মানুষ এটা সারাজীবন মেনে নেবে?

0
356

খবর৭১ঃ নির্বাচিত না হয়ে ক্ষমতা দখল করে সরকার মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।

তিনি বলেছেন, ‘দেশে ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই যে, মিথ্যাকে সত্য বানানোর যে অপচেষ্টা চলছে। ২৯ ডিসেম্বর রাতে কে ভোট দিয়েছে? একজন হাত তুলে দেখান। আমি কাউকে খুঁজে পাইনি। তাহলে ৩০ ডিসেম্বর যে ধন্যবাদ দেয়া হলো- আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করেছেন। এই যে কাল্পনিক জিনিসের ওপরে ১৬ কোটি মানুষের দেশকে শাসন করার ক্ষমতা দাবি করা- এটা একটা দায়িত্বহীন কাজ।’

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গণফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘একাত্তরে লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে তার বিনিময়ে এই স্বাধীন দেশ হয়েছে। সংবিধানে লেখা আছে এত লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হয়েছি। অথচ এভাবে নাগরিকদের অধিকার হরণ করে ক্ষমতা দখল করে শুধু আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে না, শহীদদের সঙ্গেও তারা (সরকার) প্রতারণা করছে। শহীদদের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা এটা নজিরবিহীন ঘটনা।’

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদরা কীসের জন্য জীবন দিয়েছে ব্যাখ্যা করে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য শহীদরা জীবন দেয়নি। তারা জীবন দিয়েছে জনগণকে ক্ষমতার মালিক করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথমেই লেখা আছে- নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমেই মালিকানার ক্ষমতা প্রয়োগ করা যাবে। এই সংবিধানকে উপেক্ষা করে সরকার যে দাবি করছে- ‘আমরা পেয়ে গেছি, পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকব এটা হতে পারে না।’

একাদশ সংসদের ৩০০ আসনের ‘কথিত সংসদ সদস্যরা’ কীভাবে নির্বাচিত না হয়েও ভূমিকা রাখছেন- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।

সরকারের উদ্দেশে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা। আমি নেতিবাচক কিছু বলতে চাই না, ইতিবাচক কথা বলতে চাই। আমরা সংঘাত সংঘর্ষ চাই না। দেশে আমরা দেখেছি সংঘাত-সঘর্ষ হলে মানুষ জীবন হারায়, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শাসনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা কিছু করেছেন আমি অতীতের দিকে তাকাতে চাই না, সামনের দিকে তাকাতে চাই। আমি বলব, এখন তো কয়েক মাস হয়েছে। দ্রুত নির্বাচনের একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেন, তিন মাস-ছয় মাস যাই হয়- এই বছরের মধ্যে একটা প্রকৃত অর্থে দেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে যারা প্রকৃত অর্থে নির্বাচিত হবেন তাদের কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেন।’

তিনি বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষকে এভাবে যারা প্রহসনের শিকার করছে- তারা কী মনে করে যে, মানুষ এটা সারাজীবন মেনে নেবে? তাদের কী কোনো জবাবদিহিতা কোনো দিন কোনো সময় করতে হবে না। আমি বলে দিচ্ছি, আমি বেঁচে নাও থাকলে, আপনারা বেঁচে নাও থাকলে এই ধরনের জিনিসের জবাবদিহিতা অবশ্যই একদিন বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই আদায় করবে।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ক্ষমতাকে কাল্পনিকভাবে কেড়ে নিয়ে সেটাকে যেনতেনভাবে প্রয়োগ করে দাবি করা, তারা (সরকার) জনগণের পক্ষে এটা করছে- তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।’

এ সময় দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জনগণের সম্পদ বিদেশের পাচার হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ড. কামাল।

গণফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, ড. রেজা কিবরিয়া, মোকাবিবর খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আমসা আমীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভার পর নিজে সদস্য ফরম পূরণ করে সংগঠনের সদস্যপদ নবায়নের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ড. কামাল হোসেন।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here