রুহুল আমিন হাওলাদারকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

0
290

খবর৭১ঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত করার কথা বলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার দলের মাঠপর্যায়ের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের যে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, তা ফেরত নেয়ার জন্য তারা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন।

রুহুল আমিন হাওলাদারের গুলশানের বাসায়, তার তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়িক কার্যালয়, এমনকি বনানীর পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়- সর্বত্র হানা দিচ্ছেন টাকা দিয়েও মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত নেতারা। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। টাকা ফেরত দেয়ার ভয়ে অনেকটাই এখন আত্মগোপনে রয়েছেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। আর প্রকাশ্যে আসলে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীকে সার্বক্ষণিক পাহারায় রাখছেন তিনি।

নীলফামারী-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট ছাড়াই এমপি হন তিনি। এবারও তাকে মনোনয়ন দেয়ার কথা বলে ১ কোটি টাকা নেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম করে তার কাছ থেকে এই টাকা নেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শওকত চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিয়ে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলুকে। তিনি চট্ট্রগামের মানুষ, চট্টগ্রামের একটি আসন থেকে বিনা ভোটে জাতীয় পার্টির এমপি হন।

বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়েও মনোনয়ন না পেয়ে মঙ্গলবার শওকত চৌধুরী বানানীর এরশাদের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার টাকা ফেরত দিয়ে স্যারকে (এরশাদ) এবং হাওলাদারকে সৈয়দপুর যেতে বলবেন। না হলে পুলিশও তাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না, বলে গেলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে দেখে নেব। তাকে ৬০ লাখ টাকা দিয়েছি। যখন যা চেয়েছে সব দিয়েছি, কোনো অনুষ্ঠানে টাকা দিইনি? যখন সৈয়দপুর গেছেন ওনার জন্য কী করিনি? আমার টাকা ফেরত দিতে বলিয়েন’।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী মামুনুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের যদি মনোনয়ন দেয়া নাই হবে, তাহলে কেন এত টাকা নিল। এত টাকাইবা খরচ করানো কেন হলো’। তিনি এ সময় টাকা ফেরত দাবি করেন।

জয়পুরহাট-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় ছাত্রসমাজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম রিপন যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনের জন্য প্রায় কোটি টাকার মতো খরচ করেছি। নেতারা মনোনয়ন দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন। মনোনয়ন যদি নাই দেয়া হবে তাহলে এভাবে টাকা নিলেন কেন?

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ক্রীড়া সংগঠক জামাল রানা বলেন, মহাসচিব ১ কোটি টাকা চেয়েছেন। দিতে পারিনি তাই মনোনয়ন দেননি।

তিনি আরও বলেন, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন। সবার আগে নিজের এবং নিজের স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্নার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন। এরপর যারা টাকা দিয়েছে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যারা টাকা দেননি তারা জনপ্রিয় হলেও মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এদিকে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে দল ছাড়তে শুরু করেছেন দলটির তৃণমূলের নেতারা। ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও পার্টি চেয়ারম্যানের যুববিষয়ক উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার ইতিমধ্যে এ অভিযোগ এনে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।

লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় জাতীয় পার্টি ছেড়ে মঙ্গলবার বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণবিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা শাখার সদস্যসচিব রোকনউদ্দিন বাবুল।

লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৃণমূল পর্যায়েও প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে এবার মনোনয়ন দেয়া হয় অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়াকে। তিনি পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা। অথচ তার শ্বশুর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হন।

জিয়াউল হক মৃধা অভিযোগ করেন, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পার্টির মহাসচিব তাকে বঞ্চিত করে তার জামাতা রেজাউল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়। অথচ রেজাউলের এলাকায় কোনো পরিচিতি নেই, জনভিত্তিও নেই।

জানা গেছে, রেজাউল ইসলাম ভুইয়াকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে- এ খবরে জিয়াউল হক মৃধার সমর্থকরা মঙ্গলবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা সোয়া ১১টায় সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া মোড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

ফলে মহাসড়কের দুপাশের কয়েক কিলোমিটার তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর জিয়াউল হক মৃধা এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, মহাজোট থেকে রেজাউল ইসলাম ভূইয়ার বদলে যেন সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। অন্যথায় সরাইল-আশুগঞ্জে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here