ঈশ্বরগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রধান
ফারুক ইফতেখার সুমন ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর বাজারে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছাত্রবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনায় ২ স্কুল ছাত্র আহত হয়। বিক্ষোভকারী ছাত্ররা এ ঘটনার জন্য উপজেলার মগটুলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ বদরুজ্জামানের শাস্তি দাবি করে।
জানা যায়, মগটুলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলামকে মধুপুর বাজারের একটি বইয়ের দোকানের ভেতরে বসা অবস্থায় লাঞ্ছিত করেন। এঘটনা শুনার পর ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে সোমবার বিদ্যালয়ে এসে ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর জন্য রাস্তায় নেমে আসে।
সকাল দশটার দিকে উপজেলার মধুপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মধুপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্র লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষুব্ধ অবস্থায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তারা ওই ঘটনায় চেয়ারম্যানের শাস্তি দাবি করে বাজারের চৌরাস্তায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। ওই সময় চেয়ারম্যান সমর্থকদের হাতে ১০ম শ্রেণির রাকিব ও ৮ম শ্রেণির ফহিম আহত হয়। এ খবর অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে বিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ মধুপুর বাজার এলাকা। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ওই বাজারের কৃষিব্যাংকের সামনে থাকা ইউপি চেয়ারম্যানের একটি প্রতিবাদ সমাবেশের মঞ্চ ভেঙে ফেলে। বাজার এলাকার সকল সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। বিক্ষোভ চলার সময় চেয়ারম্যানের বাড়ির একটি ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসময় আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ করীর বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে এসে সড়কে বিক্ষোভরত ছাত্রদের বুঝিয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি (ওসি) একটি মাইক নিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলে ছাত্ররা শান্ত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কয়েকজন অভিভাবক জানান, শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ওই দিন বিকেল ৩টায় তথাকথিত অভিভাবক সমাবেশ ডাকেন। চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে রবিবার রাতে মাইকির্ং করানো হয়। ওই মাইকিংয়ে বলা হয় ওই মঞ্চে স্কুলের অভিভাবক সমাবেশ এবং মগটুলা ইউনিয়নের একটি দলাল চক্র বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর প্রতিবাদ সমাবশে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা ওই মঞ্চ ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। এ সময় চেয়ারম্যানের লোকজন কয়েকজন ছাত্রকে মারধর করে আহত করে। এতে ছাত্ররা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়লে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
দুপুর ১টায় প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে রুমানা তোয়া। ওই সময় তিনি ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিয়ে মগটুলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ বদরুজ্জামান মামুন জানান, ছাত্রদের সাথে তার কোন বিরোধ নেই। সভা আহ্বান করা হয়েছিলো বিদ্যুতের দালালদের দৌরাত্বের বিরুদ্ধে পাশাপশি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিনাবেতনে অধ্যয়নের সুযোগ ও শিক্ষার মান উন্নয়নের দাবি নিয়ে। তিনি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ওই বিষয়টি সভায় সংযুক্ত করেছিলেন। বিষয়টি ভিন্নখ্যাতে নিতে প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে বিক্ষোভে উস্কে দেয়।
প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, রোববার বাজারে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্ব নিয়ে তাকে লাঞ্চিত করেন চেয়্যারম্যান মামুন। তবে ছাত্র-ছাত্রীরা চেয়ারম্যানের বাসা ঘেরাওয়ের বিষয়টি তিনি জানেনা বলে জানান। ঘটনার সময় তিনি স্কুলে ছিলেন না। গত বছরের ১৬ অক্টোবর নতুন করে স্কুল পরিচালনা কমিটির অনুমোদন দেয় বোর্ড। পরবর্তীতে একটি মামলার প্রেক্ষিতে জেলা জজ আদালত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেন।
খবর৭১/ইঃ