লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে ৫ বছরেও চালু হয়নি ওয়াগন সেবা ও আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস

0
447

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট।। সংস্কারের ৫ বছর অতিবাহিত হলেও চালু হয়নি লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলরুটে ওয়াগন সেবা এবং আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি চরম হতাশা এঅঞ্চলের রেলযাত্রীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১০ সালে স্থানীয় এমপি তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে রেলপথ সংস্কার করে বুড়িমারী থেকে আন্তঃনগর ট্রেন ও ওয়াগন সেবা চালুর আশ্বাস দেন। এরপর সংস্কার কাজ শুরু হলে আশায় বুক বাঁধেন এ জনপদের মানুষ। সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পাঁচ বছরে অতিবাহিত হলেও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি।
সচেতন মহলের দাবী, ওয়াগন চালু না হওয়ায় সময় ও আর্থিক অপচয়ে পড়েছে ত্রিদেশীয় ব্যবসা কেন্দ্র বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। ফলে বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। আর এতে করে সরকারও প্রতিবছর কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
জানা যায়, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে পণ্য পরিবহনে ওয়াগন সেবা ও বুড়িমারী-ঢাকা আন্তঃনগর রেল যোগাযোগ চালুর লক্ষ্যে ২০১১ সালে বুড়িমারী থেকে ১৭০কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ সংস্কার কাজ শুরু হয়। সেসময় নতুন করে ৩৬টি ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার লুব রেললাইন নির্মাণ, ব্যালান্সওয়াল নির্মাণসহ দ্বিতীয় শ্রেণির ৭টি স্টেশন ও প্লাটফর্ম সংস্কার করা হয়। ডিজিটাল করা হয় রেলওয়ের সব সিগন্যাল। ২০১৩ সালে সংস্কার কাজ শেষ হলে এ রুটে রেলের গতিবেগ দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। এ রুটে রেলের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার হলেও মানসম্মত ইঞ্জিন না থাকায় বর্তমানে ঘণ্টায় ৪০-৬০কিলোমিটার বেগে মোট ৪টি ট্রেনটি চলাচল করছে। ফলে ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে যেমন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বুড়িমারী থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার কোনো পরিবহন দিনের বেলা চলাচল করে না। সরাসরি বুড়িমারী-ঢাকা আন্তনগর কোন ট্রেনের ব্যবস্থাও নেই। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে লালমনিরহাট থেকে লালমনি এক্সপ্রেস নামের একটি আন্তনগর ট্রেন থাকলেও শাটল ট্রেন না থাকায় লালমনি এক্সপ্রেসের সেবা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীসহ সাধারণ যাত্রীরা। ফলে বুড়িমারী থেকে ঢাকা যাতায়াতে রাত্রীকালীন দূরপাল্লার পরিবহনই ব্যবসায়ীদের একমাত্র ভরসা। এতে করে সময় অপচয় ও অনিশ্চিত যাত্রায় অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হন তারা। অনেক সময় সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় লোকসানে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।

বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমিন বাবুল বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পূর্বে ওয়াগনের মাধ্যমে এ স্থলবন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করা হতো। তখন ব্যবসায়ীদের পরিবহন ব্যয় কম হতো। রেলবিভাগও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছিল। কিন্তু সেতু চালু হওয়ার পর ওয়াগন সেবা বন্ধ যাওয়ায় সড়ক পথে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুন। ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। দিনে দিনে স্থলবন্দরটির বৈদেশিক গুরুত্ব কমতে থাকে।
লালমনিরহাট রেল বিভাগের সহকারী বিভাগীয় ট্রাফিক সুপার (এটিএস) সাজ্জাত হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথ সংস্কারের পর শুধু যাত্রী পরিবহনে রাজস্ব আয় কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে এই রুটে ওয়াগন চলাচলের সবধরনের সুবিধা থাকলেও ওয়াগন না থাকায় এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে ভারি ওয়াগন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশ দিয়ে শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য পৃথক একটি সেতু নির্মাণ করার সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এটির বাস্তবায়ন হলে ওয়াগন সার্ভিস পুনরায় চালু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার ডিআরএম কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ইঞ্জিন সংকট ও ইন্টারসিটি কোচ স্বল্পতা দুর হলে আন্তনগর ট্রেন চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের পণ্য চাহিদা তাদের কাছে রয়েছে ওয়াগন পেলে অচিরেই গুডস ট্রেন চলাচল করবে।
লালমনিরহাট-২ অাসনের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, বিষয়টি সংসদে উপস্থাপন সাপেক্ষে রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here