শিবচরে বিএনপি ত্রি-ধারায় বিভক্ত ,তৃণমূলে হতাশা

0
457

এস. এম. রাসেল, মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন ত্রি-ধারায় বিভক্ত। মূলত দলীয় পদ পাওয়া না পাওয়াকেই কেন্দ্র করে এ ত্রি-ধারায় বিভক্ত দলীয় নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সব কর্মসূচি পৃথক পৃথকভাবে পালন করে তিন গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, শিবচর উপজেলায় বিএনপির অবস্থান ছিল শক্তিশালী। কোনো গ্রুপিং-দ্বন্ধ ছিল না। মূলত দলীয় পদ পাওয়া না পাওয়াকেই কেন্দ্র করে এ ত্রি-ধারায় বিভক্ত দলীয় নেতাকর্মীরা। শিবচর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়ে প্রকাশ্যে দলাদলির সূত্রপাত হয়। এ সময় সাবেক উপজেলা সভাপতি নাজমল হুদা মিঠু চৌধুরী ও কেন্দ্র ঘোষিত উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জামান কামাল নুরুদ্দিন মোল্লার বলয়ে বিভক্ত হয়ে পরে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনসমূহ। পরে নাজমল হুদা মিঠু চৌধুরীর মৃত্যুতে সভাপতি পদ শূণ্য হওয়ায় দলীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে এবং দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গ করে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আঃ খালেক মৃধাকে অভার্টিক করে ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। ফলে বিএনপি হঠাৎ করে দুই থেকে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সব কর্মসূচি পৃথক পৃথকভাবে পালন করে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করা হয়। ত্রি-ধারায় বিভক্ত উপজেলা বিএনপির একপক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক      মাদারীপুর-১ আসনের ৯ম’তম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী বিশিষ্ট শিল্পপতি জামান কামাল নুরুদ্দিন মোল্লা। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জামান কামাল নুরুদ্দিন মোল্লার সাথে কেন্দ্রীয় বিএনপির শীর্ষনেতার সাথে রয়েছে সু-সম্পর্ক। তবে তার নেতৃত্বে আহŸায়ক কমিটির ১ম যুগ্ন-আহবায়ক আঃ মান্নান খানসহ আরও ৩ জন যুগ্ন-আহবায়ক সম্প্রতি বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। অপর দিকে, বিএনপির কান্ডারি, রাজপথের লড়াকু শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক নাজমল হুদা মিঠু চৌধুরীর মৃত্যুর পরে তারই সহধর্মণী নাদিরা মিঠু চৌধুরী এক গ্রæপের নেতৃত্বে রয়েছেন। তার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সব কর্মসূচি উপজেলা বিএনপি সক্রীয়ভাবে পালন করছে। শিবচর উপজেলা বিএনপির এই নেত্রী ও মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির মণোনয়ন প্রত্যাশী নাদিরা মিঠু চৌধুরীর সাথে কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির শীর্ষনেতার সাথে রয়েছে সু-সম্পর্ক।

এছাড়াও দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গ করে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং তিন বারের সাবেক সাধারন সম্পাদক আঃ খালেক মৃধাকে ওভারট্রিক করে ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেয়। তিনি চট্রগ্রামে নিজ ব্যবসায় প্রায় সব সময়ই মনোনিবেশ করে থাকেন বলেও স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, মূলত ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারনেই আজ শিবচর উপজেলা বিএনপি ত্রি-ধারায় বিভক্ত। সে টাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের ম্যানেজ করে এলাকায় না থেকে চট্রগ্রাম বসে রাজনীতি করছে।
শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ মতিয়ার রহমান খান জানান, ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান জেলা ও উপজেলার কিছু নেতাদের ম্যানেজ করেই রাজনীতি করছে।
স্থানীয় একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানের কারনেই গত এক সপ্তাহে শিবচর উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৬’শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন। সম্প্রতি আওয়ামীলীগ সংসদীয় পার্টির সেক্রেটারী ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি নূর-ই আলম চৌধুরী এমপির হাতে ফুলের নৌকা তুলে দিয়ে উপজেলার সন্নাসীরচর ইউনিয়নের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চারতলা ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহব্বায়ক শাজাহান উকিলসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আড়াই শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামীলীগ আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। এছাড়া সন্নাসীরচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মতি মালও যোগ দেন।
অপরদিকে, উপজেলা যুবদলের সহ সভাপতি জুলহাস মাল, সন্নাসীরচর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি বোরহানউদ্দিন মালসহ ৩ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আওয়ামীলীগে যোগদান করেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মুনির চৌধুরী বলেন, আওয়ামীলীগ সংসদীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক নূর-ই আলম চৌধুরী এমপির যোগ্য নের্তৃত্বে শিবচর আজ সারাদেশে উন্নয়নের মডেল। শিবচরের উন্নয়ন দেখতে সারাদেশের এমপি, মন্ত্রীরা শিবচর আসেন। এতেই অনুপ্রানিত হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগে যোগ দিলেন।

জেলা বিএনপি একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিবচর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জামান কামাল নুরুদ্দিন মোল্লা এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান দু’জনেই শিল্পপতি হওয়ায় জেলা নেতাদেও তোয়াক্কা না করেই কেন্দ্রীয় কিছু অসাধু নেতাদেও টাকা দিয়ে ম্যানেজ কওে কমিটি নিয়ে আসে ও তারা বীরদর্পে রাজনীতি করে।

এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানের মুঠোফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই।

শিবচর উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক জহের গোমস্তা জানান, আজমল হুদা মিঠু চৌধুরী যখন ছিলেন তখন ভালই ছিলো উপজেলা বিএনপি। তার অকাল মৃত্যুর পর দলে সংকট দেখা দেয়। দলের হাল ধরার মতো সিনিয়র সহ-সভাপতি আঃ খালেক মৃধার তেমন সামর্থ ছিলো না। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের ইচ্ছায় ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। আর উপজেলা বিএনপি যে যার মতো করে কর্মসূচঅী পালন করছে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here