মোদিবিরোধী আন্দোলনে মমতার পাশে রাহুলরা

0
438

খবর৭১ঃসিবিআই-পুলিশ সংঘাতের জেরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ধরনা আন্দোলন ঘিরে ভারতের বিরোধীরা কার্যত একজোট হয়েছে। রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে ফারুখ আবদুল্লাহ, অখিলেশ যাদব, শারদ পাওয়ার, চন্দ্রবাবু নাইডু, সবাই একসুরে নরেন্দ্র মোদির বিদায় চাইছেন।

বিরোধী নেতারা কেউ টুইট করে, কেউ আবার ফোন করে মমতার মোদিবিরোধী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের পুত্র তথা বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতায় ধরনা মঞ্চে এসে হাজির হন।

অন্যদিকে এদিন সংসদেও একই ইস্যুতে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, ডিএমকেসহ সব দলের সংসদ সদস্যরাই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে এক সময় সংসদের দুই কক্ষ রাজ্যসভা ও লোকসভা স্থগিত করে দিতে হয়।

সংসদ ভবনে এ ইস্যুতে বিরোধী দলগুলো বৈঠকে বসে পরবর্তী ক’দিনের আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছে। দিনের শেষে স্পষ্ট, সংসদীয় নির্বাচনের আগে মমতার এ দিল্লিবিরোধী আন্দোলন, ভারতের বিরোধী শক্তির পালে আরও হাওয়া এনে দিল।

শারদা দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা রোববার সন্ধ্যায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজিব কুমারের বাসায় হাজির হওয়ার পর সিবিআই-কলকাতা পুলিশ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। কলকাতা পুলিশ সিবিআই কর্মকর্তাদের জোর করে থানায় নিয়ে যায়। পরে অবশ্য ছেড়ে দেয়া হয়।

কলকাতার লাউডন স্ট্রিটে রাজিবের বাড়িতে সিবিআই কর্মকর্তাদের হাজির হওয়ার পর রাতে নাটকীয়তার সূচনা। ওই ঘটনার পরই ৮টা ৪০ মিনিট থেকে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে ধরনায় বসেন মমতা। ধরনা মঞ্চের পেছনেই কলকাতা পুলিশের একটি আউটপোস্টে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সিবিআই ও কলকাতা পুলিশের যুদ্ধ গত ৩০ ঘণ্টায় মোদি সরকার বনাম মমতা ব্যানার্জি রূপ নিয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পাশে রয়েছে কংগ্রেস, সপা, বসপা, আরজেডি, বিজেডিসহ সব কেন্দ্রবিরোধী দলগুলোও। সিবিআইয়ের অভিযান অবৈধ দাবি করে সংসদে সরব হয় তৃণমূলসহ বিরোধীরা। ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সংসদ সদস্যরা।

যার জেরে দফায় দফায় স্থগিত হয়ে যায় লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেন সিবিআইকে কেন্দ্র ব্যবহার করছে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংসদে ব্যাখ্যা দাবি করেন তৃণমূল সংসদ সদস্য সৌগত রায়।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক কাণ্ডে সিবিআইকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ কংগ্রেসের লোকসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘বিরোধীরা কিছুতেই মাথানত করবে না।’

সোমবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোরে কৃষকদের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিল মমতার। কিন্তু আচমকাই একের পর এক ঘটনাপ্রবাহের পর রোববার ধরনা মঞ্চেই রাত কাটান মমতা। দিনের কর্মসূচি সামলান সেখান থেকেই।

সেই মঞ্চ থেকেই মোবাইল ফোনে জমায়েত হওয়া কৃষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের জন্য জীবন দিয়ে আন্দোলন করেছি। আবারও করব। এখানে আগের সরকার যখন কৃষকদের জমি কেড়ে নিয়েছিল, তখন ২০০৬ সালে একই জায়গায় ২৬ দিন ধরে অনশন করেছি। আবার এখন আপনাদের সবার অধিকার রক্ষায় একই জায়গা বসতে হয়েছে। মানুষের অধিকার, কৃষকদের অধিকার রক্ষায় যা করার সবটুকু করব আমি।’

