শায়েস্তাগঞ্জে সব্জি চাষে স্বাবলম্বী কৃষক-ফজর রহমান

0
333

খবর৭১:মঈনুল হাসান রতন হবগিঞ্জপ্রতনিধিঃি আধুনিক প্রযুক্তিতে সবজি চাষে সফল হয়েছেন শায়েস্তাগঞ্জের কৃষক মোঃ ফজর রহমান। স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে এলাকায় বিভিন্ন সবজি বিপ্লব ঘটিয়ে অনুকরনীয় দৃষ্টান্তে পরিনত হয়েছেন তিনি। রোদ-বৃষ্টির সাথে মিতালী আর কঠোর পরিশ্রমের কাজ হলো কৃষি। কিন্তু এই কষ্টের ভিতরেও যে আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে তা অনেকেই জানেন না। যারা এই কষ্টকে ধারন করতে পারেন তারা কোনো সময়ই ব্যর্থ হন না। বিভিন্ন ধরনের সবজি টমেটো, লাউ, বরবটি, ফুল কপি, বাধা কপি, আলু, শিম, চাষ করে অল্প সময়েই নিজের ভাগ্য ফিরিয়েছেন তিনি। ফজর রহমান তার খামারে উৎপাদিত সবজি টমেটো, লাউ, বরবটি, আলু, বেগুন দেশের বিভিন্ন জাযগায় রফতানী করছেন। তার উৎপাদিত বিভিন্ন শাক সবজি গুনগত মান ভাল বিষ মুক্ত হওয়ায় খামার থেকেই টমেটো, লাউ, লাল শাক, করলা, বেগুন সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। শায়েস্থাগঞ্জ উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাগুনি পাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ ফজর রহমান কঠোর পরিশ্রম আর সাধনার বিনিময়ে তৈরী করেছেন কৃষি খামার। সেখানে সাথী ফসলের আবাদ করে পেয়েছেন আশাতীত সাফল্য। স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছেন এই উদ্যমী কৃষক। এলাকায় নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তার এই সফলতার কৃষি বিপ্লব ঘটেছে বাগুনী পাড়া অজপাড়াগ্রামে। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর অজপাড়া গ্রামের মোঃ ফজর রহমান একজন প্রকৃত কৃষক পরিবারের সন্তান। লেখাপড়া করেছেন মাত্র ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত। পৈত্রিক জমিজমা বলতে তেমন কিছুই ছিল না তার। ২ বিঘা জমিই ছিল তার একমাত্র সম্বল। জীবনের প্রথম দিকে সনাতন আবাদে এই জমিগুলো থেকে তেমন একটা লাভবান হতেন না তিনি। তবে ১৯৯৪ সালে তার ১০ শতক জমিতে বারীর রুমা প্রজাতির টমেটো, আবাদ করে আশাতীত সাফল্য পান। পেয়ে যান নতুন পথের সন্ধান। সেই সময়ে তার ১০ শতক জমির এই টমেটো বিক্রির থেকে তার আয় হত প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এই মুনাফা দেখে কৃষক ফজর রহমান কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে শুরু করেন সবজির আবাদ। তবে সনাতন পদ্ধতিতে নয় উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আগাম সবজি আবাদে মনোযোগী হন তিনি। একই জমিতে অধিক ফলন ও সারা বছর ফসল পেতে তিনি শুরু করেন সাথি ফসলের আবাদ। জমিতে টেংরা বাঁশ ও সুতা দিয়ে মাচা তৈরী করা হয়। পৌষ ও মাঘ মাসে আবাদ করা হয় টমেটো। ফাল্গুন থেকে বৈশাখ পর্যন্ত ফসল পাওয়া যায়। টমেটো, লাউ, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা সহ নানা প্রজাতির সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে নেয়া হচ্ছে দেশের প্রত্যান্তঞ্চলে। পাইকাররা জমি থেকেই ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে এসব সবজি। এই ফসল পাওয়া যায় বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত। আর আষাঢ় মাসে লাগানো হয় করলা। সেখান থেকে ও দীর্ঘ দিন ফসল পাওয়া যায়। পাশাপাশি একই সময়ে মাচাঁয় আন্যান্য সবজি ও আবাদ করা হয়। কৃষক মোঃ ফজর রহমান এ বছর টমেটো বিক্রি করে নীট আয় করেছেন ৫০ হাজার টাকা। করলা থেকে আয় করেছেন ২০ হাজার টাকা। বেগুন, লাউ, সিমও চাল কুমড়া সহ অন্যান্য ফসল থেকে আয় করেেেছন ২ লাখ টাকা। তার খামাড়ে প্রতিদিন কাজ করে ৩ জন শ্রমিক। তাদেরকে দেয়া হয় দৈনিক ৪ শত টাকা। যা অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশী মজুরী। খামারে তিনি জৈবিক সার বেশী ব্যবহার করেন। মধ্য বয়সী এই কৃষক হরেক রকমের সবজি ও চাষাবাদ করেছেন। মানুষ পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। কৃষক ফজর রহমান এ প্রতিবেদক কে জানান, এক সময় কৃষি কাজ করতে ঋন নিতে হয়েছে। এখন আর ঋনের প্রয়োজন নেই কষ্ট করলে যে সফলতা আসবে সে বিশ্বাস ছিল। এখন অনেক লোক আমার নিকট আসে পরামর্শের জন্য। আমি সবাইকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমার এখানে যারা কাজ করে তারাও নিজেদের জমিতে ভাল সবজি আবাদ করছেন। কৃষির আয় থেকে ফজর রহমান তার সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন।
তার ৩ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সরকারী চাকুরীজিবী, ছোট ছেলে বিদেশ প্রবাসী, মেয়ে কলেজ ছাত্রী। এই আয়ের তার বাড়ীতে দালান ঘর উঠেছে। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২ বিঘা জমি বেড়ে হয়েছে ৭ বিঘা এর ৪ বিঘাতে আবাদ হয় সবজি এবং ৩ বিঘাতে আবাদ করা হয় ধান। তার এই সফলতায় গ্রামের প্রায় ২ শত কৃষক সবজির খামার গড়ে তুলেছেন। তিনি নিয়মিত কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেন এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষনে অংশ নিয়ে থাকেন। শায়েস্তাগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় তার কৃষি খামার থেকে উৎপাদিত ফসল কিনতে পাইকাররা ট্রাক নিয়ে আসেন ফজর রহমানের কাছে। এদিকে কথা হয় ফজর রহমানের জমিতে শ্রমিকের কাজ করা আবুল, কাশেম, জসিম ও আক্কাস মিয়ার সাথে তারা জানায়, এখানে কাজ করে তারা ভালপারিশ্রমিক পায়। কাজ করার পাশাপাশি নিজেদের জমিতে ও বিভিন্ন প্রকার সবজি আবাদ করেন তারা। ফজর রহমান প্রমান করেছেন পরিশ্রম আর বুদ্ধি থাকলে দেশেই ভাল কিছু করা সম্ভব। তাকে যদি সবাই অনুকরন করে তাহলে বেকারত্ব হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here