রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যার ঘটনায় জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিচারের মুখোমুখি

0
337

খবর৭১:মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গুলি হত্যার ঘটনায় জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিচারের মুখোমুখি হবেন। মিয়ানমার সরকারের এক মুখপাত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাখাইনের ইন দিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়। খবর আল জাজিরা।

নিহত রোহিঙ্গাদের দু’জনকে বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে এবং বাকি আটজনকে গুলি করে সেনা সদস্যরা হত্যা করে। রোহিঙ্গাদের হত্যা করে লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়। ইন দিন গ্রামের স্থানীয় বৌদ্ধরাসহ ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনায় সেনা সদস্য এবং আধাসামরিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও জড়িত ছিলেন। এই ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে রয়টার্স।

রোববার মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জও হায় বলেন, সাত সেনা সদস্য, তিন পুলিশ এবং ছয়জন স্থানীয় বাসিন্দার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তাদের এই পদক্ষেপের সঙ্গে রয়টার্সের রিপোর্টের কোন সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার দাবি রয়টার্সের রিপোর্টের অনেক আগেই তারা এ নিয়ে তদন্ত করছিল। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, ওই দশজন একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য। ওই দলে ২শ জন সদস্য ছিল। ইন দিন গ্রামে ওই সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

কিন্তু রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাছাকাছি একটি বীচে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেয়া শত শত মানুষের মাঝখান থেকে সামরিক বাহিনী ওই দশজনকে ধরে নিয়ে আসে। তাদের হাত পেছনে বেধে, হাটু গেরে মাটিতে বসানো হয় এবং গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে একটি গণকবরে মাটি চাপা দেয়া হয়। বর্তমানে মিয়ানমারে সফর করছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরিস জনসন। তার এই সফরের মধ্যেই মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।

রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্থানীয় বৌদ্ধ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অনুসন্ধান করে জানা গেছে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়নি। অপরদিকে, প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা মুসলিমরা জানিয়েছেন, কাছাকাছি একটি বীচ থেকে ১শ জনের মধ্য থেকে মিয়ানমার সেনারা ১০ জনকে ধরে নিয়ে যায়।

রাখাইনে গত আগস্টে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য যাচাইয়ে স্বাধীন গণমাধ্যমকে রাখাইনে প্রবেশেও বাধা দিচ্ছে তারা।

রোববার নেইপিদোতে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। ওই সাক্ষাতে জনসন হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মিয়ানমারের ফেরার ব্যবস্থা করতে সু চির প্রতি আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন নোবেল বিজয়ী সু চি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছেন তিনি।

সেপ্টেম্বরে ওই ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যাকাণ্ডের তিনটি ছবি উদ্ধার করে রয়টার্স। একটি ছবিতে দেখা গেছে, একসঙ্গে ১০ জন রোহিঙ্গাকে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন। পেছন থেকে তাদের হাত বেধে রাখা হয়েছে। এদের সবাইকে গুলি করে হত্যা করে সেনাবাহিনী। তারপরেই একটি গণকবরে মাটি চাপা দেয়া হয়। গত ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যায় দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা জড়িত বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করে নেয় সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here