মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি’র রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন

0
288

হাবিবুর রহমান নাসির ছাতক সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি’র (বীরপ্রতিক) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের জিরারগাঁও গ্রামের মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা শেষে পঞ্চায়েতি কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। যানাজায় সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খান, উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীর প্রতিক, জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরীসহ জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা,জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি ওরফে নুরজাহান বেগম বুধবার রাত ১১টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল (৯৮) বছর। শ্বাষকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার মরদেহ জিরারগাঁও গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশের একটি গ্রামে খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৭০ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শহিদ আলীর সাথে তার বিয়ে হয়। এ সময় তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় নুরজাহান বেগম। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ তিনি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সখিনা নামের এ ৩ মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে সাথে নিয়ে স্বামী শহিদ আলীর সাথে ছাড়া-ছাড়ি হয়ে যায়। পরে ইপিআর সৈনিক মজিদ খানের সাথে তার ২য় বিবাহ হয়। মজিদ খান তখন সিলেট ক্যাম্পে চাকুরি করতেন। ২ মাস সিলেটে স্বামীর সাথে বসবাস করার পর সখিনাকে নিয়ে তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকায় চলে গেলে ১৯৭১ সালের ৬ জুন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন কাকন বিবি। এ সময় হানাদার বাহিনীর বাংকারে তিনি নির্যাতনের শিকার হন। বাংকার থেকে ছাড়া পেয়ে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেন কাকন বিবি। জুলাই মাসে জিরারগাঁও গ্রামের এক লোকের কাছে নিজ সন্তানকে রেখে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দেখা করে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীকে নিয়ে সেক্টর কমান্ডার লেফট্যানেন্ট কর্নেল মীর শওকত আলীর সাথে দেখা করেন তিনি। শওকত আলী তাকে মুক্তিযুদ্ধে গুপ্তচরের দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি অসীম সাহসিকতার সাথে গুপ্তচরের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় দোয়ারার বাংলাবাজারে ২য় বারের মতো হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ৭ দিন পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকাররা তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে মৃত ভেবে রাস্থায় ফেলে রেখে দেয়। এ সময় তাকে উদ্ধার করে বালাট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে আবারো বাংলাবাজারে দায়িত্বে ফিরে আসেন তিনি। এখানে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে তিনি অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষিত হন । পরবর্তিতে গুপ্তচর ছাড়াও তিনি একাধিক সম্মূখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলায় হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মূখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি গুলি বিদ্ধ হয়েছেন। কাকন বিবি ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের জিরারগাঁও গ্রামের একটি বাড়িতে কন্যা সন্তান সখিনাকে নিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। দু’যুগ ছিলেন তিনি সবার চোখের অন্তরালে। ১৯৯৬ সালে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে কাকন বিবি দেশবাসীসহ সরকারের নজরে চলে আসেন। তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এক একর সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করেন। সিলেটের তৎকালিন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ঐ ভূমিতে একটি বসত ঘরও তৈরি করে দেন। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাকন বিবিকে বীর প্রতিক উপাধিতে ভুষিত করার ঘোষনা দেন। ঘোষনাটি এ পর্যন্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি।##

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here