লালমনিরহাটের দিনমজুর স্বাধীন বাবু’র ঢাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত

0
298

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ দারিদ্রের কষাঘাতে নিত্য সংগ্রাম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হলেও অর্থভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দিনমজুর স্বাধীন বাবু’র। উচ্চ মাধ্যমিকে ফরম পুরনের সময় স্থানীয় এনজিও থেকে নেয়া ঋন পরিশোধ না হওয়ায় নতুন ঋনও মেলাতে পারছে না অদম্য এ মেধাবী। স্বাধীন বাবু লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলের পলাশী ইউনিয়নের উত্তর টেপাপলাশী গ্রামের দিনমজুর জহির আলীর ছেলে।
স্বাধীনের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, বসত ভিটা ছাড়া আবাদি কোন জমি নেই দিনমজুর জহির আলীর। সারা দিন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে পাওয়া দুই/আড়াইশত টাকায় ৫ সদস্যের সংসারে খেয়ে না খেয়ে চলে। উপর্যপরী তিন ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেও যথারীতি হিমশিম খাচ্ছেন জহির আলী। অর্থভাবে বড় ছেলে স্বাধীন বাবু’র লেখাপড়া এসএসসি পরীক্ষার আগে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে বাবার সাথে দিনমজুরী করে লেখাপড়া চালিয়ে যায় স্বাধীন বাবু। স্বাধীন নিজেকে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন পুরনে প্রধান অন্তরায় অর্থ। প্রতিনিয়ত অর্থের কাছে বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে তার লালিত স্বপ্ন। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনের সময় অর্থাভাবে বন্ধ হতে বসা লেখাপড়া সচল করতে স্থানীয় এনজিও গ্রামীন ব্যাংক থেকে চরাসুদে বাবুকে ঋন তুলে দেন তার মা ছামিনা বেগম। সেই টাকায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নামুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ ৪.০০ পয়েন্ট অর্জন করেন। এরই মাঝে বাবা ছেলের দিনমজুরী আয়ে সাপ্তাহিক কিস্তির মাধ্যমে তা পরিশোধ করেন। একই ভাবে এইচএসসি পরীক্ষার সময় ঋন নিয়ে নামুড়ি মহাবিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৮৩ পয়েন্টে কৃতিত্ব অর্জন করলেও সেই ঋন পরিশোধ হয়নি তাদের। বাবা ছেলের দিনমজুরী আয়ে স্বাধীন বাবু’র পাশাপাশি আরো দুই ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ চলে। স্বাধীনের একমাত্র ছোট বোন জোহরা খাতুন ৮ম শ্রেনী আর ভাই শাকিল হোসেন পড়ছে ৪র্থ শ্রেনীতে। তাদের পড়াশুনার খরচ মিটিয়ে যা থাকে তা দিয়েই চলে তাদের ৫ সদস্যের সংসার। স্বাধীন বাবু তার স্বপ্ন পুরনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৫৭১ তম স্থান অধিকার করে। আগের ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় নতুন করে ঋন দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা আকাশ ভেঙ্গে পড়ে স্বাধীনের মাথায়। তার স্বপ্ন পুরনের সংগ্রাম মাঝ পথে এসে মাত্র ২৫ হাজার টাকার জন্য পরাজিত হতে বসেছে। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে কে দিবে এত টাকা। কে তাকে ভর্তি করাবে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নয় তো মাঝ পথেই থেমে যাবে তার জিবন সংগ্রাম। ভেঙ্গে যাবে লালিত স্বপ্ন।
স্বাধীন বাবু জানান, জিবন মানে সংগ্রাম। দারিদ্রের সাথে নিত্য সংগ্রাম করে মাঝ পথে এসেছি। এখানে থেমে যেতে চাই না। চা বিক্রেতা মোদি যদি ভারতে প্রধানমন্ত্রী হতে পারে আমি দিনমজুরী করে কেন অর্থনীতিবিদ হতে পারব না। সাহায্য না দিলেও ঢাবিতে ভর্তি হতে সহজ শর্তে ২৫ হাজার টাকা ঋন চান স্বাধীন বাবু। স্বাধীন বাবু’র সাথে যোগাযোগ – ০১৭৪০০২৪০৭৮।
স্বাধীনের বাবা জহির আলী জানান, দিনমজুরী করে যা আয় হয় তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ যোগান দেন। ফরমপুরন বা বড় ধরনের খরচের সময় ঋন করেন এবং তা কিস্তিতে পরিশোধ করেন। আগের ঋন অপরিশোধিত থাকায় নতুন ঋন পাচ্ছেন না তিনি। ফলে স্বাধীন বাবুকে ঢাবিতে ভর্তি করাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ছেলের স্বপ্নপুরনে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের দাবি জানান তিনি।
নামুড়ি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভার) এইচ এম শরিফ মাহমুদ জানান, দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র হিসেবে স্বাধীনকে বেশ আর্থিক সহযোগিতা করা হত। আগামীতে আর্থিক সহযোগিতা পেলে সে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে। এজন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here