শেখ হা‌সিনার অধীনে বিএন‌পি নির্বাচ‌নে যাবে না: খালেদা জিয়া

0
510

খবর ৭১:

শেখ হা‌সিনার অধীনে বিএন‌পি নির্বাচনে যাবে না বলে মন্তব্য করে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএন‌পি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘তোমরা এগিয়ে চলো। ২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর।’

২ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর ই‌ঞ্জি‌নিয়ার্স ইন্স‌টি‌টিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রদল আ‌য়ো‌জিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অ‌তি‌থির বক্ত‌ব্যে এ সব কথা বলেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, আমরা নির্বাচন করব, চাইলেও নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা যাবে না। তবে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে। সে জন্য সংসদ ভে‌ঙে নির‌পেক্ষ নির্বাচন হ‌তে হ‌বে। সরকার যদি মনে করে নেতাকর্মীদের জেলে নিয়ে নির্বাচন দেবে, তাহলে সে নির্বাচন আমরা অংশগ্রহণ করব না। কারণ বিএনপি অনেক বড় রাজনৈতিক দল। বিএনপি ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর।

বিএনপি নেত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, বৈধ সরকার নেই, আইনের শাসন ও কথা বলার অধিকার নেই। তার প্রমাণ একটু আগে দেখলাম। অনেকদিন ধরে ছাত্ররা আলোচনা সভার প্রস্তুতি নিয়েছে। অনুমতি দিয়েছে, ভাড়াও নিয়েছে। অথচ হঠাৎ করে হলরুমে তালা লাগিয়ে দিলো। এটা কেমন আচরণ? আজকে দেশ এক ব্যক্তির দখলে। দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তার জন্য দায়ী। গুম, খুন বেড়েছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। মানুষের অভাবের শেষ নেই।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে মানুষ বিশ্বাস করে না। তারা মানুষের ভোটে না, অন্যের কাঁধে ভর করে ক্ষমতায় এসেছে বারবার। অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে মানুষ নির্যাতন করছে। বিএনপি মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসে। অন্যের ওপর নির্ভর করে নয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, মানুষের দুঃখের সীমা নেই। তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। সে জন্য তাদের চলে যেতে হবে। নতুন যে কোনো সরকার আসতে হবে। পরিবর্তন আসতে হবে। সে জন্য একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার লাগবে। হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবেও না। এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তাদের অধীনে ভোট হতে পারবে না। পার্লামেন্ট রেখে কোনো নির্বাচন হবে না।

খালেদা জিয়া বলেন, পদ্মাসেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মাসেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না।

সেসময় ভারতের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ভারত আমাদেরকে স্বাধীনতার সময় সাহায্য করেছে। ভারতকে আমরা বন্ধুর মতো দেখতে চাই। বন্ধু হয়ে থাকতে চাই সবসময়।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশের পুলিশ খারাপ নয়, আওয়ামী লীগ পুলিশকে খারাপ বানাচ্ছে। পুলিশ নিজেদের কাজ করুক। তবে আমার অনুরোধ, আমার ছেলেদের ধরবেন না। যারা জেলে আছে ছেড়ে দিন।

তিনি বলেন, পুরো দেশটি আজ কারাগার হয়ে গেছে। আমরা সবাই বন্দী। শুধু শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে মুক্ত।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের শুধু ছবি তোলে আন্দোলনে আছে তা না দেখিয়ে মনপ্রাণ উজাড় করে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, তোমরা ঐক্য, ইমান, শৃংখলা ঠিক রাখলে সব কিছু জয় করা সম্ভব। শুধু স্লোগান দিলে হবে না। স্লোগানের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। আগের স্লোগান দিলে হবে না, সময়ের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তা পরিবর্তন করতে হবে।

‘তোমরা এগিয়ে চলো। ২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর’, বলেন খালেদা জিয়া।

ভেন্যু নিয়ে জটিলতা

এর আগে দিনভর নানা নাটকীয়তার পর ছাত্রদলের সমাবেশের ভেন্যু ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের তালা খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫টা ২৫ মিনিটে তালা খুলে দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ছাত্র সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে পৌঁছান। ওই সময় মিলনায়তনের গেট তালাবদ্ধ ছিল। ইনস্টিটিউশন চত্বরেই চলছিল কর্মসূচি।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এরপর থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্বঘোষিত ছাত্র সমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি দিয়ে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার অজুহাতে পরে তা বাতিল করা অগণতান্ত্রিক।’

নির্বিঘ্নে ছাত্র সমাবেশ করার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার রওনার খবরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সামনে জড়ো হন। সেখানে সকাল থেকেই জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ট্রাকে রাখা সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বক্তব্য দেন তারা।

পরে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে ইনস্টিটিউশন চত্বর থেকেই মির্জা ফখরুল ঘোষণা দেন- বিএনপি চেয়ারপারসন যতক্ষণ থাকবেন, ততক্ষণ তারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে অবস্থান করবেন। পরে ৫টা ২৫ মিনিটে মিলনায়তনের তালা খুলে দেওয়া হয়।

 

 

অনিশ্চয়তা নানারকম নাটকীয়তার পর খালেদা জিয়ার দৃঢ়তায় ছাত্রদলের ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশের নির্ধারিত ভেন্যু ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের তালা অবশেষে খুলে দেওয়া হয়েছে।

 

এরপরও অনুষ্ঠান হওয়ার আশায় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থল ছাড়েননি। বেলা ১টার দিকেও তারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে বিক্ষোভ করেন। দুপুর আড়াইটার দিকেও অনুষ্ঠানস্থলের প্রধান ফটকে নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, মূল অডিটরিয়াম তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট চত্বরে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়েই বক্তব্য রাখবেন বিএনপির প্রধান।

এদিকে রাজধানীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কর্মসূচি ক্ষমতাসীন দল বাতিল করে দেওয়ায় গণতন্ত্র খর্ব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি যাতে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য ক্ষমতাসীন দল বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। বিরোধী দল যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য চক্রান্তের মাধ্যমে দেশে সেই পরিস্থিতি তৈরি করছে সরকার।

এদিকে কুমিল্লার একটি আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এর প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অনতিবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই এলাকায় একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটওয়ারী জানান, সকাল ১০টায় সমাবেশ মঞ্চ প্রস্তুত করতে নেতাকর্মীরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আসলে অডিটরিয়ামে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়, পুলিশের অনুমতি না থাকায় অডিটরিয়ামে ছাত্র সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।

মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন সরকার নিজস্ব এজেন্ট দিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে সমাবেশ বানচাল করতে চাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ দিয়ে সমাবেশ বাধা দিয়ে জাতীয়তাবাদী দলের গণতন্ত্রের সংগ্রাম দমিয়ে রাখা যাবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসএসএফ জানায়, সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপতির একটি প্রোগ্রাম আছে। তাই তারা নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্রসমাবেশ করতে আপত্তি ও বারণ করছে।’

তিনি জানান, যথাযথ নিয়ম মেনে তারা ছাত্র সমাবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও হঠাৎ করেই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না।

খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here