শীঘ্রই শুরু হচ্ছে নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক সড়ক

0
395

 

লোকমান আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ-রাণীনগর-নাটোর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন এবং বগুড়ার সাথে যোগাযোগের বিকল্প সড়ক হিসেবে চলাচলের জন্য ২০০৫ সালে সান্তাহার রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে নাটোর ষ্টেশন পর্যন্ত রেল লাইনের পশ্চিম পাশ দিয়ে শুরু হয় নওগাঁ-রাণীনগর-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের নিমার্ণ কাজ। সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে ২৩ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ হওয়ার পর ২০০৭ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে এই সড়কের নিমার্ণ কাজ রহস্যজনক কারনে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক যুগ পার হলেও বাকি অংশের নির্মাণ কাজ অদ্যবদি শুরু না হওয়ায় নওগাঁ-রাণীনগর-নাটোরের সাথে সরাসরি যোগাযোগে দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না। তবে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় এই সড়কের নিমার্ণ কাজের জন্য প্রায় ২০১ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। এক যুগ পর হলেও লাল ফিতার গিট খুলতে শুরু করায় খুব শীঘ্রই এই সড়কের নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হবে বলে জানিয়েছেন নওগাঁর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী।

নওগাঁর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের জন্য ২০০৫ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন দেয়। কিন্তু পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সীমিত আকারে ৫০ কোটি টাকার অনুমোদন দিলে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নাটোরের নলডাঙ্গায় এই সড়কের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ২০০৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত নওগাঁ-সান্তাহারের ঢাকা রোড মোড় থেকে রাণীনগর-আত্রাই হয়ে নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৪৮ কিলোমিটার সড়কের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়। আঞ্চলিক সড়কের নওগাঁ জেলা অংশের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়ক পাকা করণ করা হয়। আর নাটোর জেলা অংশের প্রায় ২২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৬ কিলোমিটার সড়ক পাকা করণের কাজ সম্পূর্ণ হয়। নতুন করে অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় মোট ২৩ কিলোমিটার সড়ক পাকা হওয়ার পর হাইড্রোলজি সমীক্ষার নামে নানান রশি টানাটানির এক পর্যায়ে সড়কটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সড়কটির বাঁকি প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়ক এখন এলাকাবাসীর চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় সড়লটি গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এমনকি সড়কের উপরে কলার বাগান, সবজি চাষ সহ পাশ্ববর্তী বসবাসরত লোকজনরা ছোট ছোট গৃহনিমার্ণ করে বসবাস করছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র সান্তাহারের ঢাকা রোড থেকে রাণীনগর রেল স্টেশন পর্যন্ত পাকা করণের কাজ সমাপ্ত হলেও ভাঙ্গচুরা আর খানা-খন্দের কারণে ঝুকি নিয়েই বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করতে হয় জনসাধারণের। রাণীনগর-নলডাঙ্গা পর্যন্ত রাস্তার মাটি ভরাটসহ অন্য কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় নাটোর-নওগাঁ-সান্তাহার হয়ে বগুড়া যাওয়ার জন্যে সড়কটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

রাণীনগর সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম লাল জানান, এই সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করা হলে আমাদের গাড়ি চলাচলের জন্য নতুন একটি সড়ক পাব। যা এই জনপদে বসবাসরত্ব মানুষদের রাণীনগর থেকে সরাসরি নাটোর হয়ে রাজশাহী যাওয়ার জন্য শুধমাত্র রেল গাড়ি নির্ভরশীলতা কমে যাবে এবং আমাদের শ্রমিকদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই এই আঞ্চলিক সড়কটি জন স্বার্থে নিমার্ণ কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।
রাণীনগর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছনিয়া ইসলাম জানান, রাণীনগরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি এই সড়কটি নিমার্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার। চলাচলের জন্য সড়কটি চালু হলে ব্যবসা-বানিজ্য সহ জীবন যাত্রার মান পাল্টে যাবে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি এই সড়কের নিমার্ণ কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করা হোক।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল মনছুর আহম্মেদ জানান, এই পর্যন্ত সড়কটি নিয়ে বহু সময় নষ্ট হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের সহযোগীতায় নওগাঁ-রাণীনগর-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কটির প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের পাকা করণের কাজের জন্য ২০১ কোটি টাকার মত একনেকে অনুমোদন হয়েছে। গেজেট জারি হওয়ার পর ফান্ড পাওয়া মাত্রই এই সড়কের অসমাপ্ত কাজের সমাপ্ত করণের দরপত্র আহবান করা হবে।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম জানান, এই আঞ্চলিক সড়কটির নিমার্ণ কাজ শেষ করার জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় এই সড়কের নিমার্ণ কাজের অনুমোদন করা হয়েছে। গত সাত বছরে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে জাতীয় সংসদে এগারো বার দাবি উত্থাপন করেছি। এর ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই সড়কের অসমাপ্ত কাজের সমাপ্ত করণের কাজ শুরু হবে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here