লালমনিরহাটে টার্কি মুরগি পালনে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অটোচালক অতুল

0
332

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ শখের বসে বিদেশী টার্কি মুরগি পালন করে এখন কোটিপতি হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন লালমনিরহাট পৌরসভাধীন খোচাবাড়ি (সাখোয়ারপাড়) গ্রামের অতুল রায় (৩৮)। তিনি পেশায় একজন অটোচালক হলেও কাজের ফাঁকে বিদেশী টার্কি মুরগি পালনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অতুল রায় আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। আর এ সাফল্যর পিছনে ভুমিকা রেখেছেন, স্থানীয় ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। অতুল রায় বিশ্বাস, এই খামারের আয়েই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তিনি কোটিপতি হবেন। তার খামারে উৎপাদিত হবে ডিম থেকে বাচ্চা।
জানা গেছে, লালমনিরহাট পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ড খোচাবাড়ি (সাখোয়ারপাড়) গ্রামের মৃত: অমূল্য রায়ের ছেলে অতুল রায়। পড়ালেখা এগোতে না পাড়লেও অতুল রায় অটো চালিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। ২০১২ইং সাল থেকে রংপুরে তার এক বড় ভাইয়ের বিদেশী টার্কি মুরগি খামারে তিনি যাওয়া আসা করে। সেখানে অনেক ডাঃ ও প্রশিক্ষক আসেন, তা দেখে দেখে সবকিছুর নিয়ম শিখে পরে বিদেশী টার্কি মুরগি পালনের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে টার্কি পালনের প্রতি উৎসাহ বেড়ে যায় তার। এমনকি ২০১৭ইং সাল পর্যন্ত অটো চালিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি বিদেশী টার্কি মুরগির খামার গড়ে তোলা আর নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভবছিল না। তার কাছে অর্থই ছিল বড় বাঁধা।
কিন্তু ১৯৮৮ইং সালে প্রতিষ্ঠিত ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও), ২০০৬ইং সাল থেকে লালমনিরহাটের গরীব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে উন্নতচরিত্র দৃষ্টিভঙ্গির সাথে যাত্রা শুরু করে। জনগণের কেন্দ্রবিন্দু ঊঝউঙ পরিকল্পনা বৈষম্য এবং অবিচার মুক্ত নিরলস প্রচেষ্টার পর নতুন স্থলগ্রহণ করেছেন। দুর্যোগপূর্ণ দুর্বল মানুষদের জীবনে তাদের অর্থপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও), লালমনিরহাট শাখায় ২০১৮ইং সালে অতুল রায়ের স্ত্রী গীতা রাণী সদস্য পদ লাভ করেন। যার সমিতি কোড-২৮, স্বজনী ইকো-মহিলা সমিতি দল, সদস্য নং-১৯। ওই এলাকার স্বজনী ইকো-মহিলা সমিতি দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইএসডিও কর্মী কামাল হোসেনকে অতুল রায় তার বিদেশী টার্কি মুরগি পালনের শখের কথা জানান। তিনি ইএসডিও লালমনিরহাট জোনাল অফিসার ও শাখা ব্যবস্থাপক এর সাথে আলোচনা করে অতুল রায়ের স্ত্রী গীতা রাণীকে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে দেন। সেই ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ১শত টি বিদেশী টার্কি মুরগির বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন। বিদেশী টার্কি মুরগি দানাদার খাদ্য ছাড়াও কচি ঘাস, কচরিপানা, কলমি শাক, বাঁধাকপি ও সবজি জাতীয় খাবার খায়। এতে তেমন একটা খরচ নেই। অটো চালিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর ঋণের কিস্তি দিচ্ছেন। আর এসব কাজের তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী গীতা রাণী।
অতুল রায় জানান, ২০১৮ইং সালে ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও), লালমনিরহাট শাখা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। সেই ৫০ হাজার টাকা দিয়ে রংপুর থেকে ১শত টি বিদেশী টার্কি মুরগি নিয়ে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট একটি টিনের চালা ঘরে গড়ে তুলেন। দীঘ ৬ মাসে পেরিয়ে বর্তমান তার খামারে ৭০টি টার্কি মুরগি রয়েছে। তারমধ্যে ৩০টি টার্কি মুরগি তিনি প্রায় ২৫/৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ৪ মাস পর থেকে খাওয়ার উপযোগী হয় এটি। ৬মাস বয়স থেকে টার্কি মুরগী ডিম দেয়। প্রতিটি টার্কি মুরগী একটানা ২২টি পর্যন্ত ডিম দেয়। বর্তমান ২৫/২৬টি টার্কি মুরগি প্রতিদিনেই ডিম দিচ্ছে। যার প্রতি ডিমের মুল্য ১শত টাকা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান প্রতিদিনে ২৫শত থেকে ২৬শত টাকা তিনি পাচ্ছেন। আর ক’দিন গেলে ৬৫টি টার্কি মুরগি ডিম দেবে। তার ফার্মে বাচ্চা ফুটানোর মেশিনের সংগ্রহ করতে পারলে প্রতিটি টার্কি মুরগি বাচ্চা ৫শত টাকা বিক্রি হবে। তখন প্রতিদিনেই খরচ মিটিয়ে ২৫/৩০ হাজার টাকা আয় হবে। এছাড়াও এক একটি টার্কি মুরগীর ওজন ৮/১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি কেজি টার্কি মুরগীর মাংস বিক্রি হয় ৫’শ থেকে ৬’শ টাকায়। ডিম দেওয়া শেষে এসব টার্কি মুরগি বিক্রি করলেও সেখান থেকে আসবে কয়েক লক্ষ টাকা আসবে।
অতুল রায় মনে করেন, বেকারত্ব দূর করতে টার্কি পালন খুবই ভালো পরিকল্পনা। তিনি তার ফার্মের পরিধি ও বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ এনজিও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেলে আরও ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন বলে জানান। তার বিশ্বাস, এই খামারের আয়েই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তিনি কোটিপতি হবে বলে স্বপ্ন দেখছেন।
ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও), লালমনিরহাট শাখা ব্যবস্থাপক নুর ইসলাম বলেন, অতুল রায়ের স্ত্রী আমাদের ইএসডিওর অন্যতম একজন সদস্য। প্রথমে বিদেশী টার্কি মুরগি পালনের জন্য আমাদের ইএসডিও থেকে ৫০হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করে। এই ঋণটি পরিশোধ হলে তার ফার্মে বাচ্চা ফুটানোর মেশিনে কেনার জন্য ঋণ দেওয়া হবে। টার্কি মুরগির বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা হলে তার কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন পুরণের জয়যাত্রা সূচনা হবে। শুধু অতুল রায় নয়, এলাকার অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামারী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচীর মাধ্যমে আত্মসামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইএসডিও কর্মক্ষেত্রে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত সমাজকে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান জানান, জেলাজুড়ে প্রায় ৭০/৮০টি বিদেশী টার্কি মুরগির খামার রয়েছে। টার্কি একটি বড় আকারের গৃহপালিত পাখি। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশে পশু-পাখি পালন করা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভাল। যে কেউ টার্কি মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও রোগবালাই নাশক ভ্যাকসিন উপজেলা অফিস থেকে প্রদান করা হয়। সহজশর্তে ব্যাংক ঋণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সহযোগিতা পরামর্শ সেবা দিয়ে মানুষের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলে মনে করছেন।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here