সরকারি সব কাজ মমতা এদিন ওই ধরনা মঞ্চ থেকেই করেছেন। আসলে অত্যন্ত সুকৌশলে মমতা ওই মঞ্চটির নাম দিয়েছেন, ‘সেভ ইন্ডিয়া’। লেখা আছে, সেভ ডেমোক্রেসি, সেভ কন্সটিটিউশন, সেভ ফেডারেল ইনফ্রাস্ট্রাকচার। অরাজনৈতিক মঞ্চে দেশের সব নেতাদের আসার সুযোগ করে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে যেহেতু সারদা মামলায় সিবিআই তদন্ত করছে তাই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে কোর্ট অবমাননার মামলা করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

একই সঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সারদা মামলার তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন বলেও সোমবার সকালে সুপ্রিমকোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করল সিবিআই। আর এ তথ্য লোপাটের অভিযোগের সপক্ষে আদালতে প্রমাণ জমা দেয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।

একই সঙ্গে বিচারপতি গগৈ কলকাতা পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘সিবিআই যদি প্রমাণ করতে পারে যে রাজীব কুমার তথ্যপ্রমাণ বিকৃত করেছেন তাহলে আদালত এমন ব্যবস্থা নেবে যে রাজীব কুমারকে অনুতপ্ত হতে হবে।’ তিনি সিবিআইকে আরও বলেন, ‘আজই শুনানি হতে হবে এমনটা জরুরি নয়। সিপি তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারে সেই প্রমাণ আদালতে দিন। সিপি তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চিন্তা বা চেষ্টা করলে আদালতের নজরে থাকবে।’

এদিন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদের এজলাসে সিবিআইয়ের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদন করলেও হাইকোর্টেও শুনানি হবে আগামীকাল।

রাত পেরিয়ে সকাল হয়েছে। ধর্মতলার ধরনামঞ্চে ঠায় বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মাঝেমধ্যেই হাঁটাহাঁটি করছেন। বেলা যত বেড়েছে একের পর এক দলীয় নেতা সেই মঞ্চে এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য নিজের গোটা দিনের কাজ সামলে নিয়েছেন মঞ্চে বসেই। এমনকি রাজ্য বাজেটও।

কৃষকদের জন্য তার বার্তা, ‘আগামী দিনে কেন্দ্রে যদি মোদি সরকারের পতন হয়ে নতুন সরকার হয় তবে কৃষকদের স্বার্থ আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। কারণ কৃষকরাই দেশের সম্পদ। কৃষক না থাকলে দেশ চলবে না।’

মুখ্যমন্ত্রী এদিন নেতাজি ইন্ডোরে না যেতে পারার জন্য কৃষকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তাদের জন্য তার সরকার কী কী করেছে, সেই তথ্য তুলে ধরেন। জানিয়ে দেন, আগামী দিনে কৃষকদের বীমার টাকা কেন্দ্র থেকে নেবেন না তিনি।

বলেন, ‘কৃষকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, শস্য বীমা, কৃষকবন্ধু সব রাজ্য সরকার চালু করেছে। নোট বাতিলের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। মোদি সরকার ভেবেও দেখেনি। নির্বাচনের আগে শুধু প্রতিশ্রুতি দেয় ওই সরকার। গোটা দেশে ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এটা চলতে পারে না। তাই কৃষকদের স্বার্থরক্ষা আমাদের করতে হবে। কৃষকরা সম্পদ। শিল্প গৌরব।’

সকাল থেকেই ধরনা মঞ্চে আগত জনতাকে বলে দিচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এ প্রতিবাদের পাশে দেশের আর কোন কোন নেতা সমর্থন করেছেন। অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, চন্দ্রবাবু নাইডুদের নাম ঘোষণা হচ্ছে সমর্থনকারী হিসেবে। নাম ঘোষণা হতেই জনতা ফেটে পড়ছেন উল্লাসে।

তারই মধ্যে মমতার আবেদন, ‘আপনারা বিজেপির প্ররোচনায় পা দেবেন না। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখুন।’ মুখ্যমন্ত্রীর সত্যাগ্রহ মঞ্চে আসেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমারও। পরে পুলিশ পদকও এ ধরনা মঞ্চের পাশের একটি অস্থায়ী প্ল্যাটফর্ম থেকে বিলি করেন মমতা। কলকাতায় এদিন শীতের দাপট তেমন ছিল না। রোদও ছিল ভালোই। তবে সবে তেজকেই ছাপিয়ে গিয়েছেন জননেত্রী। মমতা নিজেই বলেছেন, এ লড়াই চলবে অনির্দিষ্টকালের জন্য।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here