সংবাদ প্রকাশের পর মাটি কর্তন বন্ধ, তালায় কপোতাক্ষ নদের ভেড়িবাঁধের মাটি যাচ্ছে ইটের ভাটায়

0
327

সেলিম হায়দার, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: কপোতাক্ষ নদের ভেড়িবাঁধের মাটি কর্তন নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে প্রশাসনের। ইটের ভাটার অবৈধ মাটি কর্তনের কাজ চলছিল জোরে-শোরে। কিন্তু প্রশাসনের নজরে আসায় বুধবার বেলা ১১ টার দিকে মাটি কর্তনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্ততি নিচ্ছে স্থানীয় তহশীলদার।
তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের তহশীলদার আবুল হাসনাত জানান, কপোতাক্ষ নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ভেড়িবাঁধের মাটি কর্তন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এঘটনায় মামলার প্রস্ততি চলছে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারী) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৫-২০ জন শ্রমিক ভেড়িবাঁধের মাটি কর্তনের কাজ করছে। কেউ ভ্যানে, কেউ ঝুঁড়িতে করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে ভাটায়। স্থানীয় লোকজনের ক্ষোভ থাকলেও ভাটামালিকদের অত্যাচারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। তবে তাৎক্ষনিকভাবে মোবাইল ফোনে বিষয়টি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। এর এক ঘন্টার মধ্যে খলিলনগর ইউনিয়নের তহশীলদার সরেজমিনে গিয়ে তাদের মাটি কর্তনের কাজ বন্ধ করে দেন।

গোনালী গ্রামের চায়না বিশ্বাস জানান, তারা ঝাঁটা-জুতা নিয়ে মিছিল করেও লাভ হয়নি। টাকার কাছে সব হেরে যায়। ‘আপনারা দেখেন যে ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, তা সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধ ধসে পড়বে। ডুবে যাবে এলাকা।’

তিনি বলেন,‘এখানে আমরা ধান চাষ করতাম, বন্যার সময় ভেড়িবাঁধে বসবাস করেছিলাম। সেই ভেড়িবাঁধের জায়গা কেটে পুকুর করে ইট ভাটার কাজে লাগানো হচ্ছে। এতে তাদের এলাকা হুমকির মুখে বলে জানান তিনি।’

গত ৮/১০ দিন ধরে তালা উপজেলার গোনালী এলাকায় অবস্থিত আরবিএস ইটের ভাটা কপোতাক্ষ নদের ভেড়িবাঁধ থেকে মাটি কেটে ইট ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এজন্য বাঁধের পাশেই পুকুর কেটেছে ভাটা মালিকরা। ফলে বর্ষা মৌসুমে ভেড়িবাঁধ ধসে বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংক্কা করছে এলাকাবাসি। অথচও ওই বাঁধের ওপর কোনো ধরনের কার্যক্রম করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের আদেশ থাকলেও ভেড়িবাঁধের পাশে থেকে মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে আরবিএস ইট ভাটা মালিক।
তালা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে গোনালী আরবিএস ইট ভাটা। ভাটার সীমানা গোনালী খেয়াঘাট সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধের পাশে থেকে এ মাটি কাটা হচ্ছে। গোনালী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ২০১১ সালে এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। প্রায় ছয়-সাত মাস কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে বিভিন্ন এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করে। চলতি বছর ওই এলাকার আরবিএস ইট ভাটার জন্য ভেড়িবাঁধের পাশে থেকে মাটি কাটছে। এজন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মূখে রয়েছে।
আরবিএস ভাটার ম্যানেজার ইকবাল হোসেন জানান, মাটি কাটার কোনো অনুমোদন নেই। প্রতিবছর মাটি কাটি তাই এ বছরও কাটছি। কোনো অনুমোদন নেওয়া নেই। তবে লিখে লাভ হবে না। সবার সাথে কথা বলা আছে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন বলেন, কপোতাক্ষ নদের বাঁধ থেকে মাটি কাটা অন্যায় । কেউ মাটি কাটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহ প্রকৌশলী প্রবীর গোস্বামী জানান, পত্রিকায় দেখে সেখানে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। মাটি কাটার বিষয়ে সঠিক প্রমান হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here