রাণীন নগরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতি

0
293

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: আর্থিক ক্ষতি কমানো, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া, আধুনিক কৃষির জন্য চ্যালেঞ্জও বটে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রমে নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। রাণীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাচিং উৎসব করে এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে দ্রুতই ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা।

রক্ষা পাচ্ছে নির্মল পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য। ক্ষতিকর পোকা দমনে এক সময় জমিতে ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহার করা হতো। এখন সে প্রবণতা অনেক কমেছে। ধান ক্ষেতে পোকা খেকো পাখি বসার ব্যবস্থা করে পোকা দমন করা হচ্ছে। কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিনা খরচে পোকা দমনের পরিবেশ বান্ধব এ পদ্ধতি।

জানা গেছে, ধানের রাজ্য হিসেবে খ্যাত নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ধান ক্ষেতের মাঝে ১৫-২০ হাত দূরে দূরে গাছের ডাল পোঁতা হচ্ছে। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর উড়ে এসে বসছে আর ক্ষেতের পোকা ধরে খাচ্ছে নানা জাতের পাখি। এভাবে কীটনাশক ছাড়া সহজেই দমন হচ্ছে পোকা। পোকা দমনের পরিবেশ বান্ধব এই পদ্ধতির নাম পার্চিং। পার্চিং ইংরেজী শব্দ। পাখি বসে এমন উঁচু ডাল বা খুঁটির নাম পার্চ। আর পার্চ থেকে পার্চিং নামের উদ্ভব। ফসলের জমিতে ধৈঞ্চা গাছ, ডাল, কঞ্চি, বাশের খুঁটি এগুলো পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে পাখি ক্ষতিকারক পোকার মথ, বাচ্চা, ডিম খেয়ে পোকা দমন করে।

ফসলের পোকা দমনের এই পদ্ধতি অত্যান্ত কম ব্যয়বহুল এবং পরিবেশবান্ধব। পার্চিং দুই প্রকার, ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং এবং ধইঞ্চা, কলা গাছ ইত্যাদি জীবন্ত পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং। কীটনাশক ছাড়াই পোকা দমনের এই পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে চলতি আমন মৌসুমে ধানের জমিতে পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৬ হাজার ৪ শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রায় এর শতভাগ জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা দমন করেছে কৃষকরা। এতে ফসলের জমিতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, পোকা দমনে এই পদ্ধতি শতকরা ৭৫-৮০ ভাগ কার্যকর। এ কারণে প্রতি একরে কীটনাশক খাতে চাষিদের খরচ কমেছে দুই হাজার টাকারও বেশি। পাশাপাশি কৃষকেরা এই পদ্ধতি ব্যবহার শুরুর পর পাখির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

কৃষক মো: হাসান আলী, মো: মতালেব হোসেন, মো: হাজেরসহ আরো অনেক কৃষকরা বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পার্চিং উৎসব এর প্রদ্ধতির পরামর্শে ধান জমিতে ডাল পুঁতে দিয়েছি, ওই ডালে পাখি বসে পোকা ধরে খেয়ে ফেলে। জমিতে পোকা আক্রমন করতে পারে না। কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না বেশি বিধায় উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, পার্চিং পদ্ধতি কৃষকের কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব সুন্দর একটি পদ্ধতি। কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য প্রায় উপজেলার সকল জায়গায় পাচিং উৎসব করা হচ্ছে। ফলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এই প্রদ্ধতিটি। কীটনাশক ব্যবহার না করে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় কৃষকদের ফসল উৎপাদনে খরচ কমে যাচ্ছে। ধান ক্ষেতে বেশি ক্ষতি করে মাজরা পোকা। শুধু একটি পাখির দ্বারা পোকা ধ্বংস করা সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here