রাণীনগরে ব্রিজের কাজে অনিয়ম ঃ আড়াই বছরেও পূণ:নির্মান হয় নি, ভোগান্তিতে এলাকাবাসি

0
289

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের শ্রীমতখালী খালের উপর নির্মিত ব্রিজটির কাজে অনিয়ম করায় নির্মানের কিছু দিনের মাথায় ভেঙ্গে যাবার পর দীর্ঘ আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও ব্রিজটি এখনো পূণ:নির্মান করা হয়নি। এখন ওই এলাকার মানুষের ব্রিজ নয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারা-পার হতে হয় প্রতিদিনই। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছে ওই এলাকার প্রায় ১৬টি গ্রামের মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিজটির কাজের প্রথম থেকেই ঠিকারদার অফিসের সাথে জোগসাজগ করে নি¤œমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে ব্রিজটি নির্মান কাজ করায় তা কিছু দিনের মধ্যে ভেঙ্গে পরে ব্রিজ নির্মান বরাদ্দের অর্থ খালে ডুবে গেছে। অন্যদিকে ওই স্থানে গড়ে ওঠা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারা-পার হতে প্রতিদিনই ইজারাদারকে টাকা দিতে হচ্ছে পথচারীদের। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও মালামাল পরিবহনে চরম দূর্ভোগে পরেছেন এলাকাবাসি।

জানা গেছে, বান্দায়ঘাড়া থেকে মিরাট বিলের মধ্য বয়ে চলা রাস্তাটি নওগাঁ জেলা সদরের সাথে যুক্ত হয়েছে। খাল খননের পর থেকেই মিরাট ইউনিয়নের মিরাট রাস্তার শ্রীমতখালি খালের উপর হামিদপুর নামকস্থানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে এক সময়ের অবহেলিত ও দূর্গম এলাকা খ্যাত প্রায় ১৬ টি গ্রামের মানুষ চরম দূর্ভোগে চলা-চল করতো। এতে উৎপাদিত ফসল সময় মতো বাজারে বিক্রি এবং মালামাল পরিবহন করতে না পারায় ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে চরম দূর্ভোগে জীবন যাপন করতো এলাকাবাসি। ওই এলাকার মানুষের চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাণীনগর উপজেলা এলজিইডি’র আওতায় গত ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে সেখানে একটি ব্রিজ নির্মানের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়। টেন্ডারে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়ে ব্রিজ নির্মান কাজ শুরু করেন। এর পর ব্রিজ নির্মান কাজ শেষে নির্ধারিত সময় পর সাটারিং খুলে দিলে মাত্র কিছু দিনের মাথায় ব্রিজের মাঝের পিলার ডেবে গিয়ে ব্রিজটি ভেঙ্গে পরে যায়।

নি¤œমানের সামগ্রী, দূর্বল অবকাঠামো ও অদক্ষ্য মিস্ত্রী দিয়ে কাজ করার কারনে ব্রিজটি ভেঙ্গে গেছে। এর পর পুরো ব্রিজ অপসারণ করে সেখানে নতুন করে গত ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে প্রায় ১ কোটি ৭৯ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মানের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়। এর পর গত ৮ মাস আগে ব্রিজটির পূণ: নির্মান কাজ শুরু করলেও শুধু মাত্র খালের দুই পারে ব্রিজের দৃশ্যমান দু’টি মূখ নির্মান করে কাজ বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার। এখন খালের পানি শুকে যাওয়ায় নতুন ঠিকাদার আবার ব্রিজের কাজটি শুরু করেছেন। এ কাজেও অনিয়ম হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় অনেকেই তাই ব্রিজটির নির্মান কাজ চলা পর্যন্ত সংলিষ্ট উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের ব্রিজটি কাজের প্রতি সুদৃষ্টি রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকেই।

এখন ব্রিজের পাশে বাঁেশর সাঁকো দিয়ে পারা-পার হতে প্রতিদিনই ঘাট ইজারাদারকে টাকা দিয়ে চলাচল করছেন পথচারীরা। এতে এলাকাবাসি একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছেন অন্য দিকে ব্যবসা বানিজ্যে মালামাল ও কৃষি খ্যাত এলাকার উৎপাদিত ফসল পরিবহনে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসির।

ওই এলাকার ভ্যান চালক মো: আব্দুস ছাত্তার জানান, প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে পারা-পার হতে ৮-১০ টাকা করে ইজারাদারকে দিতে হচ্ছে। পথচারী মো: সেকেন্দার আলী, খোরশেদ আলম, আবু হাসানসহ আরো অনেকেই জানান, প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে পায়ে হেটে পারা-পার হতে ইজারাদারকে ২-৩ করে টাকা দিতে হয়। ইজারাদার কাউকে থেকে পারাপারের টাকা নেয় আবার কাউকে থেকে নেয়না। এই ব্রিজটি দ্রুত নির্মান কাজ শেষ করে জন দূর্ভোগ থেকে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঘাট ইজারাদার সুমিত্রা রাণী চৌধুরী বলেন, তিনি স্থানীয় মিরাট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এক বছরের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে প্রতিজন ৩ টাকা, প্রতিটি মটরসাইকেল-ভ্যান ১০ টাকা এবং বাইসাইকেল থেকে ৫ টাকা নেন। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী মো: শাইদুর রহমান মিঞা’র বক্তব্য নিতে গেলে তিনি রিপোর্টটি না করা জন্য বলেন। এরপর তিনি বলেন ব্রিজটি নির্মান কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুন মাসের মধ্যে ব্রিজটি করা হয়ে যাবে।#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here