লালমনিরহাটে দুর্যোগ সহনশীল সোনালী আঁশ ‘কেনাফ’র চাষ বাড়ছে

0
490

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট ॥ বন্যা, খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই সহনশীল আঁশ ফসল কেনাফের চাষ বাড়ছে লালমনিরহাটের চরা লগুলোতে। অনুর্বর ও পতিত জমিতেও সামান্য পরিচর্যা আর স্বল্প খরচে বেশী ফলন হওয়ায় পাটের পর সোনালী আঁশ উৎপাদনে কেনাফ চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক ও গবেষকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যা, খরার কারনে বহু জমি অনাবাদি পড়ে থাকে চর এলাকাগুলোতে। এসব অনুর্বর, পতিত জমিতে পাট গবেষণা ইনসটিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত পাটের মতই আঁশ জাতীয় ফসল কেনাফের সাথে এ অ লের কৃষকদের পরিচয় এক বছর আগে। দেখতে ঢেড়সের মত পাতা বিশিষ্ট আর পাটের গাছের মত লম্বা প্রকৃতির এই ফসল চাষ করতে তেমন কোন খরচের প্রয়োজন হয় না। সামান্য কিছু সার, সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না এই ফসল আবাদে। এছাড়া আগাছা নিড়ানোর প্রয়োজন হয় না বলে বাড়তি মজুরি খরচ করতে হয় না। তাই পরিচর্যা করতে হয় না বলে চাষীরা দেশী জাতের পাটের চেয়ে বেশী ফলন পাচ্ছেন কেনাফ চাষ করে।
সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের চর এলাকা কাচারির পাড় গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলী (৪৫) জানান, অনাবাদি পড়ে থাকে এমন দুই বিঘা জমিতে পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট এর দেয়া কেনাফের বীজ বপন করেছিলেন তিনি। বপনের পর কেনাফের চারাগুলো বন্যার পানিতে ৮/৯ দিন ডুবে ছিল। দেশী পাটের চারা হলে যা মরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেনাফের চারাগুলো তেমন যতœ না করেও বেড়ে উঠেছে এবং ভাল ফলনের আশা করছেন। একই গ্রামের জাহঙ্গিীর আলম (৩৫) জানান, গত বছর তিনি পরীক্ষামূলক এক বিঘা জমিতে কেনাফের চাষ করেছিলেন। এতে তিনি পাট বিক্রি করতে পেরেছিলেন প্রায় ১৬ মন। এ বছর তিন বিঘা জমিতে কেনাফের চাষ করেছেন। এ বছর আরো ভাল ফলন পাওয়ার আশা করছেন জাহাঙ্গীর। লাভজনক ও সহজে চাষযোগ্য ফসল হওয়ায় বেশী বেশী করে কেনাফ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। যারা কেনাফ চাষ করেননি তারাও এখন পাশের কৃষকের সাফল্য দেখে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এ ফসল চাষে।
একই এলাকার কৃষক আব্দুল আহাদ (৬৫) বলেন, “প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের কেনাফ চাষ করতে দেখেছি। কেনাফের গাছ দেশী পাটের তুলনায় অপেক্ষাকৃত শক্ত ও মোটা হওয়ায় তা গবাদি পশুও নষ্ট করতে পারেনি। সে অল্প কিছু খরচ করেই ভাল লাভ করেছে।” আগামী বছর তিনিও কেনাফ চাষ করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কেনাফ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা, বীজ সহায়তাসহ কৃষকদের প্রশিক্ষণ-পরামর্শ দিচ্ছে পাট গবেষণা ইনসটিটিউট। ‘চরা লে কেনাফের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের আওতায় এর সম্প্রসারনে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা।
রংপুর পাট গবেষণা আ লিক কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক সহকারী মোজাম্মেল হক জানান, ১২০ দিনেই কেনাফের ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া কেনাফের আঁশ পাটের চেয়ে তুলনামূলক মোটা, শক্ত ও উজ্জ্বল হওয়ায় তা বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রংপুর পাট গবেষণা আ লিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবুল ফজল মোল্লা জানান, লালমনিরহাটসহ গোটা উত্তরা লের চর এলাকাগুলোতে অনেক অনুর্বর জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকে। এসব পতিত জমিতে কৃষকরা কেনাফ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে দারুন লাভবান হতে পারবে। শুধু তাই নয় এ ফসল চাষে চরা লের জমিতে পলি জমে জমির উর্ববরতা বাড়ায়। ফলে পতিত জমিগুলো আর অনাবাদি পড়ে থাকবে না। এসব জমিতে অন্যান্য ফসল নিয়মিত আবাদ করতে পারবেন কৃষকরা। পাটের পর সোনালী আঁশ উৎপাদনে কেনাফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিপুল বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here