রহমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক শেখ মো: রফিকুল ইসলাম।

এ ছাড়াও ধানের শীষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আনোয়ার হোসেন বুলু, কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো: এচাহক আলী। এছাড়াও বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো: আলমগীর কবিরকেও মাঠে দেখা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার রোল মডেল। তাই বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নেই। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুতায়ন, রাস্তা-ঘাট ও ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেশের উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দলের হাইকমান্ড যোগ্য মনে করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এ আসনে যাকে দলীয় মনোনয়ন দিবেন সর্বস্তরের নেতা কর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন। এ নির্বাচনী এলাকার নেতা কর্মীর মধ্যে পছন্দের প্রার্থী নিয়ে মতভেদ থাকলেও নৌকা প্রতিক নিয়ে কারো কোন বিরোধ নেই। এ নির্বাচনকে ঘিরে গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার ও পাড়া মহল্লায় আওয়ামী লীগের কোন না কোন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রতিদিনিই প্রায় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে নৌকা প্রতিকের ভোট চেয়ে সরকারের উন্নয়নের বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর সেই সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মটরসাইকেল শো-ডাউন অব্যাহত রেখেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলেন, দলের হাইকমান্ড যোগ্য মনে করে এ আসনে যাকে দলীয় মনোনয়ন দিবেন সর্বস্তরের নেতা কর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন। তবে যদি সুষ্ঠ অবাধ নির্বাচন হয় তাহলে এ আসনটিতে আবার বিএনপির জয়লাভ করবেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এলাকার সাধারণ তরুণ ও নতুন ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবা পেতে তারা বিশ্বাসী। যারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও সকল বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবেন এলাকার উন্নয়ন করবেন ও যাকে তাড়া যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করবেন তাদেরকেই তারা ভোট দিবেন।

উল্লেখ্য, নওগাঁ-৬ আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালে পর্যন্ত বিএনপি’র দখলে ছিলো। ৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে মরহুম চৌধুরী মোতাহার হোসেন এমপি নির্বাচিত হন। ৮৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান (স্বতন্ত্র) এমপি নির্বাচিত হন। ৮৮ সালে জাতীয় পার্টির রেজাউল ইসলাম বা রেজা মোল্লা এমপি নির্বাচিত হন। ৯১-২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপি’র সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: ইসরাফিল আলম এমপি নির্বাচিত হন। প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বিএনপি থেকে এলডিপিতে যোগ দেয়ায় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে মো: ইসরাফিল আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন।#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here