যে কারণে জনপ্রিয় ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদ

0
282

খবর৭১ঃনিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে নামাজরত অবস্থায় মুসল্লিদের ওপর চালানো স্মরণকালের ইতিহাসের বর্বরোচিত হামলায় শোকাহত গোটা বিশ্ব। বিশ্বের অনেক দেশের মতো নিউজিল্যান্ডে বর্ণবাদের সমস্যা তেমন ছিল না। শান্তিপূর্ণভাবেই বিভিন্ন জাতি দেশটিতে বসবাস করত। নিউজিল্যান্ডে মুসলমানরা শান্তিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল হিসেবেই পরিচিত।

ভয়াবহ এ হামলার পর থেকে নিউজিল্যান্ডের সবধর্মের মানুষ মুসলিম কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়েছেন। ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বারবার গণমাধ্যমের সামনে এসে নিজেই তথ্য জানাচ্ছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরদার্ন। মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।

গত শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের আল নুর ও লিনউড মসজিদে উগ্রবাদী শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি ব্রেন্টন টরেন্টের নৃশংস হামলার আগ পর্যন্ত দেশটি ছিল শান্ত ও বিশ্বের দ্বিতীয় নিরাপদ দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল নিউজিল্যান্ড।

নিউজিল্যান্ডের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ইসলাম অন্যতম। ১৯৯১-২০০৬ এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির প্রতিটি প্রদেশে মুসলমানরা গড়েছে অসংখ্য মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার।

ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদ পূর্ব নিউজিল্যান্ডের সর্বপ্রথম জুমা মসজিদ। মসজিদটিতে মুসল্লিদের আনাগোনা ছিল সব সময়। নিয়মিত জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হত এখানে। ক্রাইস্টচার্চের মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ইসলামিক সেন্টার হিসেবে বিবেচিত হত আল নূর মসজিদ।

আল নূর মসজিদের শুরুর কথা

১৯৭৭ সালে পড়াশোনার জন্য ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় সৌদি, পাকিস্তান, ভারতসহ কয়েকটি দেশের মুসলিম শিক্ষার্থী বসবাস করতেন। একসঙ্গে নামাজ পড়ার জন্য তারা একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। সম্মিলিত উদ্যোগে জমি কেনার পর ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আল নুর মসজিদ’।

মসজিদটিতে শতাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। মূল মসজিদের পাশাপাশি শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য একটি হলরুম, গেস্টরুম ও মুসল্লিদের পড়াশোনার জন্য একটি ছোট লাইব্রেরিও রয়েছে মসজিদটিতে।

মসজিদের সামনের বিশাল উদ্যানে শিশুরা খেলাধুলা করত। আল নূর মসজিদকে নিউজিল্যান্ডের মুসলমানদের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।মসজিদটির পার্কিং লটও বিশাল বড়। নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আল নুর মসজিদে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসে।

জুমার খুতবা কয়েকটি ভাষায় অনুবাদের কারণে মসজিদটি ছিল মুসল্লিদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ।

দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী আল নুর মসজিদ ক্রাইস্টচার্চ শহরের দক্ষিণে অবস্থিত। এখানে অবস্থানরত মেহমানদের বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। মেহমানদের থাকা-খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নির্ধারিত মেয়াদ ছিল না। ১৯৮০ সাল থেকেই স্থানীয় মুসলিমদের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে আল নুর মসজিদ পরিচালিত হয়ে আসছে।

১৫ মার্চ স্মরণকালের ইতিহাসের বর্বরোচিত হামলা আল নূর মসজিদকে পরিচিতি দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। শোকাহত মানুষ নিয়মিত শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন নিহতদের। ভয়াবহ এ হামলায় অনেক কিছু স্থবির থাকলেও থেমে নেই আল নুর মসজিদের আজান। এখনো মুসল্লিরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য জড়ো হচ্ছেন রক্তস্নাত আল নূর মসজিদে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here