শেরপুরে স্বামী-দেবরের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে গৃহবধূ

0
351

আবু হানিফ, শেরপুর প্রতিনিধি, খবর ৭১:

শেরপুরের শ্রীবরদীতে যৌতুক নির্যাতনের ঘটনায় স্বামী-দেবরসহ পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন লায়লা আরজুমান শান্তি নামে এক গৃহবধূ (৩২)। ১৩ জুন বৃহস্পতিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার ধার্য তারিখেও প্রতিবেদন দাখিল না করে সময় প্রার্থনা করেছে অধিকতর তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই। একই দিন তদন্তে অসহায়তা ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে বাদীপক্ষ পিবিআই থেকে তদন্ত পরিবর্তনের আবেদন জানালে আগামী ৩০ জুন তা শুনানীর তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান। সেইসাথে একইদিন মামলার পরবর্তী তারিখসহ তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির জন্য রাখা হয়।

ওই চাঞ্চল্যকর মামলার প্রধান আসামী নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী রফিকুল ইসলাম (৩৫) নেত্রকোণার কলমাকান্দা থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল। আর সহযোগী আসামী ২ দেবর জামালপুরের ইসলামপুর থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল হামিদুল ইসলাম (৩০) ও শেরপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাইট গার্ড আমিনুল ইসলাম (৩৩)।

এদিকে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় থানা, কোর্ট-কাচারি ও পিবিআইসহ নানা জায়গায় একমাত্র সন্তান রওনক আহমেদ শ্রাবণ (১১) কে নিয়ে দীর্ঘ ৫ মাসের অধিক সময় ধরে ঘুরে হতাশ হওয়ার পাশাপাশি ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন সেই গৃহবধূ।

১৩ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের আদালত অঙ্গনে অনেকটা বিপর্যস্ত অবস্থায় কথা হয় ওই গৃহবধূর সাথে। ওইসময় তিনি আবেগতাড়িত হয়ে জানান, মামলার পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীবরদী থানার এসআই আব্দুল মোতালেবের দেওয়া পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনাল গত ১৫ এপ্রিল নারাজীমূলে প্রত্যাখান করে জামালপুরের পিবিআইকে অধিকতর তদন্তপূর্বক পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দেন। ওই আদেশ সমেত মামলাটি সেখানে যাওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান সাথে কয়েকজন সাক্ষী নিয়ে সাক্ষাত করেন। বিষয়টি পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রাণী সরকারকেও অবহিত করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তার মনোভাব পজেটিভ মনে হলেও এখন তিনিও আগের কর্মকর্তার মতই আচরণ করছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী সাথে থাকা পুত্র শ্রাবণ, প্রতিবেশি মিস্টার আলী ও জরুরি সেবা ৯৯৯ এ অবহিত করার প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে এগিয়ে যাওয়া শ্রীবরদী থানার তৎকালীন এসআই আরিফুল ইসলামসহ আমার মানীত সাক্ষীদের জ্ঞিজাসাবাদ এবং হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের পদক্ষেপ না নিয়ে তিনি কেবল আসামীদের এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কথা শুনছেন। এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আসামীরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, পুলিশ ও সরকারি চাকরিজীবী বলেই পার পেয়ে যাবেন? আমি সন্তানসহ স্বামী-সংসার করতে চাই, নয়তো ন্যায়বিচার। এরপরও কি আমাকে বারবার হারতে হবে?

এ ব্যাপারে বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট প্রদীপ কুমার দে কৃষ্ণ জানান, বাদীপক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকার পরও থানা পুলিশের তদন্তে মামলাটির অপমৃত্যু ঘটানোর সমূহ চেষ্টা করা হয়েছে। তার মতে, বর্তমান সময়ে পুলিশ আসামীর বিরুদ্ধে পুলিশী তদন্ত যতোটা সতর্কতা ও নিরপেক্ষতার সাথে হওয়া উচিত, এক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটলে কোন বাদীপক্ষই ন্যায়বিচার পাবে না। কাজে এ চাঞ্চল্যকর মামলার অধিকতর তদন্তে পিবিআই কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও সতর্ক হবেন বলেই আশা করছি।

অধিকতর তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআইয়ের এসআই মোঃ আশরাফুজ্জামান বলেন, ঘটনার বিষয়ে তদন্ত কার্য শেষ করা সম্ভব হয়নি বলে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে। বাদীর মানীত ও প্রত্যক্ষ সাক্ষীসহ নিরপেক্ষ লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জামালপুর পিবিআইয়ের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রাণী সরকার বলেন, ওই মামলার ঘটনা নিয়ে আমিও তদন্ত-তদারকি করছি। আসামী পুলিশের লোক কিনা সেটা বড় কথা নয়। তদন্তে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যেন প্রকৃত সত্যটা উদঘাটন করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবিতে শ্রীবরদী উপজেলার ঝগড়ারচর তিনানীপাড়া গ্রামের বাড়িতে নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ স্বামী-দেবরসহ তাদের পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলা ভেটি সর্দারপাড়া পৈত্রিক নিবাসের এক সন্তানের জননী গৃহবধূ লায়লা আরজুমান শান্তি। ২০ জানুয়ারি শ্রীবরদী থানায় তা নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড হলে হামিদুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম নামে ২ সহযোগী আসামীকে যেতে হয় হাজতে। এরপর থেকেই মামলাটির বিষয়ে বেড়ে যায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ে আসামী পক্ষের নানা তদবির। ওই অবস্থায় গত ২০ মার্চ উল্টো বাদীনির বিরুদ্ধেই প্রতিবেদন দাখিল হলে ওই তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদনসহ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ১৫ এপ্রিল নারাজী দাখিল করেন বাদী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here