শায়েস্তাগঞ্জে একাধিক হত্যা মামলার আসামী ইলিয়াছ জামিনে মুক্ত, জনমনে আতংক

0
292

মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের বহুল আলোচিত ও একাধিক হত্যা মামলার আসামী ইলিয়াছ মিয়া জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
বুধবার (১০ জানুয়ারী) সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ৩টি মামলার জামিনের কাগজপত্র পৌছলে বিকাল ৫টার দিকে সে কারাগার থেকে বের হয়।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার সোহেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইলিয়াছ বাহুবলের সিএনজি চালক জলিল হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও শায়েস্তাগঞ্জে সুজন হত্যা মামলাসহ ৩টি মামলার আসামী। এছাড়াও হবিগঞ্জ কারাগারে মেয়র জি কে গউছকে হত্যার চেষ্টা করে দেশে বিদেশে আলোচিত হয়েছিল এই ইলিয়াছ।
কুখ্যাত এই ইলিয়াছের মুক্তির খবর পৌছলে হবিগঞ্জের জনমনে আতংক দেখা দিয়েছে। নিহতের পরিবারের লোকজন আবারও দুশচিন্তায় পড়েছেন। সে আবারও কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে এমন আশংকায় ভোগছেন নিহতের পরিবার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শায়েস্তাগঞ্জের একাধিক ব্যক্তি বলেন- ইলিয়াছ একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং একটি হত্যা মামলা বিচারাধীন।
কে এই ইলিয়াছ: শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার দাউদনগর গ্রামের কনা মিয়ার পুত্র ইলিয়াছ মিয়া ওরফে ছোটন। সে ছিল শায়েস্তাগঞ্জের আতঙ্ক। তার নাম শুনলেই লোকজনের মাঝে ভয় দেখা দিত। সে এক সময় শায়েস্তাগঞ্জে ত্রাসের রাজ্য কায়েম করে। ধীরে ধীরে সে ভয়ংকর হয়ে উঠে। এরপর তার ভয়াবহতা শায়েস্তাগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। কালো টাকা রোজগারে সে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এলাকায় তার ভয়ে লোকজন আতঙ্কে বসবাস করতো। সে কাউকে পাত্তাই দিত না।
২০০৮ সালে ১৩ এপ্রিল সে দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়ার বাসিন্দা মরম আলীর পুত্র আলী আহমদ সুজনকে হত্যা করে পলাতক জীবন বেচে নেয় ইলিয়াছ। ঘটনার পর তার পিতা তাকে ত্যাজ্য করেন। এরপর সে ভারতে চলে যায়। সেখানে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে সে জড়িয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে চুনারুঘাটের আসামপাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নিজের কাজ শেষে পুনরায় ভারতে চলে যেত।
২০১১ সালের ১৬ জুলাই সে একই রুটে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। পরে চুনারুঘাট থেকে বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী বাজারে যাওয়ার জন্য সে আব্দুল জলিলের সিএনজি চালিত একটি অটোরিক্সা ১ হাজার টাকায় ভাড়া নেয়। সন্ধ্যায় বাহুবল বাজারে পৌছে জলিল আর যাবে না বলে তার ভাড়া দাবি করে। এ সময় ইলিয়াছ ৪শ টাকা দিয়ে বাকি টাকা পুটিজুরী বাজারে গিয়ে দেবে বলে সিএনজি চালক জলিলকে বলে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রথমে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে ইলিয়াছ নিজেকে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী বলে পরিচয় দেয়। সাথে সাথে সিএনজি চালক জলিল মোবাইলে ফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে কথা বলে। কিন্তু ইলিয়াছ মনে করে জলিল ফোনটি পুলিশকে করেছে। আর কিছু না ভেবে সে জলিলকে ছুরিকাঘাত করতে থাকলে সে দৌড়ে গিয়ে একটি বাসায় ঢুকে। এরপর আর কিছু সে বলতে পারে না। ঘটনার পর ইলিয়াছ প্রথমে ঢাকায় গিয়ে চাকুরী খোঁজতে থাকে। পরে চাকুরী না পেয়ে সিলেট ও পরে বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলী যায়। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দুটি হত্যা মামলার আসামী হিসাবে কারাগারে থাকা ইলিয়াছকে জেলেও সবাই সমীহ করে চলতো। সিএনজি চালক জলিল হত্যা মামলায় ইলিয়াছের যাবজ্জীবন সাজা হয় এবং সুজন হত্যা মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
কারাগারে মেয়র জি কে গউছকে হত্যা চেষ্টা: ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই হবিগঞ্জ কারাগারের ভিতরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েন মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ। নামাজ শেষে নিজ কক্ষে যাওয়ার পথে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে মেয়র জি কে গউছকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এই ইলিয়াছ। এতে মেয়র জি কে গউছ গুরুতর আহত হলে ওই দিনই নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই ঘটনাটি তখনকার সময়ে দেশে বিদেশে আলোচিত হয়েছিল।

খবর ৭১/ ই:

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here