যমুনার পানি বাড়লে বন্যা আর পানি কমলে শুরু হয় তীব্র নদী ভাঙ্গন

0
1955

মোঃ জহির রায়হান- সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
হোয়াংহো নদী যেমন চীনের দুঃখ নামে পরিচিত ঠিক তেমনি যমুনা নদী সিরাজগঞ্জ জেলা সহ উত্তরাঞ্চলের দুঃখ নামেই পরিচিতি লাভ করেছে। ২০১৭ সালের বন্যায় চরাঞ্চল সহ সিরাজগঞ্জ এর অধিকাংশ এলাকা মারাতœক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর বন্যার পানি নামার সংগে সংগে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাংগন। আর এতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি , মসজিদ , স্কুল ,হাট , বাজার সহ অনেক কিছু। আর এজন্যই একটি কথা খুব পরিচিতি লাভ করেছে, সেটি হল- যমুনার পানি বাড়লে বন্যা আর পানি কমলে নদী ভাংগন।
চীনের দুঃখ হোয়াংহোকে নিয়ন্ত্রনে আনতে পারলেও হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও কেন যমুনা নদীকে নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছে না ? প্রশ্ন টি এখন সবার মুখে মুখে। যমুনা নদীকে নিয়ন্ত্রনে আনতে না পারার কারন কি অপর্যাপ্ত বরাদ্দ ? নদী তীর সংরক্ষন ও বাধের নির্মান ত্রুটি ? নাকি সংশ্লিষ্টদের লাগামহীন দুর্নীতি ?
শত কোটি টাকা ব্যয়ে চৌহালী নদী তীর সংরক্ষন বাধ নতুন করে নির্মান করার পরেও এই বছরের নদী ভাংগনের শিকার হয়ে চৌহালী নামক জনপদ প্রায় যমুনায় বিলীন হওয়ার পথে। বন্যার পানি গত মাস খানেক ধরে কমতে থাকায় নদীতে প্রচন্ড স্রোতে ঘুর্নাবর্তের সৃষ্টি হয়ে যমুনার ডানতীর এনায়েতপুরের খাজা ইউনুছ আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিন এলাকা ব্রাক্ষ্মনগ্রাম, আড়কান্দি,
বাঐখোলা, পাকড়তলা, ভেকা, পাঁচিল পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার জুড়ে এখন কেবলই ভাঙ্গনের তান্ডবলীলা। যমুনা মুহুর্তের মধ্যেই নতুন-নতুন এলাকা গ্রাস করে ছল-ছল জলরাশিতে পরিনত পরিনত করছে। বেশ কয়েকটি ঘর রাতের আধারে আসবাবপত্র সহ দেবে গেছে নদীতে। যে কারনে নদী তীরবর্তী সবাই এখন আতংক গ্রস্ত। গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে জনবহুল ব্রাক্ষ্মনগ্রামে অবস্থানরত সন্তোষা ও হাট বয়ড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২টি, বাড়ি ঘর সহ উল্লেখিত গ্রাম গুলোর ৫ শতাধীক ঘর-বাড়ি, হাজার-হাজার একর আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বিপর্যস্ত আর আশাহত মানুষ সব কিছু হারিয়ে এখন ঠাঁই হচ্ছে অন্যের বাড়ি, তীরবর্তী এলাকায়। কারো আবার এ সুযোগ না থাকায় চলে যাচ্ছেন পুর্ব পাড়ের চর এলাকায়। নিঃস্ব এসব মানুষের বিদায়ী কান্নায় এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাধ না ভাংগায় এই বছর শহর ও এর আশেপাশের এলাকা বন্যা মুক্ত ছিল কিন্তু গুনের গাতি ও খোকশাবাড়ি এলাকার বাধে র্যা ট হোল বা ইদুরের গর্ত থাকায় বাধ ভাংগার আতংকে এলাকাবাসী আতংক গ্রস্থ ছিল। এদিকে কাজিপুরের শুভগাছা এলাকায় বন্যার সময় বাধ ভেংগে গেলেও সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তড়িৎ গতিতে কাজ করার জন্য বাধটি পুনঃ নির্মান সম্ভব হয়েছিল।

যমুনা নমনীয় না থাকায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থেকে জালালপুরের ভেকা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার জুড়ে এখন কেবলই ভাঙ্গনের তান্ডবলীলা। গত ৫ সপ্তাহের ব্যবধানে স্কুল সহ ৫ শতাধীক ঘর-বাড়ি এবং কয়েক হাজার একর আবাদী জমি বিলীন হয়েছে। সাধারন মানুষ তাদের তাদের চিরচেনা বসত-ভিটা আর সহায় সম্বল হারিয়ে কেউ হচ্ছেন নিঃস্ব। কেউবা আবার এলাকা ছাড়া হয়ে যাচ্ছেন অন্যত্র। বর্তমানে ভাঙ্গনের থাবা আরো তীব্র হওয়ায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অলাভজনক খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় সহ তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ জনবহুল কয়েকটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ দাবী করেছে এলাকাবাসী। এদিকে
ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থানীয় সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান- এই বছর বন্যা ও নদী ভাংগনে সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা নদীর তীর সংরক্ষন বাধের প্রায় ৩২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্থ বাধ পুনঃ নির্মানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here