আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের সুযোগ না দেয়ায় তুষভান্ডার আর.এম.এম.পি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহফুজ হাসান সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। আত্মহত্যার চেষ্টার আগে মাহফুজ হাসানের পরিবারের লোকজন তার দেহ তল্লাশি করে একটি ‘চিরকুট’ উদ্ধার করেন। ওই চিরকুটে লেখা রয়েছে। “আমার মৃত্যুর জন্য আমার বিদ্যালয়ের হেড স্যার দায়ী। “বুধবার (৮আগষ্ট) দুপুরে এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের অভিবকরা তুষভান্ডার আর.এম.এম.পি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবী করেছেন। এর আগে সোমবার (৬আগষ্ট) সন্ধায় শিক্ষার্থী মাহফুজ হাসানের ভাড়া বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ২০১৮ সালের জেএসসি পরীক্ষায় কোন রকম টেস্ট পরীক্ষা না নিয়েই প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ৫৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে এবারের জেএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থেকে বাদ দিয়েছে। শিক্ষার্থী মাহফুজ হাসান লালমনিরহাট জেলায় ক্রিকেটে অল রাউন্ডার খেলোয়ার হিসাবে কৃতিত্ব অর্জন করায় সে বিকেএসপি’তে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পায়। যে কারণে প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় যথারীতি অংশ গ্রহণ করলেও তার ফলাফল সন্তোসজনক না থাকায় তাকে জেএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থেকে বাদ দেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মাহফুজ গত ২ আগষ্ট’১৮ তারিখে প্রধান শিক্ষক বরাবরে এক লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন যে, ক্রিকেট খেলোয়ার হিসেবে জেলা পর্যায়ে অনুশীলন করার কারণে পড়াশোনায় মনযোগী হতে পারেনি। যে কারণে তার প্রথম সাময়িক পরীক্ষা কিছুটা খারাপ হয়। সেই আবেদনের সাথে একটি অঙ্গীকারনামাও দিয়েছিল এবং সেখানে লিখেছে তাকে জেএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিলে সে নিশ্চিত জিপিএ-৫ অর্জন করবে। যে আবেদন পত্রটিতে মানবিক কারণে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ একজন খেলোয়ার হিসেবে মাহফুজকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দানের জন্য প্রধান শিক্ষক বরাবরে লিখিত আবেদনে সুপারিশ করেছিলেন।
সব প্রচেষ্টাই যখন ব্যর্থ, তখন শিক্ষার্থী মাহফুজ হাসান গত ৬আগস্ট সন্ধায় তুষভান্ডারস্থ ভাড়া বাসায় সেলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস টেনে আত্মহত্যা করার পথ বেছে নেয়। কিন্তু শিক্ষার্থী মাহফুজ হাসান তার বড় বোনের কারণে বেঁচে যায়। দরজায় লাথি দিয়ে ছিটকিনি ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে মাহফুজকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন। এর পরপরই শিক্ষার্থী মাহফুজ হাসানের পরিবারের লোকজন তার দেহ তল্লাশি করে একটি ‘চিরকুট’ উদ্ধার করেন। সেই ‘চিরকুটে’ মাহফুজ লিখেছে “আমার মৃত্যুর জন্য তুষভান্ডার আর.এম.এম.পি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হেড স্যার দায়ী। ইতি মাহফুজ হাসান, ০৬/০৮/২০১৮ইং ” আরেক অংশে লিখেছে “ উপজেলা চেয়ারম্যান স্যার আমার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাঁকে সুস্থ্য রাখেন। ইতি মাহফুজ হাসান,০৬/০৮/২০১৮ ইং।” পরে তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসা নেয়ার পর শিক্ষার্থী মাহফুজ হাসান সুস্থ্য হয়।
ঘটনা জানাজানি হওয়ার বকেদিন পর (৮আগষ্ট) অন্যান্য সংবাদকর্মীদের সাথে এ প্রতিনিধি মাহফুজদের বাসায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে পায়। পরে, তুষভান্ডার আর এম এম পি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নলনী কান্ত রায়ের সাথে তাঁর কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে গেলে তিনি মাহফুজ সম্পর্কে প্রথমে কোন রকম তথ্য দিতে অপারগতা দেখায় এবং সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন দেশে এ ধরণের অনেক মৃত্যু ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল হাসান এমনটাই জানালেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আজিজুল ইসলাম জানান ‘জেএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কাউকে বাদ দেয়ার এমন কোন বিধি বিধান আছে বলে আমার জানা নেই।’ শিক্ষার্থী মাহফুজ হাসানের বিষয়টা প্রধান শিক্ষক ভেবে দেখতে পারতেন।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মকবুল হোসেন জানান, এ ব্যাপারে তার থানায় কোন অভিযোগ আসেনি। তাই তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানন না। তারপরেও অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খবর৭১/এসঃ