খবর৭১ঃসাদা-কালো একটি ঝাপসা ছবিতে একজন লোক দুটি মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে কৃষিকাজে ব্যবহৃত নিড়ানি। ক্যাপশনে বলা হয়েছে, স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনকে বাঙালিরা হত্যা করছেন।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আসল সত্য প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লেখা নতুন একটি বইয়ে এই ছবি ছাপা হয়েছে।
১৯৪০ এর দশকে মিয়ানমারের নৃতাত্ত্বিক দাঙ্গা নিয়ে অধ্যায়ে এ ছবিটি এসেছে। বর্মী ভাষায় ছবির বিবরণে বলা হয়েছে, বৌদ্ধদের রোহিঙ্গারা হত্যা করছেন।
বইটিতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের অবৈধ অভিবাসী বোঝাতে বাঙালি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
কিন্তু ছবিটির ওপর খোঁজখবর নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ছবিটি তোলা। তখন পাকিস্তানি বাহিনী লাখ লাখ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছিল।
গত জুলাইয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জনসংযোগ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিষয়ক বিভাগ থেকে প্রকাশিত বইটির তিনটি ভুয়া ছবির একটি হচ্ছে এটি। যেগুলোকে রাখাইন রাজ্যের সংরক্ষিত ছবি হিসেবে ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
কার্যত, রয়টার্স দেখেছে, দুটি ছবি মূলত বাংলাদেশ ও তানজানিয়ায় তোলা হয়েছিল।
মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আরেকটি ছবিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করছেন।
উপরের ছবিটি ফ্লিকারেই পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের পর দুই বাংলাদেশির লাশ উদ্ধারের ছবি এটি, তুলেছেন আনোয়ার হোসেন।
নিচে ওই ছবি ব্যবহার করেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বইয়ে ক্যাপশনে বলা হয়েছে- সেটা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের হাতে নিহত স্থানীয় বৌদ্ধদের ছবি।
এসব ছবির বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হাতোই বা সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের বক্তব্য রয়টার্স জানতে পারেনি।
মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উ মায়ো মিন্ট মং মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, ওই বই তিনি পড়ে দেখেননি।
‘মিয়ানমারের রাজনীতি ও সেনাবাহিনী: প্রথম পর্ব’ নামে ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইয়ে গত বছরের আগস্টের পর শুরু হওয়া সামরিক অভিযান নিয়ে সেনাবাহিনীর ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর হিসাবে, সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে পাইকারি হত্যা, ধর্ষণ আর জ্বালাওপোড়াওয়ের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
বইটিতে প্রকাশিত বেশিরভাগ তথ্যের উৎস হিসেবে সেনাবাহিনীর ‘ট্রু নিউজ’ ইউনিটের কথা বলা হয়েছে। গতবছর সংকটের শুরু থেকেই ওই ইউনিট সেনাবাহিনীর পরিপ্রেক্ষিত থেকে ঘটনাপ্রবাহের সংবাদ দিয়ে আসছে ফেইসবুকে।
মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনের সব বইয়ের দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে সেনাবাহিনী প্রকাশিত বইটি।
শহরের অন্যতম বড় বইয়ের দোকান ইনবার একজন কর্মী জানান, তারা ৫০ কপির অর্ডার দিয়েছিলেন, সেগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। বইটি নতুন করে আনার কোনো পরিকল্পনা তাদের আপাতত নেই, কারণ খুব বেশি মানুষ ওই বই নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি।
গত সোমবার মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তাদের ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা উসকে দিতে তারা প্লাটফর্মটি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেছে ফেসবুক।
একইদিন গণহত্যার উদ্দেশ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে ব্যাপক হত্যা ও গণধর্ষণ চালিয়েছে বলে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা তাদের প্রতিবেদনে অভিযোগ করেন।
এতে দেশটির সেনাপ্রধানসহ ছয় সামরিক কর্মকর্তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার করার সুপারিশ করা হয়েছে।