রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটিই জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি

0
242

খবর ৭১ঃপররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মিয়ানমার জান্তা সরকারের নির্যাতনে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটিই জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি। এসব আশ্রিতদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মাত্র ৪ মাসের মধ্যে তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে সক্ষম হয়েছে। চুক্তির শর্তানুযায়ী মাঠপর্যায়ে প্রত্যাবাসনসংশ্লিষ্ট প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম রয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

একই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী তথা রোহিঙ্গাদের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান রাজনৈতিক ও অথনৈতিক বৈষম্য এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় রাখাইন কমিউনিটির অত্যাচার নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে শরণার্থী হিসেবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণ করেছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার জান্তা সরকারের সামরিক বাহিনীর পরিচালিত নির্মম অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৭ লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, এত অল্প সময়ে বিপুলসংখ্যাক রোহিঙ্গাদের আগমনে দেশের আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। এর আগে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ওই নিজ দেশীয় বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে আরও ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নেয়। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এসব রোহিঙ্গাদের ওপরে মিয়ানমার জান্তা সরকারের নির্মম নির্যাতন নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা ও তার আশু প্রতিকারের ব্যাপারে বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারের সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশালার নিঃশর্ত. পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি তা সত্ত্বেও এ কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে মাঠপর্যায়ে একাধিক ওয়ার্কি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে যথাযথ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। আশা করা যায়, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শিগগিরই রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে এবং দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে।

সফুরা বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বর্তমানে পৃথিবীর ৫৮টি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৮টি নতুন মিশন চালু করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ৭টি নতুন মিশন স্থাপনের বিষয়টি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তার মধ্যে রুমানিয়ার বুখারেস্ট, ভারতের চেন্নাই ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নতুন মিশনের কার্যক্রম শিগগিরই চালু করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়াও আফগানিস্তানের কাবুলে, সুদানের খার্তুম, সিয়েরা লিওনের ফ্রিটাউন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অদূর ভবিষ্যতে নতুন মিশন খোলার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদে কোনো দূতাবাস বন্ধ হয়নি।

সামশুল হক চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা হলো সার্ক, যা ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় সার্ক সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। সার্কের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। সুতরাং, সার্কের আওতায় এর সদস্য দেশগুলোর শাসনব্যবস্থায় নির্বাচিত ও অনির্বাচিত কোনো সরকারের ব্যাপারে কোনোরূপ মতামত প্রদান বা কোনো পক্ষ অবলম্বন করার কোনো সুযোগ নেই।

খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here