রওশন এরশাদ এতদিন পরে বুঝলেন কেন: পার্থ

0
493

খবর৭১: জাতীয় পার্টি সরকারে নাকি বিরোধী দলে-সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের মনে এই প্রশ্ন চার বছর পরে কেন আসল তা জানতে পেরেছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক বিজেপির নেতা আন্দালিব রহমান পার্থ।

বিএনপির শরিক দলের নেতা বলেন, ‘আজকের রওশন এরশাদ রিয়েলাইজ করলেন? চার বছর তিনি রিয়েলাইজ করেনি? চার বছর পর তিনি রিয়েলাইজ করলেন যে এটা তামাশার সংসদ? এখানে বিরোধী দল কেউ না? ওনার লজ্জা লাগে? সাংবাদিকদের ফেইস করতে ওনার লজ্জা লাগে? এই বছর বছরে ওনি কি লজ্জা পাননি?’

‘আসল কথাটি সবাই জানে। বাংলাদেশে যখন আপনি মন্ত্রী হয়ে যাবেন তখন আপনার উপর প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ থাকবে।’

বেসরকারি টেলিভিশ চ্যানেল আইয়ের টক শো তৃতীয় মাত্রায় জিল্লুর রহমানের উপস্থপনায় পার্থ এসব কথা বলেন।

বিজেপি নেতা বলেন, ‘১/১১ আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল যা আমরা নেইনি। পার্লামেন্টও একটি তামাশার জায়গা। আপনি জুডিশিয়াল ব্যবস্থা দেখেন যেখান প্রধান বিচারপতি পদত্যাগের পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।’

আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলও। তিনি বলেন, ‘সবারই আয়নার সামনে দাঁড়ানো উচিত। রাজনীতির ভাঙাচোরা, হালুয়া রুটির ভাগ বাটোয়ারার মেরুকরণ এগুলো তো চলছেই।’

‘আওয়ামী লীগ সব সময়ে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম রাখার চেষ্টা করে। আমরা বাকশাল করেছিলাম, অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছিলাম। আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা একটি প্লাটফর্মে রাখার চেষ্টা করেছি। গত নয় বছর ধরেই তো একটি প্লাটফর্মে আছিই।’

উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রওশন এরশাদকে সামলাতে পারছেন না, ব্যাংক সামলাতে পারছেন না, আইনশৃঙ্খলাকে সামলাতে ছাত্রলীগকে সামলাতে পারছেন না’।

জবাবে অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘এ জিনিসগুলা আছে। এটা নিন্দনীয় ব্যাপার। এটা কখনও কাঙিক্ষত হতে পারে না। আমি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এটা আমার রাজনীতির জন্মস্থান। এটা যখন প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন আমরা লজ্জিত হই, শঙ্কিত হই।’

পার্থ বলেন, ‘এমন একটা সময় ছিল যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগ বলেন, ছাত্র ইউনিয়ন বলেন যেই হোক হরতাল ডাক দিলে সারা বাংলাদেশে হরতাল পালিত হতো। আজকে কেউই তাদেরকে চেনে না। বলেন, নেতা বানানোর কারখানা না, ক্যাডার বাহিনীর কারখানা।’

‘আমি চাই না কোন স্মার্ট ছেলে রাজনীতিতে আসুক। আমরা চাই যারা আমাদের সেন্ডেল টানবে, চামচামি করবে, তেলবাজি করবে, তারাই রাজনীতিতে আসছে।’

‘আমাদের আগের প্রজন্মরা কী উদাহরণ রেখে যাচ্ছেন যাতে ১০টি ভাল ছেলে রাজনীতিতে আসবে?’।

অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘সেই ব্যর্থতা, সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যে দাঁড়িয়ে তো আমরা আগামী দিনের জয়গানের কথা বলব।’

