সন্ত্রাস দমনে এবার পাকিস্তানের সঙ্গী রাশিয়া

0
342

খবর৭১:সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানের। এরইমধ্যে দেশটিতে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে সন্ত্রাস দমনে এই অঞ্চলে এখন গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে ‘পাকিস্তান-রাশিয়া’ সম্পর্ক।

২০০৩ সালে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের রাশিয়া সফরকালে উভয় পক্ষই সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানায় ও এর মোকাবেলার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার বলে উভয়েই একমত হয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য উভয় পক্ষই গঠনমূলক সহযোগিতার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সন্ত্রাস দমন বিষয়ে পাকিস্তান-রাশিয়া যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক হয় ২০০২ সালে মস্কোতে। চলতি বছরের বসন্তে ইসলামাবাদে আবার বৈঠকে বসবে গ্রুপ। পাকিস্তানের জন্য এই ফোরাম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আফগানিস্তান বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জামির কাবুলভ রোশিয়া সেগোদনিয়া এজেন্সিকে দেয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘রাশিয়া-পাকিস্তান সহযোগিতার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সন্ত্রাস দমন। এই বিষয়ে দুই দেশের বিশেষ সার্ভিসের মধ্যে ঘনিষ্ট বিনিময় হয়ে থাকে।’

একই সাথে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব তাসিনম আসলাম এবং রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগর মোর্গুলভের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক এক বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় অঙ্গীকারের জন্য পাকিস্তানকে সাধুবাদ জানায় রাশিয়া। পাকিস্তানের প্রচেষ্টাকে আরো সংহত ও সমর্থন দেয়ার ব্যাপারেও রাশিয়া আগ্রহ ব্যক্ত করে।

সন্ত্রাস দমনে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়টি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক বৈঠক এবং একে অন্যকে সাধুবাদ জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই বিষয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুইবার সন্ত্রাস দমনে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে দুই দেশ। ভবিষ্যতেও এ ধরনের মহড়া চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ রয়েছে তাদের। সন্ত্রাস মোকাবেলায় পাকিস্তানের কাছে রাশিয়া চারটি এমআই-৩৫ পরিবহন-কাম-অ্যাটাক হেলিকপ্টারও বিক্রি করেছে।

কাবুলভের মতে, রাশিয়া বিশ্বাস করে পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমন সক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারলে তা সমস্ত আঞ্চলিক দেশগুলোর জন্যই উপকারী হবে। সন্ত্রাসবাদ দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রধান সমস্যা। সমস্ত আঞ্চলিক দেশগুলোই কোন না কোনভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মুখোমুখি হয়েছে।

এই সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতা একটি প্রধান বাধা। এর সাথে এ অঞ্চলে দায়েশের আবির্ভাব পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। এ বিষয়ে পাকিস্তান ও রাশিয়া একজোট হয়ে এই আঞ্চলিক হুমকি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তাহীনতা দুই দেশের জন্যই উদ্বেগের বিষয়। রাশিয়ার ভয় হলো আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতার কারণে সন্ত্রাসবাদ এবং মাদক পাচারের বিষয়টি মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশ করতে পারে। আর পাকিস্তান বিশ্বাস করে অস্থিতিশীল আফগানিস্তান তাদের সন্ত্রাস-দমন প্রচেষ্টার জন্য ক্ষতিকর। তাই, আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টা সন্ত্রাসবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

যৌথ আঞ্চলিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবেলার জন্য যে সাংহাই কোঅপারেশান অর্গানাইজেশান রয়েছে, সেখানে পাকিস্তানের স্থায়ী সদস্যপদ লাভের কারণে সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান-রাশিয়ার সহযোগিতা আরও জোরদার হবে।

সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান ও রাশিয়ার যে সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা সেটা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা স্থাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ সহযোগিতাকে শক্তিশালী করার জন্য আরও অনেক কিছু করতে হবে। পাকিস্তান যাতে আরও দক্ষতার সাথে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে পারে, তাই তাদের কাছে সামরিক সরঞ্জামাদি বিক্রি আরও বাড়ানো দরকার। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের রাস্তাগুলো কার্যকরভাবে বন্ধ করতে না পারলে সন্ত্রাসবাদ সফলভাবে দমন করা যাবে না। তাই, আঞ্চলিক ক্ষেত্রে মান্ডি লন্ডারিং, মাদক পাচার এবং সন্ত্রাসবাদ অর্থায়নের পথগুলো বন্ধের জন্য দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here