মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) :
ঢাকা সাভারের বহুল আলোচিত মর্মস্পর্শী হৃদয় বিদারক রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনার ৫ বছর পূর্তি হয়েছে ২৪ এপ্রিল। কিন্তু আজও খোঁজ মেলেনি চৌগাছার সাবিনা খাতুনের (১৮)। সন্তান নিখোঁজ হওয়া পরিবারে এখনও মাঝে মধ্যে আত্মবিলাপ আর কান্নার রোল ভেসে আসে। বাবা মা চাতক পাখির মত পথ চেয়ে আছে তাদের প্রিয় সন্তান বাড়িতে ফিরবে আর বাবা মাকে ডেকে বুকে জড়িয়ে ধরবে। সেই দূর্ঘটনার ৫ বছর অতিক্রম হলেও আজ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি ওই পরিবারের খোঁজ রাখেনি। তাই এক বুক হতাশা নিয়ে দিন মাস এমনকি বছরের পর বছর পার করছেন সাবিনার বৃদ্ধ পিতা মাতা।
সূত্র জানায়, উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের গুয়াতলি গ্রামের সাবিনা খাতুন (১৮)। পিতা মঈনুদ্দিন। ২০০৯ সালে চট্রগ্রাম জেলার মেহেদী নগরের নাসিরউদ্দীনের ছেলে জাহিদুল ইসলামের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে সাবিনার বিয়ে হয়। বিয়ের পর পরই জাহিদুল ইসলাম স্ত্রী সাবিনাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকা সাভার এলাকায় ঘরভাড়া করে তারা বসবাস শুরু করে। আশুলিয়া এলাকার একটি গার্মেন্টসে জাহিদুল ইসলাম চাকুরি নেয়। এরপর চলে আসে রানা প্লাজায়। সংসারে বাড়তি রোজগারের আশায় একই গার্মেন্টসে ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে চাকুরি নেয় সাবিনা। প্রায় তিন বছর সেখানে হেলপার পদে চাকুরি করে। দুজনের স্বপ্ন ছিল পরিশ্রম করে তারা নির্ভরশীল হবে। হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে গেল তাদের জীবন নামক আকাশ। ২৪ এপ্রিল ২০১৪ সালে আকস্মিক রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ে। শত শত লাশের মিছিল। কেউবা ফিরে এলো পঙ্গুত্ববরণ করে। কেউবা হলো নিথর লাশ। এই ধসের ঘটনায় শত শত শ্রমিক নিহত হয়। এনাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে লাশের ছড়াছড়ি। রানা প্লাজার দেওয়াল বা পিলারের পরতে পরতে পাওয়া গেল অনেক গলিত লাশ। কিন্তু চৌগাছার সাবিনার খোঁজ কোথাও পাওয়া গেলনা। পরিবারের লোকজন জানান, ঘটনার সাথে সাথে সাবিনার ভাই আব্দুল করিম ঢাকার সাভারে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু অনেক খোঁজাখুজির পরও তার বোনকে খুঁজে পায়নি। সর্বশেষ সরকারের পক্ষ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পিতামাতার রক্ত দেবার কথা বলা হয়। নিখোঁজ সাবিনার পিতা ময়নুদ্দীন ঢাকায় গিয়ে রক্ত দেন। তরপরও আজো সাবিনার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে গলিত অসংখ্য লাশ ঢাকা জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সেই লাশের মিছিলে শরিক হয়ে সাবিনা চির নিদ্রায় শাহিত আছেন সবার সাথে। মঙ্গলবার দুপুরে সাবিনার গ্রামের বাড়ি গুয়াতলী গেলে কথা হয় তার পরিবারের সাথে। এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সকলে। বুক চাপড়ে সাবিনার মা সালেহা বেগম বলতে থাকেন তার কলিজার টুকরা কবে ফিরে আসবে। আল্লাহ তুমি আমার সাবিনাকে এনে দাও। পিতা ময়নুদ্দীনের মুখে কোন কথা নেই, শুধুই কাঁদলেন আর সেখানে উপস্থিত সকলকে কাঁদালেন। ভাই আব্দুর রহিম সাবিনার ছবি দেখিয়ে বলেন বোনদের মধ্যে সবার ছোট বোন ছিল সাবিনা। তাই সকলের আদরের ছিল। তিনি বলেন আমার বোন যদি মারা যায় তবে তার লাশটি তো পাব, কিন্তু পেলামনা। সবাই জানতে চাই নিখোঁজের রহস্য। আলোচিত রানা প্লাজার ঘটনা ধীরে ধীরে একদিন স্মৃতির পাতা হতে হারিয়ে যাবে। কিন্তু সাবিনার পিতামাতার চোখের জল কখনো মুছবে না। অসহায় পরিবারটির পাশে দাড়াতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন চৌগাছার সচেতন মহল।
খবর৭১/এস: