মিশ্রজাতের চেহারাই সবচেয়ে সুন্দর

0
255

খবর৭১: রূপের ব্যাখ্যা কী? সৌন্দর্যের সীমারেখা কোথায় টানা যেতে পারে? কে বেশি সুন্দর? নারী নাকি পুরুষ? নাকি সামগ্রিকভাবে মানুষই সুন্দর? এটা জটিল প্রশ্ন হলেও শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো এর সমাধান দিয়েছিলেন। তার ভাষায়, ‘সুন্দর দেখতে হলে আমার ডেভিডকে দেখে এসো।’

আসলে সুন্দর নানা রকম হতে পারে। কোনও কোনও সুন্দর কাছে টানে। আবার কোনও কোনও সুন্দর অচেনা সম্ভ্রম তৈরি করে একটু দূরেও ঠেলে দেয়। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, কে বেশি সুন্দর?

নতুন এক বড় গবেষণায় দেখা গেছে, সঙ্কর বা মিশ্রজাতের চেহারাই সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির মনস্তত্ত্ববিদ মাইকেল লুইস। তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার ফল এটা নিশ্চিত করছে, যাদের জেনেটিক ব্যাকগ্রাউন্ডে ভিন্নতা বেশি, গড়পড়তা তাদের চেহারাই সবচেয়ে সুন্দর হয়। যাদের জেনেটিক ব্যাকগ্রাউন্ডে ভিন্নতা কম, তারাই গড়পড়তা কম সুন্দর হয়।’

তাদের এ গবেষণার ফল প্রকাশিত হয় পারসেপশন নামের এক আন্তর্জাতিক জার্নালে।

গবেষণায় সুন্দর মুখ বেছে নেয়ার জন্য কালো, মিশ্র বর্ণ ও সাদা রঙের বারশ ছবি নমুনা হিসাবে সংগ্রহ করা হয়। এসব ছবি মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর মুখ বাছাই করার দায়িত্ব ভলান্টিয়ারদের দেয়া হয়। তারা মিশ্র বর্ণের মুখকেই সবচেয়ে বেশি সুন্দর হিসাবে রায় দিয়েছেন।

মাইকেল লুইস বলেন, ‘এর আগেও সীমিত পরিসরের গবেষণায় মিশ্রজাতের চেহারাই সবচেয়ে সুন্দর বিবেচিত হয়েছিল। আমরা বিষয়টি যাচাই করতে ব্যাপক পরিসরে গবেষণা চালিয়ে প্রমাণ পেলাম, আগেও ধারণাই সত্যি। বিশুদ্ধ জাতের চেহারা সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় বিবেচিত হয়নি।’

১৮৭৬ সালে ইংলিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউয়িন সর্বপ্রথম দাবি করেন, সঙ্কর প্রজাতির মনস্তাত্ত্বিক শক্তি একটি জীবতাত্ত্বিক প্রপঞ্চ। এটা হেটারোসিস বা হাইব্রিড ভিগর (হাইব্রিড তেজ) নামে পরিচিত। আর তাদের সন্তান জেনেটিক দিক থেকে মাতাপিতার চেয়েও উপযুক্ত ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে ওঠে।

সোজা কথায়, কৃত্রিম প্রজনন ও তার মাধ্যমে ক্রসব্রিডিংয়ের মূল উদ্দ্যশ্যই হল প্রাণীতে অধিক পরিমাণ উৎপাদন-বান্ধব ডমিন্যান্ট জিনের সন্নিবেশ ও হেটারোসিস ঘটিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত যে, ক্রসব্রিডিংয়ের ফলে শুধু প্রথম প্রজন্মেই আউটব্রিডিং ঘটে। ফলে ১০০ ভাগ হেটারোসিস সংরক্ষিত হয় এবং ওই আউটব্রিড প্রাণী হতে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়।

আউটব্রিডিংয়ের বিপরীতে ইনব্রিডিং হচ্ছে জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিকট সম্পর্কযুক্ত মা-বাবা হতে প্রজন্ম সৃষ্টির প্রক্রিয়া। ইনব্রিডিংয়ের ফলে প্রাণীতে উৎপাদন-বান্ধব ডমিন্যান্ট জিনের হেটারোসিস বিনষ্ট হয়ে রিসেসিভ জিনের হোমোজাইগোসিটি বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ হাইব্রিড ভিগর (হাইব্রিড তেজ) বা হেটারোসিস নষ্ট হয়ে যায়।

গবেষকরা বলেন, যেহেতু হেটারোসিস একটি বিশ্বজনীন জীবতাত্ত্বিক প্রভাব হিসাবে স্বীকৃত, সেহেতু মানুষের মাঝেও এর প্রভাব থাকাটা অসঙ্গত কিছু নয়। তাই মিশ্র প্রজাতির মানুষ তার স্বজাতির কাছে অধিকতর আকর্ষণীয় ঠেকতে পারে।

বিজ্ঞানী মাইকেল লুইস বলেন, ‘মিশ্র প্রজাতির মানুষ অধিকতর আকর্ষণীয় হওয়ার অর্থ হচ্ছে এটাই মানব প্রজাতির মধ্যে হেটারোসিস নামের জীবতাত্ত্বিক প্রপঞ্চের প্রমাণ।’

লুইস বলেন, বিভিন্ন পেশায়ও মিশ্র প্রজাতির লোক বেশ আকর্ষণীয় ও সমাদৃত হন। অভিনয়ে বলিউড সেনসেশন হল বেরি, ফর্মুলা ওয়ান রেসিংয়ে লুইস হ্যামিল্টন ও রাজনীতিতে বারাক ওবামার সাফল্য, এমন ধারণা শক্তিশালী করছে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here