মেয়েকে অধ্যাপক বানাতে লড়ে যাচ্ছেন মা মাজেদা বিবি

0
467

খবর৭১:ছোট বেলা থেকেই আলমিনার স্বপ্ন অধ্যাপক হওয়ার। কিন্তু পড়তে চাইলে বাবার কাছে জুটত মারধর। পুড়িয়ে দেওয়া হতো বই-খাতা। কম বয়সে তার বিয়ে ঠিক করেছিলেন বাবা শেখ মৈনুদ্দিন। মেয়ের উপর এমন অত্যাচার মেনে নেননি মাজেদা বিবি। আলমিনার স্বপ্নপূরণে তাকে সঙ্গে করে স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন তিনি।

তার কথায়, পড়তে ভাল লাগত। ছোটবেলা থেকেই ক্লাসে প্রথম হতাম। কখনও পেট ভরে ভাত চাইনি, দামি পোশাক চাইনি, শুধু পড়তে চেয়েছিলাম। তার বদলে জুটেছিল মারধর। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট আলমিনা। তার আরও দুই সৎ ভাই রয়েছে। বাবার পাশাপাশি তারাও আলমিনাকে মারধর করত।

এই পরিস্থিতিতে আলমিনার একমাত্র ভরসার জায়গা ছিলেন মা মাজেদা বিবি। দৃঢ়চেতা ওই নারী স্বামীর নির্দেশ অমান্য করে, সাংসারিক নির্যাতন সহ্য করে নিজের উচ্চশিক্ষিত হওয়ার অসম্পূর্ন সাধ আলমিনার মধ্যে মেটাতে চেয়েছিলেন। সংসারে একমাত্র তিনিই চেয়েছিলেন, প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত হোক আলমিনা। তাই অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে, অমানুষিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত আলমিনাকে পড়িয়েছেন তিনি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই আলমিনার বাবা মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন।

এ ব্যাপারে মাজেদা বিবি বলেন, ২০০৮ সালে আলমিনার বিয়ে ঠিক হয়। ও তখন বহিচাড় বিপিন শিক্ষা নিকেতনের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বিয়ে করতে না চাওয়ায় সৎ ভাইরা ওকে মারধর করে। অজ্ঞান হয়ে ও রাস্তায় পড়েছিল। স্কুলের বইগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল। এর পরেই রুখে দাঁড়ান মাজেদা বিবি। থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। আর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন স্বামীর ঘর থেকে।

নিশ্চিন্তবসান এলাকায় রাস্তার ধারে ভাড়াটে ঝুপড়ি ঘরে শুরু হয়েছিল মা-মেয়ের জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের লড়াই। চরম দারিদ্রের মধ্যেও মাধ্যমিক দেয় আলমিনা। উত্তীর্ণ হয় ৭১ শতাংশ নম্বর নিয়ে। ২০১৬ সালে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি।

নিজের ওই লড়াইয়ে আলমিনা পাশে পেয়েছেন ভূগোলের শিক্ষক মৌসম মজুমদারসহ অন্য শিক্ষকদের। বর্তমানে একটি বেসরকারি শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজে পড়ছেন আলমিনা। পড়ার পাশাপাশি সংসারের ভারও এসে পড়েছে তার উপর। গত চার পাঁচ বছর ধরে হাড়ের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত মা। একাধিক প্রাইভেট টিউশন করে আলমিনা সংসার এবং পড়াশোনার খরচ জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। যে কলেজে তিনি বর্তমানে পড়াশুনা করছেন সেখানে বেতন বাবদ দু’বছরে প্রায় এক লাখ টাকা প্রয়োজন।
সম্প্রতি মহিষাদল রাজপরিবারের তরফে সূর্যপ্রসাদ গর্গ কৃতী শিক্ষার্থী হওয়ায় তাকে ৪০ হাজার টাকা সাহায্য করা হয়েছে। বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে, এখনও জানেন না আলমিনা। তবে লক্ষ্যপূরণে বাধা যাই আসুক, তার সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আলমিনা।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here