রাণীনগরের হাট-বাজারে শোভা পাচ্ছে ক্যান্সার প্রতিরোধক জাতীয় ফল কাঁঠাল

0
788

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: ছয় ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল যে ফলের কোন কিছুই নষ্ট হয় না। এই মধু মাসে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছে গাছে ও হাট-বাজারে শোভা পাচ্ছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ও অধিক পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ রসালো জাতীয় ফল কাঁঠাল। কিন্তুু বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হয় না এই কাঁঠাল।

কাঁঠাল পাকতে শুরু করায় এখন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে সুমিষ্ট রসালো ঘ্রাণ সমৃদ্ধ ফল কাঁঠাল। তবে যে ফলের এতগুন সেই ফলটি বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয় না উপজেলার কোন গ্রামে। কারণ কাঁঠালের উপকার সম্পর্কে সচেতন নয় উপজেলার চাষীরা। সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগই পারে কৃষকদের বাণিজ্যিক ভাবে কাঁঠাল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রধান ফসলের পাশাপাশি এলাকার কৃষকরা মৌসুমী ফল হিসাবে কাঁঠাল বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারেন।

পাকা কাঁঠালের সুগন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে উপজেলার বিভিন্ন বাড়ি ও বিভিন্ন কাঁঠাল বাগান। মৌমাছিরাও কাঁঠালের ঘ্রাণ নিতে বাগানে ভোঁ ভোঁ শব্দ করে এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ে বেড়াচ্ছে। এ যেন মনমুগ্ধোকর এক দৃশ্য।

চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে দেখা গেছে কাঁঠালের বাম্পার ফলন। এসব এলাকার বাড়িতে, রাস্তার ধারে, শহরে ও জঙ্গলের ভেতরে থাকা গাছে ধরেছে প্রচুর পরিমাণ কাঁঠাল। গাছের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল।

মানুষের অতি প্রিয় ফল ও পাঁকার আগে কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে যুগ যুগ ধরে কদর পেয়ে আসছে বলে জানা গেছে। কাঁঠালের বীজ মানুষের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ তরকারি। পাটশাক ও কাঁঠালের বিচির সমন্বয়ে রান্না করা শোলকা দিয়ে এখানকার মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে ভাত খেতে পারেন। গবাদি পশুর জন্যও কাঁঠালের ছাল উন্নত মানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

উপজেলার সদর রাণীনগর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর বলেন, সরকার চাইলে উপজেলার কৃষকরা বাণিজ্যিক ভাবে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এই লাভজনক ফল কাঁঠালও চাষ করা শুরু করতে পারে। শুধু উদ্যোগ আর সচেতনতার অভাবে প্রসারিত হচ্ছে না এই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ফল কাঁঠালের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ। অন্যান্য ফলের মতো এই ফলের তেমন যতœ নিতে হয় না। ব্যবহার করতে হয় না কোন কীটনাশক ও রাসায়নিক সার। অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবেই হয়ে থাকে এই মূল্যবান ও দামী ফলটি।

বেদগাড়ী ঘোসগ্রামের মো: বেলাল হোসেন বলেন, কাঁঠাল আমার প্রিয় ফল। এই ফলটি যে অত্যধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও ক্যান্সার প্রতিরোধক তা আগে আমি জানতাম না। কিন্তু এর উপকারিতা জানার পর এই ফল আমি ও আমার পরিবারের সবাই প্রতি মৌসুমে বেশি করে এই ফল খাই। কাঁঠালের কোনো অংশই ফেলে দিতে হয় না। এর বীজ তরকারি হিসেবে ও অবশিষ্ট অংশ গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

কাঁঠালের কদর ও বহুগুণের এমন কথা জানালেন উপজেলার আবাদপুকুর এলাকার শেখ মো: হাফিজার রহমান বহুগুণ সমৃদ্ধ এ কাঁঠাল এখানকার হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে। জ্যৈষ্ঠের শেষ ও আষাঢ় মাসের শুরু থেকে এখানকার হাট-বাজারে কাঁঠাল কেনাবেচা পুরোদমে শুরু হবে এমনটি সকলের ধারণা। উৎপাদন খরচ নেই ও বাজারে চাহিদা থাকায় এই জনপদের অনেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে কাঁঠালের গাছ রোপণ করে কাঁঠাল বিক্রিতে বাড়তি আয় করেন। এখানকার হাট-বাজারে একটি কাঁঠাল সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কোথাও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁঠাল বাগান গড়ে তোলা হয় নাই। বাড়ির উঠান, রাস্তার পাশে কিংবা পরিত্যাক্ত জমির ধারে বিক্ষিপ্ত ভাবে কাঁঠাল গাছ রোপন করা হয়। যা কোন বাড়তি যতœ ছাড়াই প্রাকৃতিক ভাবে বড় হয়ে ফল ধরতে শুরু করে। শুধু কাঁঠালই নয় দামী কাঠ হিসাবেও কাঁঠাল গাছের বেশ কদর রয়েছে। পুরো উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৩০-৪০ হাজার গাছে কাঁঠাল ধরেছে। এবছর উপজেলায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এই ফলটি যদি ব্যাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয় তাহলে আমসহ অন্যান্য ফলের পাশাপাশি কাঁঠালও অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। এই বিষয়ে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে আগামীতে কাঁঠালও বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার বলেন, কাঁঠাল আমাদের দেশের একটি সহজলভ্য ফল। এই ফলের গুনাগুন সম্পর্কে আমরা কেউই তেমন জানি না। বিদেশে এই ফলের অনেক কদর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই কাঁঠাল বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয়। এই ফল ক্যান্সার প্রতিরোধক একটি ফল যা আমরা অনেকেই জানি না। এই ফলটি আমাদের বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারও উপজেলায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপকারি এই ফল সম্পর্কে মানুষ দিন দিন জানতে পারছেন বলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জনগণ বেশি বেশি করে কাঁঠাল গাছ রোপন করছে।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here