খবর৭১ঃ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা সুদমুক্ত গৃহঋণ দেয়া হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ ব্যাপারে ঘোষণা থাকবে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।
এ নীতিমালার নামকরণ করা হয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক হতে সহজ শর্তে গৃহ নির্মাণ ঋণ’। এর আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দিয়ে সুদ পরিশোধের দায় নেবে সরকার। তবে নামমাত্র মূল্যে ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ আরোপ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ব্যাংকিং) ফজলুল হক যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। প্রস্তাব করা হয়েছে কিছু বিষয়ে। পাশাপাশি এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে একটি বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। সেটি কীভাবে সংস্থান করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক হতে সহজ শর্তে গৃহ নির্মাণ ঋণ দেয়া’ সংক্রান্ত বৈঠকে এই নীতিমালা খসড়া ঠিক করা হয়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার এ তহবিলের অর্থ ব্যয় করবে ঋণের সুদ পরিশোধে ক্ষেত্রে। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া ঋণের বিপরীতে কোনো সুদ নেয়া হবে। সুদ পরিশোধ সরকার নিজেই করবে।
জানা গেছে, বর্তমান গ্যাজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৯ জন। ধারণা করা হচ্ছে এরমধ্যে ৭০ শতাংশ এই ঋণ সুবিধা পাওয়া যোগ্য। ওই হিসাবে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৪ জন মুক্তিযোদ্ধা এ ঋণ সুবিধা পাবেন। প্রতিজন ১০ লাখ টাকা হারে ঋণ পেলে মোট টাকার প্রয়োজন হবে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শেষ হবে বলে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে হিসাবে প্রথম বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণের দেয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা, দ্বিতীয় বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, তৃতীয় বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা, চতুর্থ বছরে ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা এবং শেষ বছরের জন্য দরকার হবে ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা।
এ ঋণের বিষয়ে সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত ১৪টি শর্ত চূড়ান্ত করা হয়, যা আগামীতে মুক্তিযোদ্ধা গৃহনির্মাণ ঋণের খসড়া নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরবর্তীতে এটি প্রস্তাব আকারে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে অর্থমন্ত্রীর কাছে। শর্তগুলো হচ্ছে- ঋণের পরিমান নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। এ ঋণ সুবিধা পাবেন সরকারের ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাভোগী অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তরাধিকারীরা।
এ ঋণের জন্য বার্ষিক ৫ শতাংশ সরল সুদ এবং মাসিক ২ শতাংশ সার্ভিস হার নির্ধারণ করা হবে। সুদের দায় বহন করবে সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এ ঋণ প্রদান করে প্রথম বছরে সরকারকে সুদ বহন করতে হবে ৩১২ কোটি টাকা। এটি প্রতি বছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়। এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হবে ৯ মাস। ঋণের মেয়াদ হবে ১৪ বছর। ঋণ প্রকল্পের মেয়াদ হবে ১৬ থেকে ১৭ বছর। পাশাপাশি প্রথম বছরের ঋণের অর্থ মেটাতে একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। এ তহবিলে অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। সেখান থেকে ঋণের চাহিদা পূরণ করা হবে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রথম ধাপে মোট ঋণের ৪০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে (পরবর্তী তিন মাস পর) ৩০ শতাংশ এবং তৃতীয় ধাপে (পরবর্তী আরও তিন মাস পর) অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ ঋণের অর্থ দেয়া হবে। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বা মৃত মুক্তিযোদ্ধার যোগ্য উত্তরাধিকাররা শুধু একবার এ ঋণ সুবিধা পাবেন। তবে জীবিত মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা থাকবে না। মৃত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে তার সম্মানী ভাতা পাওয়ার যোগ্য অগ্রাধিকারকারী পাবেন। এক্ষেত্রে অন্যসব অগ্রাধিকারকারী লিখিত সম্মতি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে থাকতে হবে।
এক্ষেত্রে সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধারা তাদের উক্ত ভাতা লিয়েন রেখে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। শর্তে আরও বলা হয়, ঋণ নিয়ে নির্মাণ করা বাসস্থান সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ রাখতে হবে। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন অসচ্ছল ও ৫ শতাংশের নিচে ভূমি রয়েছে এমন মুক্তিযোদ্ধারা। এ ঋণ পাওয়ার জন্য ন্যূনতম ২ শতাংশ জমি থাকতে হবে মুক্তিযোদ্ধার নিজ বা স্ত্রীর নামে।
সূত্র মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের এ ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এর সঙ্গে রূপালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।