মিয়ানমারে জঙ্গলে অবরুদ্ধ ২০০০ কাচিন সদস্য

0
615

খবর ৭১ঃ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও কাচিন গেরিলাদের মধ্যে চলমান যুদ্ধে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে কাচিন সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০০ মানুষ। তারা আশ্রয় নিয়েছেন জঙ্গলে। এর মধ্যে রয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। কাচিনরা হলেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। তারা এখন জঙ্গলে আটকরা পড়ে সংঘাতময় অবস্থা থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। কাচিন রাজ্যের তানাই অঞ্চলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সর্বশেষ এই যুদ্ধ বা লড়াই শুরু হয়েছে এপ্রিলের শুরুর দিকে। ওই এলাকাটি অম্বর ও স্বর্ণের খনির জন্য বিখ্যাত। নিজেদের দখল থেকে হারিয়ে যাওয়া এলাকা উদ্ধারের হুমকি দেয় কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি। তাদের হুমকির জবাবে সেনাবাহিনী তাদের ওপর গোলা নিক্ষেপ করছে ও আকাশ থেকে হামলা চালাচ্ছে। ব্যাপ্টিস্ট সম্প্রদায়ের নেতা রেভারেন্ড মুয়ায় ডান বুধবার বলেছেন, যেসব মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তাদের কাছে নেই ওষুধ। নেই পর্যাপ্ত খাদ্য। এমন মানুষের মধ্যে আছেন কমপক্ষে ৫ জন অন্তঃসত্ত্বা। সবেমাত্র সন্তান প্রসব করেছেন আছেন এমন দু’জন নারী। আছেন ৯৩ বছর বয়সী কেউ কেউ। অনেক গ্রামে গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এসব মানুষের জন্য যেমন প্রয়োজন চিকিৎসা, তেমনি প্রয়োজন রেশন। তিনি বলেন, বর্তমানে ওই এলাকায় সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের জন্য কোনো আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেই। একই সঙ্গে অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের অনেকে। কাচিন রাজ্যভিত্তিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে বুধবার কাচিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি খোলাচিঠি পাঠিয়েছে। তাতে বেসামরিক এসব মানুষকে উদ্ধার করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেই অনুমতি মেলে নি। বাস্তুচ্যুত নারীদের সহায়তা করে কাচিন স্টেট ওমেন নেটওয়ার্ক। এর সদস্য আওং জা বলেন, জঙ্গলে আটকে পড়া মানুষগুলোকে উদ্ধারের অনুমতি চেয়েছি আমরা। এসব মানুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জবাবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, যদি সেনাবাহিনী অনুমোতি দেয় তাহলেই বেসামরিক লোকজনকে উদ্ধার করা যাবে। মানবাধিকার ও সাহায্যদাতা বিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, বাস্তুচ্যুত প্রায় এক লাখ মানুষের কাছে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে নাটকীয়ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোকে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না এমন সব অভিযোগ কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার। কাচিন সম্প্রদায়ের লোকজন দাবি করছে, এরই মধ্যে সরকারি আক্রমণে নিহত হয়েছেন বহু সংখ্যক বেসামরিক মানুষ। কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশনের তথ্য বিষয়ক বিভাগের প্রধান নাও বু বলেছেন, ১১ই এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনীর মর্টার শেল ও আকাশপথের হামলায় কমপক্ষে তিনজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বার মতো কাচিনদের অধিকার আদায়ে মাঠে রয়েছে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি। তারা সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছে। কয়েক যুগ ধরে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অধিকতর শায়ত্তশাসনের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। তবে কাচিন বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয় ২০১১ সালে। এর আগে ১৭ বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়। এই লড়াইয়ে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এক লাখের বেশি মানুষ। উল্লেখ্য, ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর তারা যে নৃশংসতা চালিয়েছে তার নিন্দা জানিয়েছে সারা বিশ্ব।

খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here