যেভাবে বিভক্ত হয়েছিল দুই কোরিয়া

0
255

খবর৭১: এক সময় জাপান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল কোরিয়া। সময়টা ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল। ১৯০৫ সালে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরই মূলত কোরীয় ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ পায় জাপান। ১৯১০ সালে দেশটিকে নিজেদের সাম্রাজ্যের অংশ ঘোষণা করে তারা। অপসারণ করা হয় কোরীয় সম্রাট গজংকে।

পরের দশকগুলো ছিল জাতীয়তাবাদী ও উগ্র গোষ্ঠীগুলোর স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রামের সময়। তবে ঐক্যবদ্ধ কোনো আন্দোলন করতে পারেনি তারা। এ সময় কোরিয়ার বৈদেশিক সরকারের অবস্থান ছিল চীনে। তারাও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে ব্যর্থ হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯৪৩ সালের নভেম্বরে জাপানি উপনিবেশগুলোর কী হবে- এ নিয়ে ফয়সালার জন্য মিসরে কায়রো সম্মেলনে একত্রিত হন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল ও জাতীয়তাবদী চীনের চেয়ারম্যান চিয়াং কাই-শেক।

তাদের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত হয়, জাপানকে পরাজিত করে তার ভূখণ্ড দখলে নিতে হবে। সম্মেলন শেষে এক ঘোষণায় প্রথম ‘কোরিয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ঘোষণায় বলা হয়, তারা কোরীয় জনগণের দাসত্ব সম্পর্কে সচেতন ও যথার্থ প্রক্রিয়ায় কোরিযাকে মুক্ত ও স্বাধীন করতে বদ্ধপরিকর।

পরে তেহরান সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান জোসেফ স্ট্যালিনের সঙ্গে কথা বলেন রুজভেল্ট। তার প্রস্তাবে স্ট্যালিন রাজে হন। এরপর প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধে মিত্রশক্তির সঙ্গে যোগ দেয়ার প্রত্যয় জানান তিনি। ইউরোপে যুদ্ধ জয়ের দুই থেকে তিন মাস পর ও হিরোশিমায় মার্কিন পারমাণবিক হামলার দুইদিন পর সোভিয়েত ইউনিয়ন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

মার্কিন সরকারের লক্ষ্য ছিল পুরো কোরিয়া দখল করা। কিন্তু সোভিয়েত বাহিনীর দ্রুত বিজয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তারা। সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন নিয়ন্ত্রাধীন এলাকা নির্ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময়ই নির্ধারিত হয় ‘৩৮তম প্যারালাল’, যা বর্তমানে দুই কোরিয়ার সীমান্তরেখা। এতে মার্কিন অধিকৃত ভূখণ্ডে চলে যায় এক কোটি ৬০ লাখ কোরীয়। আর সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে চলে যায় ৯০ লাখ। এই বিভিক্ত মেনে নেয় সোভিয়েত সরকার।

১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে মস্কো সম্মেলনে পাঁচ বছরের মধ্যে কোরিয়াকে স্বাধীন করার শর্তে একটি ট্রাস্টিশিপ গঠন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ব্রিটেন। অনেক কোরীয় ওই সময়েই স্বাধীনতা দাবি করে। তবে সোভিয়েত সমর্থিত কোরিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি মেনে নেয় ট্রাস্টিশিপ।

১৯৪৬ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ কোরীয় প্রশাসন গঠনে কাজ করতে থাকে সোভিয়েত-মার্কিন যৌথ কমিশন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান স্নায়ুযুদ্ধের রৈবিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরইমধ্যে বিভক্তি আরো গভীর হয়ে পড়ে।

১৯৪৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক বাহিনী পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। গঠন করে সামরিক সরকার। ওই সরকারের প্রধান করা হয় জন আর হোজকে। এই সরকারকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় কোরিয়ার শ্রমিক ও কৃষকরা। তারা আন্দোলন করে। কিন্তু সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়।

এদিকে পিয়ংইয়ংয়ে সেনা পাঠায় সোভিয়েত বাহিনী। কিম ইল-সাংয়ের নেতৃত্বে গঠন করা হয় পিপলস কমিটি। তার সরকার উত্তর কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠা করে কমিউনিস্ট ধাঁচের শাসন। বিপুল ব্যক্তিগত সম্পত্তি সরকারি মালিকানায় নেয়া হয়। প্রায় সব কারখানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলে যায়। ১৯৪৮ সালে কোরিয়া ছাড়ে সোভিয়েত বাহিনী।

এরপর জাতিসংঘের বেশ কয়েক দফা চেষ্টা সত্ত্বেও একত্রিত করা যায়নি দুই কোরিয়া। ১৯৫০ সালের ২৫ জানুয়ারি গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই কোরিযার সেনারা ভয়াবহ সংঘাতে জড়িত হয় কয়েকবার।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here