লালমনিরহাটে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ বর্জন ও বিক্ষোভ মিছিল

0
210

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট::
অনৈতিক ভাবে বদলি দেয়া দুই শিক্ষককে ফেরত দেয়ার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত ক্লাশ বর্জন করেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কিসামত চন্দ্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে সিক্ষার্থীরা। শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ে এসে ক্লাশ বর্জন অব্যহত রেখে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ আগষ্ট) সকালে শিক্ষকদের ফেরত না দেয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন ঘোষনা করে শিক্ষার্থী ও ম্যানেজিং কমিটি।
শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসী জানান, উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের কিসামত চন্দ্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ২৪৬ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য ৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। এরই মধ্যে গত বুধবার (২৯ আগষ্ট) হঠাৎ ওই বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক মোসলেহা বেগমকে মহিষখোচা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষক সেলিনা বেগমকে কুমড়িরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাময়িক পাঠদানের অবৈধ অনুমতি প্রদান করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এ দুই শিক্ষক তাদের নিজের সুবিধার জন্য তদবির করে নিজ এলাকায় সাময়িক পাঠদানের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

এ দিকে কিসামত চন্দ্রপুর সরকারী বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে পড়াশুনা বিঘ্নঘটছে বলে অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা জরুরী ভাবে বুধবার বিকেলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কিন্তু সেখানে সমাধান না হলে অভিভাবকরা পরদিন বিদ্যালয়ের ক্লাশ বর্জনের ঘোষনা দেন। সেই থেকে শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মত ক্লাশ বর্জন করে বিক্ষোভ করছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়টির ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী রেবেকা আক্তার, ৪র্থ শ্রেনীর আর্জিনা, আরফিনা ও পরিমল বাংলানিউজকে জানায়, তাদের গণিত ও প্রাক প্রাথমিকের দুই শিক্ষককে ফেরত না দেয়া পর্যন্ত তাদের ক্লাশ বর্জন চলবে।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, সাম্প্রতিক সময় উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্ব নিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এই শুন্যপদ পুরনের নামে বদলি বাণিজ্যে মেতে উঠেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এন এম শরীফুল ইসলাম। বিধি সম্মত না হলেও ৫-১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অর্ধশত শিক্ষককে বাড়ির পাশের বিদ্যালয়ে সাময়িক পাঠদানের অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষকরা।

কিসামত চন্দ্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান জানান, অফিস আদেশ ছাড়াই দুই সহকারী শিক্ষককে অন্যত্র পাঠাদানের জন্য পাঠান উপজেলা শিক্ষা অফিসার। এ দুই শিক্ষককে ফেরতের দাবিতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জন করেছে।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বদিয়ার রহমান জানান, শিক্ষককে বদলি বা ডেপুটিশনে দেয়ার ক্ষমতা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নেই। শিক্ষকদেরকে টাকার বিনিময়ে নিজের এলাকায় পাঠদানের অবৈধ অনুমতি দিয়েছেন। যা কোন অফিস আদেশে নয়। শিক্ষা অফিসারের এ অবৈধ বদলি বাণিজ্য বন্ধ ও শিক্ষকদের স্ব স্ব বিদ্যালয়ে ফেরত না দেয়া পর্যন্ত ক্লাশ বর্জন চলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম ঘুষ নেয়ার কথা অস্বীকার করে জানান, চলতি দায়িত্বের কারনে বেশ কিছু পদ শুন্য হয়। তাই শিক্ষকদের চাহিদা অনুযায়ী (যার যে বিদ্যালয়ে পছন্দ) সাময়িক পাঠদানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ অনুমতি দেয়ার সাংবিধানিক ক্ষমতা না থাকলেও শিক্ষকদের সুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে এটা করা হয়েছে। যা সাময়িক, স্থায়ী নয়। তাই এটার কোন অফিস আদেশও নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন জানান, প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষককে অন্যত্র পাঠদানের অনুমতি দেয়া ঠিক করেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসাদুজ্জামান জানান, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here