রাতে যুদ্ধবিরতি, ভোর হতেই হামাসের স্থাপনায় হামলা

0
296

খবর৭১ঃ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস কর্তৃপক্ষ মিশরের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।ফিলিস্তিনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিলিস্তিনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতি সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা থেকে কার্যকর হয়েছে।’ তবে সকাল থেকে এই যুদ্ধবিরতি আর স্থায়ী হয়নি।সকালে হামাসের স্থাপনা লক্ষ করে ফের হামলা চালায় ইসরায়েল সেনারা।হামাসও পাল্টা জবাব দেয়।

সীমান্তের কাছকাছি ইসরায়েলিদের লক্ষ করে রকেট হামলার শব্দ শোনা গেছে মঙ্গলবার সকাল থেকেই।তাই সীমান্ত এলাকায় সৈন্য জড়ো করতে দেখা গেছে ইসরায়েলকে। হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা।এসব হামলা ও পাল্টা হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিশরের উপস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে বলা হয়েছে— ইসরাইল আর ফিলিস্তিনের স্থাপনায় এবং ফিলিস্তিনও ইসরাইলে কোনো হামলা করবে না।’

হামাস টিভিও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইলের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর খবর প্রচার করেছে।

হামাসের মুখপাত্র ফাওয়াজি বারহুয়াম বলেন, ‘দখলদার ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিশরের একটি প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।’ তবে, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ইসরাইল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত ৫ মার্চ গাজা সিটিতে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন মিশরের ফিলিস্তিনবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থার মেজর জেনারেল আবদেল খালেদ

গত ৫ মার্চ গাজা সিটিতে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন মিশরের ফিলিস্তিনবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থার মেজর জেনারেল আবদেল খালেদ

তবে কাতারভিত্তিক আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, অব্যাহত হামলা-পাল্টা হামলা নিয়ে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের সঙ্গে হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

আগামী ৯ এপ্রিল ইসরাইলের জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে প্রচারণার মধ্যেই হঠাৎ করে গাজা উপত্যকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। সোমবার ভোরে ইসরাইল গাজা উপত্যকার হামাস নেতাদের বসতি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় এবং সেখানে বিপুলসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করে।জবাবে গাজা থেকে ইসরাইলের অভ্যন্তরে একটি রকেট হামলা চালানো হয়। এতে একটি বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং সেখানে থাকা অন্তত ৭ জন আহত হন।

এরপরই সন্ধ্যা থেকে ইসরাইল বিমান হামলা জোরদার করে। স্থানীয়রা গাজার সামুদ্রিক এলাকায় বহু বিস্ফোরণ এবং অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে পেয়েছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, রকেট হামলার পর ইসরাইল দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বে একটি কৃষিক্ষেতে বোমা ফেলে।

গাজার এক বসতি জানান, হামলার সঙ্কেত শোনার পর মানুষকে তিনি দীর্ঘমেয়াদের কথা বিবেচনায় রুটি এবং জরুরি সামগ্রী কিনতে দেখেছেন।

গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা থেকে দখলদার ইসরাইল হামাস নেতাদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় তারা সাইরেন বাজিয়ে তাদের জনগণকে সতর্ক করেছে।

এদিকে গোলান মালভূমি ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।সোমবার ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে তিনি এ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইল এই জায়গাটি সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র জেনেছে গোলান ইসরাইলের সার্বভৌম। আর এ কারণেই গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।

টুইটারে ট্রাম্প বলেন, ৫২ বছর পর গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বে স্বীকৃতি দেয়ার সময় এটিই।মালভূমিতে বর্তমানে ২০ হাজার অবৈধ দখলদার বসবাস করছেন। কাজেই এই দখলদারিত্ব কখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দিতে পারে না। এদিকে ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনা ও নিন্দা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ রয়েছে।

১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। সেই সময় ইহুদিবাদী বাহিনী ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকারও নিয়ন্ত্রণ নেয়।

পরে ১৯৮১ সালে গোলান মালভূমিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল কখনোই ইসরাইলের এই দাবির স্বীকৃতি দেয়নি।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গোলান মালভূমির মালিকানা সংক্রান্ত এক ভোটাভুটি হয়।

সেখানে উপস্থিত ১৫৩ দেশের মধ্যে ১৫১ দেশ এ ভূখণ্ডের মালিকানা সিরিয়ার বলে স্বীকৃতি দেয়। শুধু আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রস্তাবটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

তা সত্ত্বেও গোলানবাসীর ওপর ৫২ বছর ধরে ইহুদিবাদী দখলদারিত্ব আর অত্যাচার একটুও কমেনি বরং বেড়েই চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here