রাণীনগরে আ’লীগ নেতার উপর সন্ত্রাসী হামলা ॥ গণপিটুনিতে আহত ৩

0
299

খবর৭১:রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে ইউনিয়ন আ’লীগের এক নেতাকে হত্যার চেষ্টায় ছুরিকাঘাত করে গুরুত্বর আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। এসময় তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে সংঘবদ্ধ ৭-৮ জনের মধ্যে ৫ জন পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় মূলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রামবাসী আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে রাণীনগর থানা পুলিশ স্থানীয় জনগনের কবল থেকে গণপিটুনিতে গুরুতর আহত অবস্থায় একই দলের ৩ জনকে উদ্ধার করে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেয়। বুধবার রাতে উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের ধনপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।

পরে মারপিটের মূলহোতা দাদন ব্যবসায়ী ও এলাকার টপটেরর শহিদুল ইসলামের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর দুই জনকে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলা দায়েরের পর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

অপরদিকে আ’লীগ নেতাকে হত্যার চেষ্টার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার ওই এলাকার লোকজন থানার সামনে দাঁড়িয়ে ঘন্টাব্যাপী অবস্থান করে। রাণীনগর থানার ওসি এই ঘটনার সাথে প্রকৃত জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিলে তারা চলে যায়। এ ঘটনায় আ’লীগ নেতা জিয়ার বাবা ইব্রাহীম  বাদি হয়ে রাণীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা থেকে বাদ পড়লো মূলহোতা।

জানা গেছে, উপজেলার মিরাট ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ধনপাড়া গ্রামের আলহাজ্ব ইব্রাহীম এর ছেলে মো: জিয়াউর রহমান জিয়া (৩৮) প্রতিদিনের মত পার্শ্ববর্তী বান্দাইখাড়া বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে রাত অনুমানিক ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে পৌঁছা মাত্রই পূর্ব থেকে উৎ পেতে থাকা কতিপয় চিহিৃত ৭/৮ জন আ’লীগের সন্ত্রাসীরা জিয়াকে লক্ষ্য করে প্রথমে চোখে-মুখে বালু ছিটিয়ে দিয়ে ছুরিকাঘাত করে পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এ্লোপাতারি কোপাতে থাকলে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালানোর চেষ্টা করে। এই সময় গ্রামবাসীরা এক যোগে সন্ত্রাসীদের ঘিরে গণপিটুনি শুরু করে। গণপিটুনি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এই ঘটনার সাথে জরিত মূলহোতা এলাকার টপটেরর ও দাদন ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম পুকুরে লাফ দিয়ে আত্নরক্ষার চেষ্টা করলেও গণধোলাই থেকে শেষ পর্যন্ত রেহাই পায় না। গুরুতর আহত অবস্থায় জিয়াউর রহমানকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

এব্যাপারে জিয়ার বাবা ইব্রাহীম  বাদি হয়ে রাণীনগর থানায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনার সাথে জড়িত মূলহোতা শহিদুল ইসলামের ভাগিনা আত্রাই উপজেলার বড়কালিকাপুর গ্রামের মৃত-আজিমুদ্দিনের ছেলে স্বপন হোসেন এবং একই গ্রামের নিরঞ্জন মহন্তের ছেলে প্রসেনজিৎ মহন্তসহ অজ্ঞাত নামা ৬-৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

অপরদিকে দুই জনকে গ্রেফতার দেখালেও ঘটনার মূলহোতা শহিদুল ইসলাম গুরুতর আহত অবস্থায় বগুড়ায় চিকিৎসাধীন থাকলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তার ব্যাপারে মুখ খুলছে না। এমনকি মামলাতে তার নাম না থাকায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আহত আ’লীগ নেতা জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই মো: জুবায়ের হোসেন জানান, আমার ভাই রাজনীতি করলেও ব্যক্তি জীবনে সে খুব সাদা-মাটা মানুষ। আমরা ব্যবসা করেই জীবিকা নির্বাহ করি। হঠাৎ করে শহিদুলের নেতৃত্বে আমার ভাইকে কেন হত্যার চেষ্টা করা হলো? আমি এর সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিন জনকে থানায় আনলেও শহিদুলকে কেন এখন পর্যন্ত গ্রেফতার দেখানো হলো না? শুরুতেই এই মামলা নিয়ে আমি আশংকা করছি। প্রকৃত দোষীরা কি বার বার এভাবে পার পেয়ে যাবে?

রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান জানান, জিয়াকে হত্যার চেষ্টা এটা পরিকল্পিত। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গণধোলাই এর শিকার তিন জনকে উদ্ধার করে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। এঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, মামলার প্রেক্ষিতে দুই জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এঘটনার সাথে জড়িতদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।

রাণীনগরে দাদন ব্যবসায়ীর চাপে ও অনৈতিক প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় গৃহবধুর আত্মহত্যার অভিযোগ

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে দাদন ব্যবসায়ীর চাপে ও অনৈতিক প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় লীমা রানী (৩০) নামে এক গৃহবধু কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাতে উপজেলার পারইল ইউনিয়নের খোলাগাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার লাশ উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। গৃহবধু লীমা রানী উপজেলার খোলাগাড়ী গ্রামের শ্রী গোপেনের স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গৃহবধুর স্বামী (গোপেন) ফল ব্যবসায়ী। দোকানের মালামাল কেনার জন্য তার স্ত্রী পার্শ্ববতী বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার কুন্ডগ্রাম ইউনিয়নের বশিকরা গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী মৃত-গোবরার ছেলে আইয়ুবের কাছ থেকে মাসে ৫ হাজার টাকা সুদে ৩৫ হাজার টাকা, বাচ্চুর কাছ থেকে মাসে ৬ হাজার টাকা সুদে ৪৫ হাজার টাকা এবং ওসমান আলীর ছেলে বাবুর কাছ থেকে মাসে দেড় হাজার টাকা সুদে ৫ হাজার টাকা নেয়। এছাড়া বেসরকারি সংস্থা দাবী, আশা, ব্র্যাক, বেডো ও গ্রামীন ব্যাংক থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ঋণ নেয়।

গত প্রায় তিন মাস আগে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উচ্চ সুদে টাকা নেয়া হলেও মাসে মাসে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় দাদন ব্যবসায়ীরা গৃহবধু লীমা রানীকে চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেয় তারা। গৃহবধু তাদের প্রস্তাবে রাজী না হয়ে ক্ষোভের বসে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কীটনাশক পান করে। বাড়ির লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে আদমদিঘী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ দাদন ব্যবসায়ীর চাপে ও অনৈতিক প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় লীমা রানী আত্মহত্যা করেছে।

উল্লেখ্য, বশিকরা গ্রাম আদমদিঘী উপজেলায় হলেও খোলাগাড়ী গ্রামের পার্শ্ববর্তি গ্রাম। আর ওই গ্রামে আইয়ুব, বাচ্চু ও বাবু ছাড়াও কয়েক মিলে উচ্চ সুদে দাদন ব্যবসা করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। আর তাদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে টাকা নিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন লীমা রানীসহ অনেকেই।

নিহতের খালা মায়া রানী বলেন, দাদান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে টাকা নেয়ার পর আমার ভাগ্নীকে তারা চাপ সৃষ্টি করে। কয়েকদিন আগে একটি গরু বিক্রি করে কিছু টাকা পরিশোধ করে। আস্তে আস্তে টাকাগুলো পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু দাদন ব্যবসায়ীরা ভাগ্নীর বাড়িতে এসে চাপ সৃষ্টি করত এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত। তারা কুপ্রস্তাবও দিয়েছে ভাগ্নীকে। রাগের ক্ষোভে সে আত্মহত্যা করেছে। তিনি এর উপযুক্ত বিচার দাবী করেন।

দাদন ব্যবসায়ী বাচ্চু বলেন, সুদের উপর টাকা খাটাতাম। গৃহবধু লীমা রানীকেও টাকা দিয়েছি। তবে কত টাকা দিয়েছি মনে নাই। শুনলাম গৃহবধু মারা গেছে। এজন্য মনটা খারাপা। তবে তাকে কোন কুপ্রস্তাব বা টাকার জন্য চাপাচাপি করা হয়। পরে দেখা করে সাক্ষাতে কথা বলবে বলে জানান তিনি।

রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএস সিদ্দিকুর রহমান বলেন, লাশ উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তবে দাদন ব্যবসায়ীর কারেণ আত্মহত্যার সম্পৃক্তা থাকলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here