লালমনিরহাট ট্রাফিক পুলিশের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা পদক্ষেপ

0
337

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাট ট্রাফিক পুলিশের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা পদক্ষেপ। ট্রাফিক আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি জনসচেনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে জেলার ট্রাফিক বিভাগ। পুলিশের এসব উদ্যোগে জনসচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসায় সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গত এক দশক ধরে জেলার লোকসংখ্যা বাড়ার সাথে সড়কে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। গোটা জেলার ছোট বড় সড়ক মহাসড়কে যানবাহন, পথচারীর চাপে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে সড়ককে নিরাপদ রাখতে জেলা পুলিশ ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে যানবাহন চালক ও পথচারীসহ জনসাধারণকে সচেতন করার কাজ করছে। পুলিশের এসব উদ্যোগের ফলে আগের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসায় খুশি সাধারণ মানুষ। বেপরোয়া চালকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জেলা পুলিশ কর্তৃক মহাসড়কের পাশে লাগানো হয়েছে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড। যা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন। ঢাকার সাভার থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালক আইনুল মিয়া (৩৫), জেলা শহরের বাসচালক সফিকুল ইসলাম (৪৫) সহ অনেকে বলেন, সড়কে সব সময়ই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সামান্য অসতর্ক বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হয়ে যায়। কিন্তু লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে সচেতন করার সাইনবোর্ড চোখে পড়া মাত্রই অনেক চালকই মুহূর্তেই সতর্ক হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক দুর্ঘটনাই প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু সাইনবোর্ড দিয়ে নয়, চালক-পথচারীকে সচেতন করতে প্রায় প্রতি মাসেই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী-অভিভাবক, সাধারণ পথচারীদের নিয়ে জেলা পুলিশ করছে মতবিনিময় এবং অটোরিক্সাসহ তিন চাকার যানবাহন, বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের মালিক-চালকদের সাথে ট্রাফিক আইন নিয়ে করা হচ্ছে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার।
সড়কের পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও পথচারী পারাপারের জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুল-কলেজের সামনের রাস্তায় করা হয়েছে জেব্রাক্রসিং।
আবার পেট্রোলপাম্পগুলোতে চলছে নো হেলমেট নো পেট্রোল কর্মসূচি। এ জন্য প্রতিটি পাম্পেই টাঙানো হয়েছে ‘নো হেলমেট নো পেট্রোল’ ব্যানার।
মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট পরিধান করে এলেই কেবল পেট্রোল নিতে পারছেন তাছাড়া নয়। এতে করে যেসব মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট পরিধানে অভ্যন্ত নয় তাদের মাঝে হেলমেট পরিধানের অভ্যাস গড়ে উঠছে।
মোটরসাইকেল চালক মিজানুর, আরিফুল, আবু বক্করসহ অনেকে বলেন, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানোতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। পেট্রোল পাম্পে এলে হেলমেটের কথাটা সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, এতে করে অনেকেই সচেতন হচ্ছেন।
সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সড়কে চলছে ট্রাফিক পুলিশের নিয়মিত অভিযান। যারা আইন মানছেন না তাদের ভাগ্যে জুটছে মামলা, জরিমানার খড়গ। যারা মানছেন তাদের আইন মানার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করতে দেয়া হচ্ছে ফুলেল শুভেচ্ছা।
এছাড়া মহাসড়কে যানবাহনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ব্যবহার করছেন। যেসব বাস বা ট্রাক বেপরোয়া গতিতে মহাসড়কে চলাচল করছে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে মোটরযান আইনে মামলা দেয়া হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ফরিদ আহমেদ জানান, স্পিডগানের সাহায্যে যানবাহনের গতি তাৎক্ষণিকভাবে পরিমাপ করে আইন ভঙ্গকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, যাতে মহাসড়কে বেপরোয়া গতিজনিত কারণে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব করা যায়।
জেলা পুলিশের এসব উদ্যোগের স্বীকৃতিও জুটেছে সম্প্রতি। গত সেপ্টেম্বর মাসে মহাসড়কে ট্রাফিক সাইন স্থাপনে অবদান রাখায় রংপুর রেঞ্জের বিভাগীয় সম্মেলনে পুলিশ সুপার পেয়েছেন বিশেষ পুরস্কার। এছাড়া একই মাসে রংপুর রেঞ্জে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইউনিট নির্বাচিত হয়েছে জেলা ট্রাফিক বিভাগ।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, শুধু অভিযান আর মামলা দিয়ে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়, সড়ককে নিরাপদ রাখতে যানবাহন চালক, পথচারী সকলকে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here