রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা সুপরিকল্পিত-সমন্বিত: যুক্তরাষ্ট্র

0
347
FILE PHOTO: Men walk at a Rohingya village outside Maugndaw in Rakhine state, Myanmar October 27, 2016. To match Special Report MYANMAR-FACEBOOK/HATE REUTERS/Soe Zeya Tun/File Photo

খবর ৭১ঃ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত নৃশংসতার অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির সরকারি গবেষণায় জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নৃশংসতায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সুপরিকল্পিত এবং সমন্বিত অভিযান চালিয়েছে। জাতিসংঘ যেটিকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে আখ্যা দিয়েছে।
রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি সোমবার প্রকাশিত হয়েছে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ন্যায্যতা হিসেবে দেশটি এসব তথ্য ব্যবহার করতে পারে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।
কিন্তু মার্কিন প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাবিরোধী নৃশংসতাকে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেনি। দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড বিতর্ক রয়েছে, যে জন্য প্রতিবেদনটি প্রকাশে মাসখানেক দেরিও হয়েছে।
২০ পাতার প্রতিবেদনটি বলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেখানে চূড়ান্ত, বড়পরিসরের ও ব্যাপক বিস্তৃত সহিংসতা পরিচালিত হয়েছে, যা তাদের আতঙ্কগ্রস্ত করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।
জরিপ থেকে জানা গেছে, সামরিক অভিযানের ব্যাপ্তি ও পরিসর আভাস দিচ্ছে- মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযান ছিল সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় বিদ্রোহীদের হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান।
সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল। সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা তখন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের কথায় পাওয়া যায় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার বলে আসছে, তাদের ওই লড়াই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে নয়।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকারের ওই দাবি নাকচ করে দিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাখাইনে যে পরিমাণ নিরাপত্তাঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে, তার তুলনায় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার পার্থক্যটা খুবই স্পষ্ট।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলছে, রাখাইনে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, আর যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে তা গণহত্যার অভিপ্রায়কে অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টার সমতুল্য।
গত বছর গঠিত জাতিসংঘের এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্যরা বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা ৮৭৫ রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়ে, নথিপত্র, ভিডিও, ছবি এবং স্যাটেলাইট ইমেজ পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
তদন্তকারীরা দেখতে পেয়েছেন, রাখাইনে সেনাবাহিনীর নিপীড়নের যে ধরন, তা শান ও কাচিন অঞ্চলে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর ওপর দমনপীড়নের ধরনের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।
নির্যাতিত রোহিঙ্গা আর প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে তুলাতলি গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানের লোমহর্ষক বিবরণ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
সেখানে দেখানো হয়েছে, পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করা রোহিঙ্গাদের কীভাবে ধাওয়া করে ধরা হচ্ছে, সৈন্যরা প্রথমে তাদের গুলি করছে, তাতেও মৃত্যু না হলে প্রত্যেকের গলা কেটে ফেলা হচ্ছে। তার পর তারা নজর দিচ্ছে নারী ও শিশুদের দিকে।
ওই গ্রামে শিশুদেরও কীভাবে গুলি করে মারা হয়েছে, মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে নদীতে বা আগুনে ছুড়ে ফেলা হয়েছে- সেসব ভয়ঙ্কর বিবরণও এসেছে প্রতিবেদনে।
এ হত্যাযজ্ঞ শেষে মেয়েদের ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে গ্রামে। পালা করে ধর্ষণ করার পর কাউকে কাউকে হত্যা করা হয়েছে। বুড়ো, শিশু আর নির্যাতিত নারীদের ঘরের ভেতরে আটকে আগুন দেয়া হয়েছে বাড়িতে।
রাখাইনের তুলাতলি গ্রামের এই বর্বরতাকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জঘন্যতম অপরাধের নজির হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের এই তদন্তকারী দলের সদস্য রাধিকা কুমারস্বামী বলেন, রাখাইন, শান আর কাচিন রাজ্যে বর্বরতার যে মাত্রা সেনাবাহিনী দেখিয়েছে, তার সঙ্গে তুলনা করার মতো আর কোনো ঘটনা তিনি দেখেননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here