পার্থ বলেন, ‘আপনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন, ওই সময়ে রাজনীতি ছিল আদর্শভিত্তিক। আর আজকের রাজনীতি ক্ষমতাভিত্তিক। আজকে জাসদের যে কথা বলছেন, ১৯৭৫ সালের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল তারাই। …রাজনীতিকদের সঙ্গে গ্যাপ কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে। এই গ্যাপ ছোট করতে হবে।’

অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের মান সম্মান ক্ষুন্ন হলেও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।’

খালেদা জিয়ার বিচার প্রসঙ্গ

পার্থ বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন কোন মানুষ নেই যারা মনে করেন যে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই মামলা রাজনৈতিক না।’

‘আওয়ামী লীগ এখন প্রতিদিন বলবে দুর্নীতি করেছেন, দুর্নীতি করেছেন, দুর্নীতি করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো মানুষ এটা কতটা বিশ্বাস করে? আওয়ামী লীগ ১৯৯১ সালে বলেছে, এরশাদ সাহেব দুর্নীতি করেছেন। ১৯৯৬ সালে এরশাদের সমর্থনে সরকার গঠন করেছেন। ২০০১ জাতীয় ঐক্য থেকে সরিয়েছেন আবার ২০০৮ আবার জাতীয় সরকার গঠন করেছে।’

‘এবার জাতীয় পার্টি অক্সিজেনের ভূমিকা পালন করছে। আওয়ামী লীগ এভাবে জাসদের বিরুদ্ধে বলেছে, এখন জাসদ আবার মন্ত্রী। হেফাজতের বিরুদ্ধে ছিল; বলেছে, কোরআন পুড়িয়েছে, তারাই আবার হেফাজতের সঙ্গে। এটা তাদের পলিটিক্যাল গেইম।’

‘সব জায়গায় গিয়ে বলা এতিমের টাকা চুরি করেছে, এতিমের টাকা চুরি করেছে। … হলমার্ক কেলেঙ্কারির সময়ে কী কাজটি করা হয়েছিল? চার হাজার কোটি টাকা। এ রকম কিন্তু জনতা ব্যাংকে বাদল ইউনুস নামের লোক খেয়ে ফেলেছে। ফরমার্স ব্যাংকে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের যে ঘটনা… বেসিক ব্যাংকের বাচ্চুকে তো ধরাই হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে দুদকে তাকে ডাকা হয়। শেয়ার মার্কেটের কথাতো বাদই দিলাম। এখন দুর্নীতি হচ্ছে লক্ষ কোটি টাকার।’

অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘আপনি মামলার দুর্বলগুলো খুঁজে বের করেন। আওয়ামী লীগ এই ধরনের রাজনীতি কখনও করে না। ১৯৯৬ সালে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শুরু করেছি। ওই সরকারের মেয়াদে আমরা মামলা শেষ করতে পারিনি। পরে সরকারে এসে মামলার কাজ শেষ করেছি। বেগম জিয়ার মামলায় কোন রাজনীতি নেই।’

আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ:

আগামী নির্বাচন কেমন হবে- এমন প্রশ্নে অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘সরকার কোনো সময়ে দায়িত্ব এড়াতে পারে না। আওয়ামী লীগেরও দায়িত্ব আছে। সকল দলের আইনের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন চাই।’

‘বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চাই না। তবে বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।’

পার্থ বলেন, ‘আপনি ধরেই নেন যে আওয়ামী লীগ আরেকটি ৫ জানুয়ারির মত নির্বাচন করতে করবে। তবে আওয়ামী লীগ আগের মতো সব করতে পারবে না।…আমাদের যদি বলেন, আমাদের টার্গেট খালেদা জিয়ার মুক্তি।’

নির্বাচন সংবিধান অনুসারে হবে, সেটাও জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতা। এ সময় পার্থ তার কাছে জানতে চান, ‘সংবিধান বড় না জনগণ বড়’।

জবাবে অসীম কুমার বলেন, ‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। আমরা কিন্তু ১/১১ এখন ভুলে যাইনি। …আমরা যে কোন পরিস্থিতিতে নির্বাচন করেছি, ১৯৭৯ সালের নির্বাচনও করেছি।’
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here