রেকর্ড অব্যাহত: পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নও ফাঁস

0
547

খবর ৭১ঃ চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের রেকর্ড অব্যাহত রয়েছে। টানা সাত বিষয়ে ফাঁসের ধারবাহিকতায় আজ ফাঁস হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র।

মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দেয়ার খবর এসেছে।এরমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও দিনাজপুরের বিরলে ফাঁসকৃত প্রশ্নসহ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় এসএসসি পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে চলন্ত বাসে ৫০ জন পরীক্ষার্থীর কাছে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়।

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম নগরের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে একটি বাসে করে পরীক্ষা দিতে আসে চট্টগ্রাম আইডিয়াল স্কুল পটিয়া শাখার প্রায় ৫০ জন পরীক্ষার্থী। কেন্দ্রে ঢোকার আগে চট্টগ্রাম ওয়াসা মোড়ের কাছে জড়ো হয় তারা। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। আটক করে আটজনকে।

এছাড়া ফটিকছড়ির একটি কেন্দ্র থেকে পাঁচজন এবং পুলিশ লাইন্স কেন্দ্র থেকে আরও এক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আটক করা হয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ আলী জানান, সবাই পরীক্ষার্থী হওয়ায় তাদের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা শেষে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কেন্দ্রে বিতরণ করা প্রশ্নের সঙ্গে ওই প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল রয়েছে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে চার মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার মির্জাপুর কলেজ কেন্দ্রের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. আজগর হোসেন এ সাজা দেন।

জাকির হোসেন মির্জাপুর উপজেলার আনাইতারা ইউনিয়নের খাগুটিয়া গ্রামের আ. রহমানের ছেলে।

সূত্র জানায়, সকালে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর আগে মির্জাপুর কলেজ কেন্দ্রের বাইরের মাঠে জাকির হোসেন তার মোবাইল ফোনে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র তার চাচাতো বোনসহ আরও কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করছিলেন।

এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করে।

অন্যদিকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় পরীক্ষা শুরুর আগে ফাঁসকৃত এসএসসির পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্রসহ সবুজ (৩৫) নামে এক অভিভাবককে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়ন সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ২নং গেটের সামনে থেকে প্রশ্ন ও উত্তরপত্রসহ তাকে আটক করা হয়।

আটক সবুজ গাজীপুরের শ্রীপুরে আবদার এলাকার আবদুস সালামের ছেলে।

ভালুকা মডেল থানার এএসআই খলিল জানান, সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে অভিভাবক সবুজ সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ২নং গেটের সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় সবুজকে ডাকলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর পর আটক করে তার মোবাইলে এসএসসির ফাঁসকৃত পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পাওয়া যায়। আটক অভিভাবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে বলে জানান এএসআই।

এছাড়া দিনাজপুরের বিরলে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্ন ও উত্তরপত্র মুঠোফোনে দেখার সময় তিন পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

আটক তিন ছাত্র হল-উপজেলার ফরক্কাবাদ ইউপির ফরক্কাবাদ মাঝাপাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে নুর ইসলাম নয়ন, মঙ্গলপুর ইউপির ধনগ্রামের শাহীনুর ইসলামের ছেলে মাহফুজ আলম এবং মোহনপুর গ্রামের আনছারুল আজিমের ছেলে রিয়াদ উল ইসলাম।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে পরীক্ষাচলাকালীন বিরলের ধুকুরঝাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে থেকে তাদের আটক করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম রওশন কবীর।

এছাড়া ধর্মপুর ইউসি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক শিক্ষার্থীকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে।

১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার পরীক্ষায় ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে আর শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই তা মোবাইলের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছে।

চলতি এসএসসি পরীক্ষায় এ পর্যন্ত আট দিনে আটটি বিষয়েরই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, যা প্রশ্নপত্র ফাঁসের রেকর্ড ।

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ, পরীক্ষার্থীদের আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষাকক্ষে বসা এবং কেন্দ্রের ভেতর মোবাইল ফোন না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই কাজে আসেনি। পরে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণাতেও লাভ হয়নি। পরীক্ষার দিন ইন্টারনেট সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধের চেষ্টা করেও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যায়নি।

খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here