সংকট সমাধানে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয়ে শেষ হল ওআইসি সম্মেলন

0
496

খবর ৭১: বিশ্বব্যাপী মানবিক সংকট সমাধানে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হল ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ৪৫তম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত শনিবার ও আজ রোববার (৫ ও ৬ মে) সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। আগামীতে ভারতকে ওআইসির পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখতে সম্মেলনে প্রস্তাব রেখেছে বাংলাদেশ।

সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী মানবিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংকট দূর করতে এবং এই খাতগুলোর উন্নয়নে কমপক্ষে ১২০টি প্রস্তাব পাস করা হয়। যার মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট, প্যালেস্টাইন ইস্যু, সিরিয়া পরিস্থিতি, ওআইসির সংস্কার, নারী ও যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রোববার এক বার্তায় জানান হয়, সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৪টি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে- আঞ্চলিক উন্নয়নে আরও সংযোগ বাড়ানো, টেসকই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম খাতের উন্নয়ন, ওআইসির সংস্কার (তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওআইসি চেয়ার সৃষ্টি করা।

ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নে ইসলামিক মূল্যবোধ।’ সম্মেলনে ৫৮টি দেশের ছয় শ প্রতিনিধি অংশ নেয়। যার মধ্যে ছিল মন্ত্রী পর্যায়ের ২২ জন, প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের ১৩ জন, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ৬ জন এবং রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের ১৬ জন।

এ ছাড়া এবারের সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড অংশ নেন।

ঢাকায় এসেই ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের একাধিক শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা সরেজমিনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে এই সংকট সমাধানে জাতিসংঘকে আরও জোরাল ভূমিকা রাখার আবেদন জানান।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার (৫ মে) রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলেন। এ ছাড়া এই সংকট সমাধানে মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে বিশ্ববাসীর কাছে আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে ৫টি সুনির্দিষ্ট বিষয় প্রস্তাব করেন। এগুলো হচ্ছে- ইসলামের মূল বিশ্বাসের ওপর আস্থা রাখা। শান্তিপূর্ণভাবে দেশে দেশে চলমান সংঘর্ষের অবসান ঘটান। আলোকিত জীবন-যাপনে, স্বীয় চেতনাবোধ জাগিয়ে তোলা। দারিদ্রতা এবং মানবিক সংকট দূর করতে উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে জাগিয়ে তোলা, যাতে শান্তি, ন্যায়বিচার ও সমতা নিশ্চিত করা যায়।

সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহীতার আওতায় আনতে একটি মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি গঠনের প্রস্তাব পাস করা হয়। এ ছাড়াও সম্মেলনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রায় ৪০টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলন শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন সফলভাবে শেষ হয়েছে। এর আগে ওআইসির সম্মলন গুলোতে একই সঙ্গে এতো দেশ অংশগ্রহণ করেনি। কারণ, এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সম্পর্ক টানেপোড়েন থাকায় তখন সেটি হয়নি। যা বংলাদেশের বেলায় সম্ভব হয়েছে।

শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, বাংলাদেশে এ সম্মেলন হওয়াটা আমাদের জন্য বড় অর্জন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসির সংস্কারে তুরস্কের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। এতে তুরস্ক নেতৃত্ব দেবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামীতে ভারতকে ওআইসির পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখতে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। যেহেতু ওআইসি এখন শুধু মুসলিম দেশগুলোর মধ্যই আবদ্ধ নয়। ওআইসি এখন মুসলিম বিশ্বের সহযোগী হয়ে কাজ করছে। মুসলিম দেশের থেকেও বেশি সংখ্যক মুসলমান ভারত, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে বসবাস করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here