সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের রায় ঘোষণা করতে চলেছে ভারত

0
378

খবর৭১ঃ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারত। গতবার রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসসহ ২১টি বিরোধী দলের সঙ্গে কড়া চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরতে উন্মুখ তারা। বুথফেরত জরিপে বিজেপির সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হওয়ার আভাস মিললেও ভারতে এই ধারার জরিপের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হওয়ার বহু নজির রয়েছে। বিরোধীরা তাই ফল প্রত্যাখ্যান করে জোট গঠনের তৎপরতা চলমান রেখেছে বুথফেরত জরিপকে অজুহাত বানিয়ে বিজেপি ফল প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে তারা। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবারের নির্বাচনে। তাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধির ক্ষেত্রে বিজেপিকে ছাড় দেওয়া ছাড়াও নানা অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এমন এক বাস্তবতায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোট গণনা শুরু হয়েছে।

সাত দফায় অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে ১৯ মে। আগামী ২৩ মে ঘোষণা করা হবে ফল। ১৪টি বুথফেরত জরিপের মধ্যে ১২টি-ই আভাস দিয়েছে আবারও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। জরিপগুলোতে ওই জোটের ২৮২ থেকে ৩৬৫টি আসন পাওয়ার আভাস মিলেছে। ‌তবে বুথফেরত জরিপকে বিজেপিপন্থী স্টাবলিশেমেন্টের কারসাজি হিসেবে দেখছে বিরোধীরা। তাদের কেউ কেউ দাবি করেছে, ইভিএম কারসাজির মধ্য দিয়ে ফল বদলে দিতে পারে ক্ষমতাসীনরা। সেই ফল জায়েজ করতে এই জরিপকে উদাহরণ হিসেবে হাজির করতে পারে তারা।

বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র বা ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব বিরোধী দলগুলি। ইভিএম বাতিল করে ব্যালটে ফেরার দাবি তো অনেক দিন ধরেই উঠছিল। সে দাবি নির্বাচন কমিশন বার বারই নস্যাৎ করেছে। ইভিএম যে হ্যাক করা যায় না,সে কথাও বার বার কমিশন বোঝানোর চেষ্টা করেছে। ‘হ্যাকাথন’ কর্মসূচির বন্দোবস্ত করে কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ইভিএম হ্যাক করে দেখানোর চ্যালেঞ্জও ছুড়েছে। সেই চ্যালেঞ্জে নির্বাচন কমিশনকে টেক্কা দেওয়া যায়নি ঠিকই। কিন্তু ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা নিয়ে অভিযোগ এবং বিতর্ক থামেনি।

ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার আগে থেকেই এ বার বিভিন্ন বিরোধী দল দাবি করছিল, ইভিএমে কোনও প্রার্থীর ভোটপ্রাপ্তির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে ভিভিপ্যাট স্লিপে ভোটপ্রাপ্তির হিসেবও। সব বুথেই এই পদ্ধতি অবলম্বনের দাবি তোলা হয়েছিল প্রথমে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন রাজি হয়নি। প্রত্যেক বিধানসভা কেন্দ্রে ৫টি করে বুথের ভিভিপ্যাট স্লিপ এবং ইভিএম মিলিয়ে দেখা হবে— কমিশন এই সিদ্ধান্তই নেয়। কমিশনের সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জে করেছিল বিরোধীরা। অন্তত ৫০ শতাংশ বুথে ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট স্লিপ মেলাতে হবে, এই দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালতও সে দাবি মানেনি। নির্বাচন কমিশনের উপরেই আস্থা রাখে সুপ্রিম কোর্ট।

বিতর্ক তাতেও শেষ হয়নি। ভোট মেটার পরে নতুন অভিযোগ সামনে এসেছে। ইভিএম বদলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যে সব ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলে স্ট্রং রুমে অন্য ইভিএম ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে কংগ্রেস, তৃণমূল, তেলুগু দেশম, এসপি, বিএসপি, ডিএমকে, পিডিপি-সহ বিভিন্ন দলের দাবি। কমিশনের মদতেই বিজেপি এমনটা করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে বিরোধী দলগুলি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছে।

বিজেপি-ও কিন্তু শেষ মুহূর্তে পাল্টা আক্রমণের স্বর তীব্র করেছে। বিরোধীরা হারের আভাস পেয়েই ইভিএম নিয়ে নানা সংশয় প্রকাশ করছে বলে বিজেপির দাবি। নিজেদের হতাশা ঢাকতে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকে বিরোধীরা বিরাট প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে— বলছেন বিজেপি নেতারা।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার শুরুর পর থেকে ফল ঘোষণার দিন মোটামুটি দুপুরের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় ভারতের নির্বাচনের ফলাফল। তবে

এবার ফল জানতে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। বিরোধীদের দাবির মুখে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইভিএম-এর সঙ্গে সংযুক্ত ভিভিপিএটি যন্ত্রে পাওয়া ভোটের স্লিপগুলোর একাংশও মিলিয়ে দেখা হবে। সেই কাজটি করতে গিয়ে সব আসনের ফল ঘোষণা করতে বৃহস্পতিবার রাত গড়িয়ে ভোর হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here