শরীয়তপুরে বহুল আলোচিত ওয়ারেন্ট জালিয়াতির নায়ক জলিল মাদবর গ্রেফতার

0
280

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
বহুল আলোচিত জালিয়াতি ওয়ারেন্ট দিয়ে বহু লোককে হয়রানির নায়ক’কে গ্রেফতার করেছে পালং মডেল থানার পুলিশ। এ ঘটনায় আবুল বাশার মাদবর বাদী পালং মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে বুধবার ভুয়া ওয়ারেন্ট দিয়ে বহু লোককে হয়রানি করার দায়ে ওয়ারেন্ট জালিয়াতির নায়ক মাসুদ রানা ওরফে জলিল মাদবর’কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর আস্তে আস্তে বের হতে থাকে তার অপকর্মের খবর। পুলিশ তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে শরীয়তপুর শহরের মনিরুজ্জামান খোকন, আইনজীবী সহকারী আনোয়ার হোসেন সহ অনেকেই তার এ কাজে সহায়তা করেছে। আসামী জালিয়াতির ঘটনা অস্বীকার করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পালং মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন যাবত একটি ওয়ারেন্ট জালিয়াতির চক্রের নায়ক মাসুদ রানা ওরফে জলিল মাদবর শরীয়তপুরের জালিয়াত চক্রের সহায়তায় টাকার বিনিময়ে পুলিশ কোর্ট থেকে কারো সহায়তায় ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরী করে এলাকার নিরীহ গরীব লোকদেরকে গ্রেফতার করে হয়রানি করছে। এ চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জেলার কোর্টের ম্যাজিষ্ট্রেটদের ও পুলিশ কোর্টের সিল তৈরী করে বিভিন্ন লোকের নামে ভুয়া ও জালিয়াতি ওয়ারেন্ট দিয়ে হয়রানি করে আসছে। বিশেষ করে কয়েকদিন পূর্বে জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশ পাড়া গ্রামের আঃ রাজ্জাক এর নামে দিনাজপুর কোর্টের সিআর মামলা ২৬৬/১৭ ধারা ৪৬৭/৪৬৮/১০৯ মামলার বরাতে ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরী করে শরীয়তপুর পুলিশ সুপারের কাছে পাঠায়। উক্ত ওয়ারেন্ট পুলিশ সুপারের মাধ্যমে শরীয়তপুর পুলিশ কোর্ট হয়ে জাজিরা থানায় চলে যায়। এ ওয়ারেন্টের আসামী আঃ রাজ্জাক শরীয়তপুর শহরের বসবাস করার কারণে পালং মডেল থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করে। আদালতের বিচারক আসামীকে জামিন না-মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। পরে তাকে পুলিশ কাষ্টরীতে দিনাজপুর জেল হাজতে প্রেরণ করে। আসামীর  স্বজনেরা দিনাজপুর গিয়ে মামলার সূত্র অনুযায়ী নকল তুলতে গিয়ে দেখা যায় উল্লেখিত মামলার কোন অস্তিত্ব নেই। দীর্ঘ ১ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পায় আসামী। পরবর্তীতে রাঙ্গামাটি কোর্টের সিআর মামলা নং ১৫৫/১৭ ধারা ৪৬৭/৪৬৮/৪২০/১০৯ ও সিআর মামলা নং ১২০/১৭ ৪২০/৪০৬/৪৬৭/৪৬৮/১০৯ ধারা নাম করে সেখান থেকে আরো দুটি মামলার ওয়ারেন্ট আসে। এরপর দিনাজপুর থেকে আরো একটি মামলার ওয়ারেন্ট আসে। এ সকল ওয়ারেন্টে উল্লেখিত আসামীরা বেশীর ভাগই জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশ পাড়া গ্রামের। এদের মধ্যে হয়রানির শিকার হয়েছেন আঃ রাজ্জাক মাদবর, রেজাউল করিম, আবুল বাশার মাদবর, মোঃ ইব্রাহিম, মোঃ খোকন, রিজিয়া বেগম সহ অনেকে। খোজ খবর নিয়ে পুলিশ জানতে পারে এ সংক্রান্ত মামলার কোনই অস্তিত্ব নেই। এ সবই ভুয়া ও জালিয়াতি ওয়ারেন্ট। এরপর ই তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্তে বের হয়। এক পর্যায়ে দেখা যায় দিনাজপুরের ভুয়া ওয়ারেন্টে শরীয়তপুর থেকে গ্রেফতারকৃত আঃ রাজ্জাক’কে গ্রেফতার করার মূল নায়ক জাজিরা উপজেলার পশ্চিম ছাব্বিশ পাড়া গ্রামের ডাঃ হাবিবুর রহমান মাদবরের ছেলে মাসুদ রানা ওরফে আঃ জলিল মাদবর।
পালং মডেল থানা পুলিশ গত বুধবার সকালে তাকে গ্রেফতার করে। এরপর আস্তে আস্তে বের হতে থাকে তার অপকর্মের খবর। পুলিশ তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে শরীয়তপুর শহরের মনিরুজ্জামান খোকন, আইনজীবী সহকারী আনোয়ার হোসেন সহ অনেকেই তার এ কাজে সহায়তা করেছে। এ ঘটনায় আবুল বাশার মাদবর বাদী হয়ে বুধবার পালং মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী আবুল বাশার মাদবর বলেন মাসুদরানা ওরফে আঃ জলিল ভুয়া ওয়ারেন্ট দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করে কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি করেছে এবং বিনা অপরাধে আমরা জেল খেটে আসছি। এখনো ৬টি ভুয়া ওয়ারেন্ট আমাদের নামে। যা পুলিশের কাছে আছে। আমরা জালিয়াতের বিচার চাই।
ভুক্তভাগী রিজিয়া বেগম বলেন, মাসুদ রানা আমাদেরকে অনেক হয়রানি করেছে। পুলিশের ভয়ে আমরা অনেক কষ্ট করেছি। আমরা মাসুদ রানার শাস্তি চাই।
অভিযুক্ত মাসুদ রানা ওরফে জলিল বলেন, আমি ভুয়া ওয়ারেন্ট এর বিষয়ে কিছুই জানিনা।
পালং মডেল থানার ওসি মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, মাসুদ রানা ওরফে জলিল মাদবর ভুয়া ওয়ারেন্ট দিয়ে অনেক লোককে হয়রানি করেছে। অনেক লোক জেল খেটে টাকা পয়সা নষ্ট হয়েছে। এক ওয়ারেন্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে গ্রেফতার করার পর অনেক ঘটনা বের হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here