লালমনিরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে যত অনিয়মের অভিযোগ

0
312
Exif_JPEG_420

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ বর্তমান সরকার যখন দুর্নীতি দমনে বদ্ধপরিকর, ঠিক তখনে লালমনিরহাট জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বজল রহমান দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। একজন দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর কারণে সরকারী উন্নয়ন কাজের বিপরীতে পুরো জেলায় সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। ফলে আগামী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের ভোটের প্রভাব পড়ার অাশংকা রয়েছে।

প্রাপ্ত অভিযোগ ও অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাট জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বজলার রহমান যোগদানের পর থেকে জেলাজুড়ে বেশকিছু কাজের অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। পাটগ্রাম উপজেলায় ১শত বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের ওয়াস ব্লক নিমার্ণ কাজ করা হয়েছে। এ সবকাজে ঠিকাদার নিয়োগ না করে ওই অফিসের মেকানিক্স নুরজ্জামান সাব-ঠিকাদার হিসেবে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে কাজ করেনন। এছাড়াও ওই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় নলকুপ প্রকল্পের কাজ গুলোও নুরজ্জামান সাব-ঠিকাদার হিসেবে দায়সাড়া ভাবে করেন। এই দায়সাড়া কাজের সিংহভাগ জেলা ও উপজেলা প্রকৌশলীগন ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। উক্ত নুরজ্জামান পাটগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একজন মেকানিক্স হয়েও দীঘ ৬/৭ বছর ধরে একই অফিসে থাকার সুবাদে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করে বেশ ধন সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার আওতাধীন এলাকায় নলকুপ বিতরনে এলাকাবাসীর নিকট থেকে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেয়া হয়েছে। এতে যে টাকা দেয়নি তার ভাগ্য নলকুপ জুটেনি। ফলে ভোক্তভোগীরা পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর নুরজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

হাতীবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরেও একই অবস্থা। ওই অফিসের মেকানিক্স ফিরোজ হোসেন সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। ছিটমহলযুক্ত নামক একটি প্রকল্পেরর মাধ্যমে বিলুপ্ত ছিটমহলে পাতকুয়া, ল্যাট্রিন, নলকুপ স্থাপনে গভীরতা নিয়মনুয়ায়ী ৩৮ ফুট দেয়ার কথা থাকলেও তার স্থলে ১৮ থেকে ২০ ফুট গভীরতা করা হয়েছে। নলকুপ গুলোতে যে সামগ্রী দেওয়ার কথা তা দেওয়া হয়নি। নলকুপের গোড়া পাকা করণে অতি নিম্নমানের কাজ করে বরাদ্দের অর্ধেক অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলায় বেশকিছু কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও কাজ শেষ না করে বিল প্রদান করা হয়েছে। যেসব স্থানে নলকুপ ও ল্যাট্রিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার বিপরীতে ফিরোজ হোসেন এলাকাবাসীর নিকট থেকে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়েছেন। যার ভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা বরাবরে পেয়ে থাকেন।
হাতীবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেকানিক্স শহিদুল ইসলামকে একটি ইউনিয়নের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তার কাজটিও ছিনিয়ে নিয়ে ফিরোজ হোসেন সাব-ঠিকাদার হিসেবে করেন। এতে মেকানিক্স শহিদুল ইসলাম প্রতিবাদ করায় স্হানীয় ছাত্রলীগকে দিয়ে তাকে ভয়ভীতি দেখানোসহ অফিশিয়াল ভাবে শোকজ করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, মেকানিক্স ফিরোজ হোসেনের সাথে নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সাথে তার গভীর সক্ষতা রয়েছে। তাই তাকে কাজ বেশি দেয়া হয়। প্রতিটি কাজের বিনিময় তারা ফিরোজের নিকট থেকে ঠিকঠাক কমিশন পান। তাই বরাবরে ফিরোজ হোসেনকে কাজ বেশি দেয়া হয়। এই ফিরোজ এতো দাপটবাজ যে, সে সব সময় রংপুর সার্কেল অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তার নিকটতম আত্নীয় বলে দাপট দেখান। ফিরোজ অফিস ফাঁকিবাজ, সে সপ্তাহে একদিন অফিস এসে পুরো সপ্তাহের স্বাক্ষর করেন।
হাতীবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাহাবুবজ্জামান সবুজ নামের একজন কর্মচারী নিজবাড়ি থেকে প্রতিদিন ট্রেনে আসেন ট্রেনে যান এবং মাত্র ২ ঘন্টা অফিস করেন। নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কোন অনৈতিক কাজের কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বদলী করানো হয়।
অপরদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার দু’জন কর্মচারী মেকানিক্স ফিরোজ হোসেনের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাদের কৌশলে অন্যত্র বদলী করানো হয়।

কালীগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী আলী হোসেন দায়িত্বে থাকাবস্থা স্কুল ওয়াস ব্লক বহু আইটেমের কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি আশ্রয় নিয়েছেন। একাজে ব্যাপক লুটপাট করেছেন। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার স্কুলে ওয়াস ব্লক বহু আইটেমের কাজের মান ভাল না লাগায় স্বাক্ষর দেয়নি। আলী হোসেন ওই প্রধান শিক্ষকে স্বাক্ষর জাল করে বিল উত্তোলন করেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলায় পিইডিপি-৩ প্রকল্পের ৬টি ওয়াস ব্লক বহু আইটেমের কাজ না করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর বজলার রহমানসহ সংশ্লিষ্ট এসও আলী হোসেন মিলে সমুদয় অর্থ ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী বজলার রহমান প্রতিটি দরপত্রে কাজের গোপন দর তার পছন্দের ঠিকাদারদের ৩% টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করেন ফলে তার মনোনীত ঠিকাদার ছাড়া অন্য ঠিকাদার দরপত্রে অংশগ্রহন করলেও কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই। এসব অনিয়মের কারণে প্রায় ৫ মাস আগে বঞ্চিত বিক্ষুদ্ধ ঠিকাদাররা প্রকৌশলী বজলার রহমানকে লাঞ্চিত করে অফিস ভাংচুর করেন। সেই সময় এ ঘটনায় প্রকৌশলী বজলার রহমান জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি জিডি দায়ের করেন।

এ বিষয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী আলী হোসেন এর নিকট জেলার বেশকিছু উন্নয়ন কাজের তথ্য চাওয়া হলে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতি ছাড়া কোন তথ্য দিবেন না বলে এপ্রতিবেদককে সাব সাব জানান। তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ বিষয় প্রশ্ন করলে, তিনি কোন সুউত্তর দিতে পারেনি।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বজলার রহমান বলেন, আমি কোন অনিয়ম করছি না। তবে নিয়ম অনুয়ায়ী কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রিয় পাঠক, চোখ রাখুন, আগামী বৃহষ্পতিবার, লালমনিরহাট সদর উপজেলাসহ বিলুপ্ত ছিটমহলযুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী ও মেকানিক্সদের হরিলুট কারবার নিয়ে থাকছে একটি বিশেষ প্রতিবেদন)।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here