আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট ॥ বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে সংযোগ ছাড়াই ২ লাখ টাকা বিলের ঘটনায় সেই ভুক্তভুগি সেই ৪৩ পরিবারকে নতুন সংযোগ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামের সেই ৪৩ পরিবারকে নতুন সংযোগ দেয়া হয়।
লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র আদিতমারী উপজেলা সাব-স্টেশন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত ১১ জুলাই দেশের বিভিন্ন অনলাইন ও পত্রিকায় সংযোগ ছাড়াই বিদ্যুৎ বিল শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে ইউএনওকে নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী রোববার(১৫ জুলাই) জেলা সম্বন্বয় কমিটির সভায় জোরালো আলোচনা উঠে। জনগনের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে জেলা সম্বন্বয় কমিটি। যার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো রাজশাহী অ লিক কার্যালয় প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানুর আলমসহ তিনজনকে সাময়িক ভাবে বরখাস্থ করেন। একই সাথে ভুয়া এসব বিল মওকুফ করেন।
জেলা সম্বন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওই ৪৩ পরিবারকে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়।যার ফলশ্রুতিতে এসব গ্রাহকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো’য় আবেদন করা ফরমের তথ্যানুযায়ী মঙ্গলবার(২৪ জুলাই) বিকেলে নতুন সংযোগ প্রদান করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। নতুন সংযোগ প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন, পল্লী বিদ্যুতের লালমনিরহাট অ লের ডেপুটি ম্যানেজার জাকির হোসেন, সহকারী জেনারেল ম্যানেজার(অপারেশন) ফারুক ইকবাল, সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (মেম্বার সার্ভিস) মনিরুজ্জামান মনির ও আদিতমারী সাব-স্টেশনের জুনিয়ার প্রকৌশলী গাউসুল আজম প্রমুখ।
ভুক্তভোগি ও এলাকাবাসী জানান, মহিষাশ্বহর গ্রামের বিদ্যুতহীন ৩৩ পরিবার বিদ্যুতের সংযোগের জন্য গত তিন বছর আগে আবেদন করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কালীগঞ্জ শাখায়। আবেদনের পর স্থানীয় বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১২/১৫ হাজার টাকা বুঝে নেন এবং তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তিন বছর তিন মাস অতিবাহিত হলেও খুঁটি, লাইন বা মিটার কোনটাই মিলে নি তাদের ভাগ্যে। এরই মাঝে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বে সরকারী খাতে চলে যায় এবং বিধি মতে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় তাদের নতুন সংযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। এতেই বিপাকে পড়েন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও দালাল চক্রটি।
এ দিকে গ্রাহকদের চাপের মুখে গত বছর ওই গ্রামের ৩৩টি পরিবারের জন্য ৩৩টি মিটার পাঠান দালাল সাইফুল ইসলাম। খুঁটি বা লাইন না পেয়ে গ্রাহকরা মিটার গুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এরই মাঝে গত জুন মাসে ওই গ্রামের ৪৩টি পরিবারের নামে জনপ্রতি ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার বিদ্যুৎ বিল পাঠায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো।
বিদ্যুৎ বিল দেখে হতভম্ভ পরিবারগুলো বিলের কাগজপত্র নিয়ে কালীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিস গিয়ে এর সমাধান দাবি করলেও কোন কাজ হয়নি। তাই এসব ভুয়া বিল বাতিল করে দ্রুত লাইন সংযোগ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে গত ১০ জুলাই বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এর পরেই বিভিন্ন অনলাইন ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে ভুক্তভোগিদের দাবি বাস্তবায়নে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
ভুক্তভোগি লুৎফর রহমান ও জসির মিয়া সংবাদ মাধ্যম কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সংবাদ মাধ্যমে আমাদের দাবি সরকারের কানে পৌছে যাওয়ায় আজ আমরা সংযোগ পেলাম। গ্রাম আলোকিত হয়েছে, ছেলে মেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছে। তবে নেসকোর দালালদের হাতিয়ে নেয়া টাকা উদ্ধার করে দিতে সরকারের উচ্চ মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
পল্লী বিদ্যুতের আদিতমারী সাব স্টেশনের জুনিয়ার প্রকৌশলী গাউসুল আজম জানান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকোর কাছে করা গ্রাহকদের আবেদন গুলো পল্লী বিদ্যুৎ গ্রহন করে ৪৩ পরিবারকে নতুন সংযোগ দেয়া হয়েছে। ওই গ্রামে আরো ৬০ পরিবারকে নতুন সংযোগ দেয়া হবে।