রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে মোংলায় বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার রিগনের মরদেহ রবিবার দেশে আসছে

0
242

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ইতালির নাগরিক ফাদার মারিনো রিগনের মরদেহ রবিবার সকালে দেশে আনা হচ্ছে। এই বিদেশী বন্ধু ফাদার রিগান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সেবা প্রদানের পাশাপশি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ফাদার রিগনের অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর এক বছর পর সরকারি ভাবে তাঁর মরদেহ ইতালি থেকে দেশের আনার পর রবিবার দুপুরে বাগেরহাটের মোংলার শেলাবুনিয়ায় গার্ড অব অনার প্রদানের পর সেন্ট পল্স গীর্জার পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এদিন সকালে মোংলা উপজেলা পরিষদ মাঠে ফাদার মারিনো রিগনের সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ দুইয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সুডানা ইকরাম চৌধুরী জানান, রবিবার ভোর ৫টায় তার্কিশ এয়ারলাইন্স’র ফ্লাইট ঞক-০৭১২-তে করে মৃত্যুর এক বছর পরে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার মারিনো রিগনের মরদেহ ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌছাবে। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় হেলিকপ্টার যোগে ফাদার রিগনের মরদেহ বাগেরহাটের মোংলায় পাঠানো হবে। ফাদার রিগনকে বহন করা হেলিকপ্টার মোংলার শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে অবতরনের পর সকাল সাড়ে ৯টায় ফাদার রিগণের মরদেহ আনা হবে মোংলা উপজেলা পরিষদের মাঠে। সেখানে উপজেলা প্রাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার মারিনো রিগনকে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুই ঘন্টা উপজেলা পরিষদের মাঠে রাখার পর মরদেহ নেয়া হবে ফাদার রিগনের প্রতিষ্ঠিত সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয় এবং সেন্ট পল্স হাসপাতালে। সবশেষে শেলাবুনিয়ার সেন্ট পল্স গীর্জার সামনে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে সেখাইে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় ফাদার মারিনো রিগনকে সমাধিস্থ করা হবে। ফাদার রিগনের মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ফাদার রিগনকে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালে সরকার তাঁকে ঋৎরবহফং ড়ভ খরনবৎধঃরড়হ ডধৎ ঐড়হড়ঁৎ পদকসহ বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।
ইতালির নাগরিক ফাদার রিগন ১৯২৫ সারের ৫ ফেব্রুয়ারী সেদেশের ভিচে ায় জন্মগ্রহন করেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সে খৃষ্ট্রধর্ম প্রচারে ১৯৫৩ সালের ৭ জানুয়ারী তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাসহ অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সেবা প্রদানের পাশাপশি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেশ স্বাধীনের পর তিনি মোংলার শেলাবুনিয়ায় স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। ফাদার রিগন মোংলায় থাকা অবস্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলাচরের শক্তি হারিয়ে ফেললে ২০১৪ সালে তার ভাই এসে তাঁকে ইতালিতে নিয়ে যান। ইতালিতে মৃত্যু হলে তার লাশ বাগেরহাটের মোংলার সেন্ট পল্স গীর্জার পাশে সমাহিত করতে হবে এই শর্তে তিঁনি ভাইয়ের সাথে যেতে রাজী হন। গত বছরের ২০ অক্টোবর ইতালির ভিচে ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধৃ ফাদার রিগন। দীর্ঘ সময়ে মোংলায় অবস্থানকালে ফাদার মারিনো রিগন ইতালিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলিসহ ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, লালন সাঁইয়ের তিনশত প াশটি গান, জসীম উদ্দীনের নক্সীকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট ছাড়াও এদেশের খ্যাতিমান কবিদের অসংখ্য কবিতা। অন্যদিকে ফাদার রিগন বাগেরহাট জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট পল্স হাসপাতালসহ প্রতিষ্ঠা করেন ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্ট পল্স সেলাই কেন্দ্র যেখান থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হতো নক্সীকাঁথা। ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’র সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস রিগণ সম্পর্কে বলেছেন তিনি ইতালিতে বাংলাদেশের অঘোষিত রাস্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফ্রান্সিস সুদান হালদার বলেছেন ফাদার রিগন নিজেই বলতেন ‘আমার মস্তকে রবীন্দ্রনাথ- অন্তরে রয়েছে লালন’।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here