রাণীনগরে রুলিবালা তৈরী করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে নারীদের

0
297

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে রনসিঙ্গার গ্রামে পিতল দিয়ে তৈরী হচ্ছে রুলিবালা। আর এই রুলিবালা তৈরি করে গৃহবধু সুচরিতাসহ আরো অনেক নারীরা সংসারে নিয়ে এসেছেন স্বচ্ছলতা। গত তিন বছর আগে যেখানে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি প্রতিবেশেীদের সাথে গল্প করে সময় পার করতেন। আর এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতুড়ি ও ছোট ছোট সেনি দিয়ে পিতল থেকে তৈরী রুলিবালায় নানা ধরণের কারুকার্য ফুটাতে ব্যস্ত থাকেন। আর এর মাঝে কাজ করেন সাংসারিক। সুচরিতা প্রতিদিন পাঁচ জোড়া রুলিবালা তৈরী করে ২শ’ টাকা মজুরি পান।

এ কাজ করে যে আয় করেন তা দিয়ে গত দুই বছর থেকে মাসে ২ হাজার টাকার মুদারাবা মাসিক কিস্তি (ডিপিএস) খুলেছেন। মেয়ে মোছা: সুমাইয়া গ্রামের স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করাচ্ছেন। স্বামী এনামুল সরদার ‘স’ মিলে কাজ করেন। ফলে দুজনের উপার্জনে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে রনসিঙ্গার গ্রামের এ দম্পত্তির।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নে এ গ্রাম রনসিঙ্গার। এ গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য মো: এমদাদুল হক গড়ে তুলেছেন রুলিবালার কারখানা। কারখানাটির নাম রেখেছেন ‘এমদাদ বালা ঘর’। এ গ্রামটি এখন কারিগর গ্রাম নামে পরিচিত পেয়েছে। এ গ্রামের প্রায় ১৫০ জন নারী রুলিবালার কাজ করেন। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা নিয়ে এসেছেন দরিদ্র পরিবারের এসব গৃহবধুরা। এছাড়া উপজেলার খট্টেশ্বর, পশ্চিম বালুভরা, রাণীনগর বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামে আরো প্রায় শতাধিক নারীরা কাজ করে থাকেন।

জানা গেছে, পিতল দিয়ে তৈরী হয় রুলিবালা। পিতলের রং এবং সোনার রং প্রায় সমান। স্বর্ণের দাম বেশি হওয়ায় সবার পক্ষে অলংকারের স্বাদ গ্রহণ করাও সম্ভব হয়না। রুলিবালাতে কারুকার্য তৈরী করে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়। ফলে পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ক্রেতাদের। আর এ কাজ এলাকার বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এসব রুলিবালা এখন সরবরাহ করা হচ্ছে।

রনসিঙ্গার গ্রামের গৃহবধু মোছা: হাসনাহেনা বলেন, রুলিবালার উপর নকশা করতে গ্রামেই ২০ দিনের একটা প্রশিক্ষণ নিই। গত চার বছর ধরে এ কাজ করছি। এখানকার প্রতিটি বাড়িতে রুলিবালা তৈরী করা হয়। আগে গল্প করে এ গ্রামের নারীরা সময় পার করলেও এখন সবাই রুলিবালা তৈরীতে ব্যস্ত। কারোই যেন অবসর নেই। প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ টাকা পারিশ্রমিক পান এ কাজ করে। এখন বাচ্চাদের নিয়ে একটু ভাল ভাবে খেয়ে পরে দিন কাটাতে পারছি।

রাণীনগর উপজেলার রুলিবালা কারখানার মালিক মো: এমদাদুল হক বলেন, ২৩ বছর সেনাবাহিনীতে চাকুরির পর ২০১৩ সালে অবসর গ্রহন করেন। এরপর নাটোর, সৈয়দপুর ও পাবর্তীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় প্রায় ছয়মাস রুলিবালা তৈরির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে স্ত্রী রুমাকে রুলিবালার কাজ শেখান। এরপর বাড়িতে ১০ জন নারী শ্রমিক দিয়ে কারখানায় কাজ শুরু করেন। সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় সবার কাছেই পছন্দ রুলিবালা।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৩৫০ জন নারী কারিগর রুলিবালার সাথে সম্পৃক্ত। তার কারখানায় কাজ করে ১৮৫ জন নারী শ্রমিক। কাজের মান ভেদে নারী শ্রমিকদের ৮-৯ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। এছাড়া প্রতি জোড়া ভেদে ৭০-৮০ টাকা করেও মজুরি দেয়া হয়। রুলিবালা বাজারে বিক্রি হয় রং ছাড়া ১৫০-১৬০ টাকা এবং রংসহ বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকা জোড়া। এসব রুলিবালা ঢাকার তাঁতিবাজার, সিলেট, বগুড়া, নাটোর ও নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া কুরিয়া সার্ভিসের মাধ্যমে অনেকে নিয়ে থাকেন।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here